৬ দফা কী? ৬ দফার ধারাগুলো তুলে ধরো

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে ৬ দফা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ঘটনা। ১৯৬৬ সালের ৫ এবং ৬ ফেব্রুয়ারি তারিখে পাকিস্তানের লাহোরে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর এক সম্মেলন হয়, যেখানে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শেখ মুজিবুর রহমান ৬টি দাবি পেশ করেন যা ইতিহাসে ৬ দফা হিসেবে পরিচিত। একই বছর ২৩ মার্চ এই ঐতিহাসিক ৬ দফা আবার ঘোষিত হয়।

৬ দফা কী? ৬ দফার ধারাগুলো তুলে ধরো

এই ৬ দফাকে অনেকে বাঙালির মুক্তির সনদ বলে থাকে। কী ছিল সেই ৬ দফা দাবী? জেনে নেয়া যাক:

দফা ৬টির মূল বিষয়বস্তুসমূহ:

  • শাসনতান্ত্রিক কাঠামো ও রাষ্ট্রের প্রকৃতি
  • কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা
  • মুদ্রা বা অর্থ-সম্বন্ধীয় ক্ষমতা
  • রাজস্ব, কর বা শুল্ক সম্বন্ধীয় ক্ষমতা
  • বৈদেশিক বাণিজ্য বিষয়ক ক্ষমতা
  • আঞ্চলিক সেনাবাহিনী গঠনের ক্ষমতা

 মূলত এই ৬টি মূল দাবি নিয়েই ছিল বাঙালির মুক্তির সনদ। এই ৬টি দাবি নিয়ে বিস্তারিত জানা যাক।

প্রস্তাব ১: শাসনতান্ত্রিক কাঠামো ও রাষ্ট্রের প্রকৃতি

লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে সংবিধান রচনা করে পাকিস্তানকে একটি ফেডারেশনে পরিণত করতে হবে, যেখানে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার থাকবে এবং প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকদের ভোটে নির্বাচিত আইন পরিষদ সার্বভৌম হবে।

প্রস্তাব ২: কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা

কেন্দ্রীয় বা ফেডারেল সরকারের ক্ষমতা কেবল দুটি ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ থাকবে। যথা:

  • দেশরক্ষা
  • বৈদেশিক নীতি

অবশিষ্ট সকল বিষয়ে অঙ্গ-রাষ্ট্রগুলোর ক্ষমতা থাকে নিরঙ্কুশ।

প্রস্তাব ৩: মুদ্রা বা অর্থ-সম্বন্ধীয় ক্ষমতা

মুদ্রার ব্যাপারে দুটি প্রস্তাব করা হয় এবং এর যেকোনো একটি গ্রহন করার সুপারিশ করা হয়। প্রস্তাব দুটি হলো:

  • সারা দেশের জন্য দুটি পৃথক কিন্তু অবাধে বিনিময়যোগ্য মুদ্রা চালু থাকবে অথবা
  • বর্তমান নিয়মে সারা দেশের জন্য কেমন একটি মুদ্রাই থাকতে পারে তবে শাসনতন্ত্রে এমন ফলপ্রসূ ব্যবস্থা রাখতে হবে যাতে করে পূর্ব-পাকিস্তান থেক পশ্চিম পাকিস্তানে মূলধন পাচারের পথ বন্ধ হয়। এক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) জন্য পৃথক ব্যাংকিং রিজার্ভেরও পত্তন করতে হবে এবং পূর্ব পাকিস্তানের জন্য পৃথক আর্থিক বা অর্থবিষয়ক নীতি প্রবর্তন করতে হবে।

প্রস্তাব ৪: রাজস্ব, কর বা শুক্ল সম্বন্ধীয় ক্ষমতা

ফেডারেশনের অঙ্গরাজ্যগুলোর কর বা শুল্ক ধার্যের ব্যাপারে সার্বভৌম ক্ষমতা থাকবে। কেন্দ্রীয় সরকারের কোন প্রকার কর ধার্যের ক্ষমতা থাকবে না। তবে প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহের জন্য অঙ্গ-রাষ্ট্রীয় রাজস্বের একটি অংশ কেন্দ্রীয় সরকারের প্রাপ্য হবে। অঙ্গরাষ্ট্রগুলোর সবরকমের করের শতকরা একই হারে আদায়কৃত অংশ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের তহবিল গঠিত হবে।

প্রস্তাব ৫: বৈদেশিক বাণিজ্য বিষয়ক ক্ষমতা

এক্ষেত্রে ৫টি প্রস্তাব করা হয়:

  • ফেডারেশনভুক্ত প্রতিটি রাজ্যের বহির্বাণিজ্যের পৃথক পৃথক হিসাব রক্ষা করতে হবে।
  • বহির্বাণিজ্যের মাধ্যমে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা অঙ্গরাজ্যগুলোর এখতিয়ারধীন থাকবে।
  • কেন্দ্রের জন্য প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা সমান হারে অথবা সর্বসম্মত কোনো হারে অঙ্গরাষ্ট্রগুলোই মিটাবে।
  • অঙ্গরাষ্ট্রগুলোর মধ্যে দেশজ দ্রব্য চলাচলের ক্ষেত্রে শুল্ক বা করজাতীয় কোনো রকম বাধা নিষেধ থাকবে না।
  • শাসনতন্ত্রে অঙ্গরাষ্ট্রগুলোকে বিদেশে নিজ নিজ বাণিজ্যিক প্রতিনিধি প্রেরণ এবং স্ব-স্বার্থে বাণিজ্যিক চুক্তি সম্পাদনের ক্ষমতা দিতে হবে।

প্রস্তাব ৬: আঞ্চলিক সেনাবাহিনী গঠনের ক্ষমতা

আঞ্চলিক সংহতি ও শাসনতন্ত্র রক্ষার জন্য শাসনতন্ত্রে অঙ্গ-রাষ্ট্রগুলোকে স্বীয় কর্তৃত্বাধীনে আধা সামরিক বাহিনী বা আঞ্চলিক সেনাবাহিনী গঠন ও রাখার ক্ষমতা দিতে হবে।

উপরের এই তথ্যগুলো উইকিপিডিয়া বাংলা থেকে নেয়া হয়েছে যেখানে তারা তথ্যগুলো সংগ্রহ করেছে নুরুল ইসলামের ৬ দফার খসড়া থেকে (১৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৬)।

Previous Post Next Post

এই লেখাটি আপনার সোশ্যাল মিডিয়া ওয়ালে শেয়ার করুন 😇 হয়তো এমনও হতে পারে আপনার শেয়ার করা এই লেখাটির মাধ্যমে অন্য কেউ উপকৃত হচ্ছে! এবং কারো উপকার করার থেকে ভাল আর কি হতে পারে?🥺