আমরা প্রায় সকলেই ছোটবেলায় "হাট্টিমাটিম টিম" ছড়াটি শুনেছি। এখনকার ছোট বাচ্চারাও এই ছড়াটি শুনেই বড় হয়। আমরা সাধারণত এর প্রথম ৪টি লাইন বা চরণই জেনেছি। আবার অনেকে বলে থাকে এটা ৫২ লাইনের ছড়া। মূলত এটা কত লাইনের?
হাট্টিমাটিম টিম ছড়াটি মোট কত লাইনের?
আমরা অনেকেই এটিকে ৪ লাইনের ছড়া হিসেবে জানি। অনেকে আবার মনে করি এটি ৫২ লাইনের। এ ব্যাপারে নিশ্চিত কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। তবে আমরা এটুকু দেখেছি যে, উইকিপিডিয়া বলে "নাদিয়া জামান" নামক এক প্রবাসী বাঙালি ২০১৮ সালে একটি ব্লগে নিজ থেকে ৪৮ লাইন যোগ করে শেষে এই ৪ লাইন যোগ করে দেন। সত্য মিথ্যা যাচাই করা আমাদের দ্বারা সম্ভব হয়নি। উইকিপিডিয়ার তথ্যটি পড়তে চাইলে পড়ুন: হাট্টিমাটিম টিম।
বহুল প্রচলিত বা মূল ৪ লাইন
হাট্টিমাটিম টিম-
তারা মাঠে পারে ডিম
তাদের খাড়া দুটো শিং
তারা হাট্টিমাটিম টিম।
হাট্টিমাটিম টিম ৫২ লাইন
টাট্টুকে আজ আনতে দিলাম
বাজার থেকে শিম
মনের ভুলে আনল কিনে
মস্ত একটা ডিম।
বলল এটা ফ্রি পেয়েছে
নেয়নি কোনো দাম
ফুটলে বাঘের ছা বেরোবে
করবে ঘরের কাম।
সন্ধ্যা সকাল যখন দেখো
দিচ্ছে ডিমে তা
ডিম ফুটে আজ বের হয়েছে
লম্বা দুটো পা।
উল্টে দিয়ে পানির কলস
উল্টে দিয়ে হাড়ি
আজব দু’পা বেড়ায় ঘুরে
গাঁয়ের যত বাড়ি।
সপ্তা বাদে ডিমের থেকে
বের হল দুই হাত
কুপি জ্বালায় দিনের শেষে
যখন নামে রাত।
উঠোন ঝাড়ে বাসন মাজে
করে ঘরের কাম
দেখলে সবাই রেগে মরে
বলে এবার থাম।
চোখ না থাকায় এ দুর্গতি
ডিমের কি দোষ ভাই
উঠোন ঝেড়ে ময়লা ধুলায়
ঘর করে বোঝাই।
বাসন মেজে সামলে রাখে
ময়লা ফেলার ভাঁড়ে
কাণ্ড দেখে টাট্টু বাড়ি
নিজের মাথায় মারে।
শিঙের দেখা মিলল ডিমে
মাস খানিকের মাঝে
কেমনতর ডিম তা নিয়ে
বসলো বিচার সাঁঝে।
গাঁয়ের মোড়ল পান চিবিয়ে
বলল বিচার শেষ
এই গাঁয়ে ডিম আর রবে না
তবেই হবে বেশ।
মনের দুখে ঘর ছেড়ে ডিম
চলল একা হেঁটে
গাছের সাথে ধাক্কা খেয়ে
ডিম গেলো হায় ফেটে।
গাঁয়ের মানুষ একসাথে সব;
সবাই ভয়ে হিম
ডিম ফেটে যা বের হল তা
হাট্টিমাটিম টিম।
হাট্টিমাটিম টিম-
তারা মাঠে পারে ডিম
তাদের খাড়া দুটো শিং
তারা হাট্টিমাটিম টিম।
কবি পরিচিতি
হাট্টিমাটিম টিম ছড়াটি সংগ্রহ করেছেন কবি রোকনুজ্জামান খান। সংগ্রহ করেছেন বলা হচ্ছে কারণ এই ৪ লাইনের ছড়াটি অনেক আগে থেকেই লোকমুখে প্রচলিত ছিল বলে আমরা জেনেছি। তিনি শিশুদের জন্য অনেক জনপ্রিয় ছড়াই লিখেছেন এবং সংগ্রহ করেছেন। হাট্টিমাটিম টিম ছাড়াও "বাক বাকুম পায়রা, মাথায় দিয়ে টায়রা"-ও তারই লেখা। এছাড়াও "খোকন খোকন ডাক পারি"- ছড়াটিও হাত ধরেই আমরা জেনেছি।
কবি রোকনুজ্জামান খানের জন্য ১৯২৫ সালের ৯ এপ্রিল ব্রিটিশ শাসিত ভারতের বাংলা প্রদেশের রাজবাড়ী জেলায়। জাতীয়তায় তিনি বাংলাদেশীই। তিনি ১৯৯৯ সালের ৩রা ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। তিনি বাংলা একাডেমি পুরুষ্কার, একুশে পদকসহ আরও অনেক সম্মাননায় ভূষিত হন।