অনার্সের "স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস" বিষয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন "১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানের গুরুত্ব মূল্যায়ন কর"। এই প্রশ্নের উত্তরের জন্যই এই লেখাটি সাজানো হয়েছে। তাহলে শুরু করা যাক এই প্রশ্নের উত্তর:
১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান বা "ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান" বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যেকয়েকটি বড় আন্দোলন ছিল, তাদের মধ্যে একটি। বিভিন্ন শোষনমূলক কারণের প্রতিবাদের বাঙালিরা ১৯৬৯ সালের ২৫ জানুয়ারি দেশব্যাপী এক অভ্যুত্থানে অংশ নেয় যা ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান হিসেবে স্বীকৃত।
১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানের গুরুত্ব
এই অভ্যুত্থানের গুরুত্ব বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে অপরিসীম। এর অনেকগুলো ফলাফলের মধ্যে কয়েকটি হলো:
- আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার\একুশে ফেব্রুয়ারি ছুটি বহাল রাখা
- আইয়ুব খানের সরকারের পতন
- আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি
- ১৯৭০ এর নির্বাচনের ফলাফল
- ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ
১) আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার
১৯৬৮ সালের জানুয়ারি মাসে শেখ মুজিবসহ মোট ৩৪ জনের বিরুদ্ধে দেশোদ্রোহিতার অভিযোগে একটি মামলা হয় যা ইতিহাসে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা হিসেবে পরিচিত। বিভিন্ন আন্দোলনসহ ১৯৬৯ সালের এই গণ-অভ্যুত্থানের ফলে আইয়ুব খানের সরকার এই মামলা প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হয়। ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি এটি প্রত্যাহার করা হয়।২) একুশে ফেব্রুয়ারির ছুটি বহাল
ভাষা আন্দোলনের স্মরণে পূর্ব পাকিস্তান বা বর্তমান বাংলাদেশে একুশে ফেব্রুয়ারি ছুটির দিন হিসেবে কাটাচ্ছিলো। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট এই দিনকে ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করে যায়। কিন্ত ১৯৫৮ সালে এই ছুটি বাতিল হয়ে গেলে ১৯৬৯ এর গণ-অভ্যুত্থানের পর এই ছুটি আবার বহাল রাখা হয়।৩) আইয়ুব খানের সরকারের পতন
ইতোঃপূর্বে দেয়া ৬ দফা এবং ১১ দফা দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা আসে। অভ্যুত্থানের পরবর্তী সময়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়। গণতান্ত্রিক এবং শাসনতান্ত্রিক সমস্যার কোনো সমাধান না হওয়াসহ বিভিন্ন কারণে ক্ষোভ বাড়তে থাকে। এই অবস্থায় আইয়ুব খানের সরকার ১৯৬৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে একটি সর্বদলীয় গোলটেবিল বৈঠকের ডান দিলেও মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর আওয়ামী লীগ তা বর্জন করে। এমন বিভিন্ন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে শেষ পর্যন্ত ২৫ মার্চ আইয়ুব খানের শাসনামলের সমাপ্তি ঘটে। দায়িত্ব দিয়ে যান তার সেনাবাহীনির প্রধান ইয়াহিয়া খানের উপর।৪) আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি
অভ্যুত্থানের পর থেকে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে থাকে। আইনের প্রতি তোয়াক্কা না করে পূর্ব পাকিস্তান বা বর্তমান বাংলাদেশের জনগণ বিভিন্ন মিছিল-মিটিংয়ে সামিল হতে থাকে। এই আন্দোলনের জোয়ার আইয়ুব খানের পতনকে ত্বরান্বিত করে।৫) ১৯৭০ সালেরর নির্বাচনের ফলাফল
১৯৬৯ এর এই গন-অভ্যুত্থানের প্রভাব গিয়ে পড়েছিল পরবর্তী বছরের নির্বাচনে। এই নির্বাচনে বাঙালিরা আওয়ামী লীগকে স্বতস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়ে বিজয়ী করেছিল। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জাতীয় পরিষদের ১৬৯ আসনের মধ্যে ১৬৭টি আসন পায়। প্রাদেশিক পরিষদে পায় ৩১০ আসনের মধ্য থেকে ২৯৮টি।৬) ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ
১৯৬৯ সালের এই গণঅভ্যুত্থানের চূড়ান্ত ফলাফল ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং স্বাধীনতা লাভ। অভ্যুত্থানের মাধ্যমে যার প্রস্তুতি শুরু তা শেষ হয় ভয়াবহ যুদ্ধের মধ্য দিয়ে। যুদ্ধ শেষে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর মহান আল্লাহর রহমতে বাংলাদেশ স্বাধীন বাংলাদেশের মর্যাদা লাভ করে।
অর্থাৎ পরিশেষে বলা যায় যে, ১৯৬৯ সালের গন-অভ্যুত্থানের গুরুত্ব এবং তাৎপর্য বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন। এই আন্দোলন থেকেই এক সময় বাংলাদেশ স্বাধীনতা যুদ্ধের দিকে ধাবিত হয় এবং স্বাধীন বাংলাদেশের মর্যাদা লাভ করে।
[ইতিহাসের কোনো তথ্যে আমাদের পক্ষ থেকে ভুল থেকে থাকলে তা শুধরে দেয়ার অনুরোধ থাকলো। এই পোস্টটি প্রকাশিত হচ্ছে ২৬ আগস্ট ২০২৪। যারা এটি পড়ছেন, তারা প্রত্যেকেই একটি গণ-অভ্যুন্থান নিজ চোখেই দেখেছেন কিছুদিন আগেই।