ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া বাংলাদেশের একটি স্বনামধন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিবছর এইচএসসি পরীক্ষা শেষ করেই অসংখ্য শিক্ষার্থীর স্বপ্ন থাকে ১৭৫ একরের এই ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থী হতে পারার। এই স্বপ্নকে ছুঁয়ে দেখার পথে কিছুটা অন্তত সাহায্য করতেই এই আর্টিকেল।
অন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এটি একটু আলাদা। এটিই বাংলাদেশের একমাত্র পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় যেখান থেকে বিজ্ঞান, ইঞ্জিনিয়ারিং, প্রযুক্তি, কমার্স, আর্টসের পাশাপাশি ইসলামিক বিভিন্ন বিষয়ের উপরও স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর করা যায়। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যেসকল ইসলামী বিষয়ের উপর স্নাতক করা যায় সেগুলো হলো:
- আরবি ভাষা ও সাহিত্য
- আল কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ
- দা'ওয়াহ অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ
- আল হাদিস অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ
- ইসলামের ইতিহাস এবং সংস্কৃতি
- আল ফিকহ অ্যান্ড লিগাল স্টাডিজ
এই বিষয়গুলোর মধ্যে প্রথম ৪টি থাকে ডি ইউনিট বা ঘ ইউনিটে। প্রথম ৪টি সাবজেক্টের ডি ইউনিটে চান্স পেতে কিভাবে পড়াশুনা করা উচিত তা জানাতেই পাঠগৃহের আজকের এই ব্লগপোস্টে।
আমাদের এই আর্টিকেলটি একটি সাক্ষাৎকারভিত্তিক আর্টিকেল। আমরা এখানে সাক্ষাৎকার নিয়েছি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বশেষ ভর্তি পরীক্ষার (এইচএসসি ২০২১) সিলেবাসে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলে মেধাতালিকার প্রথম ১০০ জনের মধ্যে থাকা একজন শিক্ষার্থীর।
সাক্ষাৎকার পর্ব
পাঠগৃহ: আসসলামু 'আলাইকুম ভাই। আপনার সাক্ষাৎকার নেয়ার অনুমতি দেয়ায় ধন্যবাদ। তাহলে শুরু করা যাক?
ইবি শিক্ষার্থী: শিউর।
পাঠগৃহ: প্রশ্ন আপনে নিজে করে উত্তর দিলে বেশি ভালো হয় না? কোন ব্যাপারগুলো শিক্ষার্থীদের জানা প্রয়োজন তা আপনি আমার থেকে ভালো জেনে থাকবেন।
ইবি শিক্ষার্থী: (হাসি)
পাঠগৃহ: আপনি ইবির কোন ইউনিট থেকে পরীক্ষায় অংশগ্রহন করেছিলেন?
ইবি শিক্ষার্থী: ডি/ঘ
পাঠগৃহ: কোন কোন ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে এই ইউনিটে পরীক্ষা দেয়া যায়?
ইবি শিক্ষার্থী: সব ব্যাকগ্রাউন্ড থেকেই দেয়া যায়। কোনো রেস্ট্রিকশন নাই। জেনারেলের যেকোনো গ্রুপ কিংবা আলিয়ার যেকোনো গ্রুপ হলেই চলবে। গ্রুপ ভিত্তিক কোনো কোটা নাই এখানে।
পাঠগৃহ: সবাই পরীক্ষা দিতে পারলে তো কম্পিটিশন অনেক বেশি হওয়ার কথা। এক সিটের জন্য আনুমানিক কতজন লড়াই করে থাকে? এবং এতো কম্পিটিশনের জায়গায় কিভাবে সেরা ১০০ তে থাকতে পারলেন?
ইবি শিক্ষার্থী: নাহ, প্রতিযোগিতা খুব একটা নেই। যেহেতু এখানে শুধু ইসলামিক বিষয়গুলোই পড়ানো হয়, তাই সকলে এদিকটাতে স্বাভাবিকভাবেই তেমন আগ্রহী থাকে না। গতবছরের হিসাব অনুযায়ী প্রতি সিটের বিপরীতে মাত্র ৬-৭ জন পরীক্ষার্থী লড়েছে। সাথে আরেকটা কারণ হতে পারে, এই ইউনিট নিয়ে তেমন একটা আলোচনা কোথাও শোনা যায় না। আমার মতো অনেকেই হয়তো র্যান্ডমলি এই ইউনিট আবিষ্কার করেছে ফেসবুকে।
পাঠগৃহ: ওহ। তো আপনার প্রস্তুতি কেমন ছিল? কিভাবে নিয়েছিলেন প্রস্তুতি?
ইবি শিক্ষার্থী: একটা ভর্তি গাইড কিনেছিলাম, বিশ্ববিদ্যালয়েরই সিনিয়রদের তৈরি। বই ৫০০ টাকায় ছিল, বই দেখে দামটা একটু বেশি মনে হলেও কাজে দিয়েছে বইটি। ওইটারই বিভিন্ন অংশ পড়ছি। সাথে বিগত সালের প্রশ্নগুলোও দেখেছি।
পাঠগৃহ: যারা ভর্তি হতে ইচ্ছুক তারা কিভাবে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে পারে? কোনো সাজেশন দেয়ার আছে?
ইবি শিক্ষার্থী: প্রশ্ন খুবই ইজি হয়, বিশেষ করে গতবছর আরও ইজি ছিলো। কিন্তু যেহেতু আরবি ভাষা আর ইসলামিক সাব্জেক্টের উপরই মেবি ৫০ এর মতো মার্ক (মোট ৮০ মার্কের মধ্যে) জেনারেল ব্যাকগ্রাউন্ডের ছাত্রদের হয়তো আরও ভালো প্র্যাকটিস লাগবে। মোটামুটি আরবি গ্র্যামারের ব্যাসিক জানা থাকতে হবে, ১৫ মার্ক এখানে। হাদিস কুরআনের অনেক কিছু হয়তো নৈর্ব্যক্তিক মুখস্থ করার অভ্যাস থাকলে সম্ভব, এখানে ৩০ মার্ক। বাংলা, ইংরেজি এবং জিকে খুব ইজি প্রশ্ন হয়।
পাঠগৃহ: ভর্তি গাইডটা সম্পর্কে আর কিছু বলবেন?
ইবি শিক্ষার্থী: নাহ, সিনিয়রদের বানানো বই। ভালো বই। প্র্যাকটিসে হেল্পফুল।
পাঠগৃহ: আপনি কোন ডিপার্টমেন্টে ভর্তি হয়েছেন?
ইবি শিক্ষার্থী: আরবি ভাষা ও সাহিত্য।
পাঠগৃহ: ডি ইউনিটে কোন কোন সাবজেক্ট আছে? আপনি কিভাবে সাবজেক্ট পছন্দ করলেন?
ইবি শিক্ষার্থী: কুরআন, হাদিস, দাওয়াহ, আরবি; পুরো নাম বললাম না, আমি হাদিস বাদ দিয়ে রেখেছিলাম কওমির তাকমিলের কারনে, কুরআন কেন বিবেচনা থেকে বাদ রাখছি তা বলতে চাই না, দাওয়াহর ব্যাপারে তেমন আইডিয়া ছিলো না, আর মূলত নোটিশে আরবি বিভাগ দেখেই আগ্রহী হয়েছিলাম। তবে জেনে রাখা ভালো এই ইউনিটে এইটাই সবার চয়েজ লিস্টে শেষে থাকে। এখানে খুব কম ছাত্রই আছে যাদের ফার্স্ট চয়েজ আরবি ছিলো, অথবা পরীক্ষার সময় থেকেই আরবি চুজ করে রেখেছিলো।
পাঠগৃহ: অনেক ধন্যবাদ। শেষ করার আগে ভর্তি প্রত্যাশী শিক্ষার্থীরা কিভাবে প্রস্তুতি নিতে পারে তা যদি আরেকবার জানিয়ে দিতেন আমাদের পাঠকদের!
ইবি শিক্ষার্থী: যারা মাদ্রাসা ব্যাকগ্রাউন্ডের তাদের জন্য আসলে তেমন কিছু বলার নাই, যেসব সাবজেক্টে পরীক্ষা হয় ওগুলার বেসিক আর বিগত বছরের প্রশ্নের সাথে এক্সট্রা আরও প্রশ্ন প্র্যাকটিস করলেই হবে।
আর জেনারেল থেকে কেউ এখানে ভর্তি হয় না বললেই চলে, পরীক্ষাই হয়তো দেয় অল্পস্বল্প পরীক্ষার্থী। আরবি বেসিক গ্র্যামার লাগবেই মাস্ট, যেহেতু কাটমার্ক্স অনেক বেশি থাকে এতোগুলা মার্ক ছাড়ার সুযোগ নাই, আমি বাংলার ৫ ছেড়ে দিছিলাম। আর ইসলামিক সাধারন জ্ঞান ভালো থাকতে হবে, এরপর গাইডে দেয়া সাবজেক্ট ভিত্তিক টপিক গুলো ভালো করে পরলেই হবে।
মাদ্রাসা ব্যাকগ্রাউন্ডের ছাত্রদের জন্য ১৫দিন যথেষ্ট মেবি যদি সব ব্যাসিক ভালো থাকে। তবে আমার কথায় কেউ শুধু ১৫দিনই পড়াশুনা করে সুযোগ না পেলে আমি দায়ি থাকব না। প্রথম থেকেই সিরিয়াস থাকা উচিত। আর জেনারেলের জন্য কতটুকু যথেষ্ট সময় তা বলতে পারছি না।
পাঠগৃহ: ধন্যবাদ আপনার মূল্যবান সময় আমাদেরকে দেয়ার জন্য। আশা করি আমাদের পাঠকরা আপনার দেয়া সাজেশন থেকে গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা পাবেন। জাযাকাল্লাহ।
ইবি শিক্ষার্থী: আপনাকেও ধন্যবাদ। আর অনুজদের জন্য থাকলো দুয়া ও শুভকামনা।
সংক্ষেপে
পুরো সাক্ষাৎকার যারা পড়েছেন তারা বুঝে গেছেন কিভাবে পড়াশুনা করা উচিত ভর্তি আগের সময়টাতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ডি বা ঘ ইউনিটে ভর্তি হতে চাইলে। সংক্ষেপে যদি বলি তাহলে ইবির এই শিক্ষার্থীর সাজেশন হচ্ছে:
যারা মাদ্রাসা ব্যাকগ্রাউন্ডের তাদের জন্য আসলে তেমন কিছু বলার নাই, যেসব সাবজেক্টে পরীক্ষা হয় ওগুলার বেসিক আর বিগত বছরের প্রশ্নের সাথে এক্সট্রা আরও প্রশ্ন প্র্যাকটিস করলেই হবে।সাক্ষাৎকার দাতার অনুমতিক্রমে পাঠকদের সুবিধার্থে কিছু কথা কিছুটা ভাষাগত পরিবর্তনের সাথে উপস্থাপিত হয়েছে। সকল পরিমার্জনই সাক্ষাৎকার দাতার অনুমতিক্রমে করা। সাক্ষাৎকার দাতার অনুমতি না পাওয়ায় তার পরিচয় পুরোপুরি তুলে ধরা হয়নি।
আর জেনারেল থেকে কেউ এখানে ভর্তি হয় না বললেই চলে, পরীক্ষাই হয়তো দেয় অল্পস্বল্প পরীক্ষার্থী। আরবি বেসিক গ্র্যামার লাগবেই মাস্ট, যেহেতু কাটমার্ক্স অনেক বেশি থাকে এতোগুলা মার্ক ছাড়ার সুযোগ নাই, আমি বাংলার ৫ ছেড়ে দিছিলাম। আর ইসলামিক সাধারন জ্ঞান ভালো থাকতে হবে, এরপর গাইডে দেয়া সাবজেক্ট ভিত্তিক টপিক গুলো ভালো করে পরলেই হবে।