এইচএসসির রসায়ন প্রথম পত্রের ৩য় অধ্যায় মৌলের পর্যায়বৃত্ত ধর্ম ও রাসায়নিক বন্ধনের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নাদি আমরা ধাপে ধাপে কয়েকটি পোস্টের মাধ্যমে দেব। আজ থাকছে প্রথম ১০টি প্রশ্ন।
দ্বিতীয় অধ্যায়ের গুণগত রসায়ন অধ্যায়ের বিগত বছরসমূহে বোর্ড পরীক্ষায় আসা প্রশ্নগুলোর উত্তরসহ পেতে এখানে ক্লিক করুন।
১. ল্যান্থানাইড সিরিজ ও অ্যাকটিনাইড সিরিজ কী?
পর্যায় সারণির ৬ষ্ঠ পর্যায়ের ল্যান্থানাম La (57) থেকে নিয়ে পরবর্তী লুটেসিয়াম Lu (71) পর্যন্ত ১৫টি মৌল্কে ল্যন্থানাইড সিরিজ বলে। এরা বিরল মৃত্তিকা মৌল।
পর্যায় সারণির অ্যাক্টিনিয়াম Ac (89) থেকে পরবর্তী লরেনসিয়াম Lr (103) পর্যন্ত ১৫টি মৌলকে অ্যাকনিটাইড সিরিজ বলে।
২. প্রতিনিধি মৌল কী?
s-ব্লক মৌল ও p-বল মৌলসমূহকে আদর্শ মৌল বা প্রতিনিধি মৌল বলে।
৩. MgO অপেক্ষা `Na_2O` অধিক ক্ষারীয় কেন? ব্যাখ্যা কর।
MgO এবং `Na_2O` এর মধ্যে `Na_2O` অধিক ক্ষারীয়। Na এবং Mg উভয়ই তৃতীয় পর্যায়ের মৌল যারা যথাক্রমে গ্রুপ 1 এবং গ্রুপ 2 এর। পর্যায় সারণিতে কোন পর্যায় বরাবর যত বাম থেকে ডান দিয়ে যাওয়া যায় মৌলের ধাতব ধর্ম তত কমতে থাকে। তাই Na এর ধাতব ধর্ম Mg এর থেকে বেশি। আবার, আমরা এটাও জানি যে অধিক ধাতব ধর্ম বিশিষ্ট মৌলের অক্সাইড কম ধাতম ধর্ম বিশিষ্ট মৌলের অক্সাইড থেকে বেশি ক্ষারকীয় হয়। এ কারণেই MgO অপেক্ষা `Na_2O` অধিক ক্ষারীয়।
`Na_2O + 2HCl = 2NaCl + H_2O`
`MgO + 2HCl = MgCl_2 + H_2O`
`Na_2O + H_2O = NaOH` (ক্ষার)
`MgO + H_2O =` কোনো বিক্রিয়া হয় না।
৫. চ্যালকোজেন কী?
চ্যালকোজেন শব্দের অর্থ আকরিক উৎপাদনকারী। গ্রুপ VIA এর মৌলসমূহ বিভিন্ন ধাতুর সাথে আকরিক গঠন করে। তাই পর্যায় সারণীর এই গ্রুপের মৌলসমূহকে চ্যালকোজেন বলে।
৪. Cs কে কেরোসিনের নিচে রাখা হয় কেন?
Cs অতিশয় সক্রিয় ধাতু। তাই Cs পানির সাথে খুব দ্রুত বিক্রিয়া করে এবং অক্সিজেনের সাথে বিভিন্ন অক্সাইড গঠন করে। Cs পানি অপেক্ষা ভারি হওয়ায় এটা পানিতে ডুবে যায়, পানির নিচে `H_2` গ্যাস উৎপন্ন হয়। সৃষ্টি হওয়া ঘাত তরঙ্গের ফলে কাঁচের পাত্র ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায়। পানির প্রতি তীব্র সক্রিয়তার কাণে এই ধাতুকে বায়ুতে উম্মুক্ত রাখা যায় না। তাই Cs কে কেরোসিনের নিচে ডুবিয়ে রাখা হয়ে থাকে।
৬. সাধারণ অবস্থায় `Na^+` গঠিত হলেও `Na^(2+)` গঠিত হয় না কেন?
প্রতিটি ধাতব পরমাণু তার সর্ববহিস্থ শক্তিস্তরের ইলেক্ট্রন ত্যাগ করে নিকটতম নিষ্ক্রিয় গ্যাসের ইলেক্ট্রন বিন্যাস লাভ করে। অর্থাৎ কোনো ধাতব পরমাণু তার ইলেকট্রন ত্যাগ করে নিষ্ক্রিয় গ্যাসের ইলেকট্রনিক কাঠামো লাভ করলে তা স্থিতিশীল হয়। Na এমন একটি ধাতু যা একটি ইলেকট্রন ত্যাগ করে নিষ্ক্রিয় গ্যাসের ইলেকট্রনিক কাঠামো লাভ করে সুস্থিত হয়। একাড়নে `Na^+` গঠিত হয়।
`Na (11) – 1s^2 2s^2 2p ^6 3s^1`
`Na^+ - 1s^2 2s^2 2p ^6` যা Ne (10) এর গাঠামো।
কিন্তু `Na^(2+)` আয়ন গঠিত হওয়ার জন্য আরও একটি ইলেকট্রন ত্যাগ করতে হয়। যেহতু `Na^+` এর নিষ্ক্রিয় গ্যাস নিয়নের ন্যায় সুস্থিত ইলেকট্রন কাঠামো বিদ্যমান তাই `Na^+` থেকে একটি ইলেকট্রনকে সরাতে অনেক বেশি শক্তির প্রয়োজন হয় অর্থাৎ এর আয়নিকরণ শক্তির মান অনেক বেশি। তাই স্বাভাবিক অবস্থায় `Na^(2+)` গঠিত হয় না।
৭. প্রথম গ্রুপের মৌলসমূহ সহজে দ্বিধনাত্মক আয়ন গঠন করে না। - ব্যাখ্যা কর।
প্রথম গ্রুপের মৌলসমূহের (H, He, Li, Na, K, Rb, Cs, Fr) প্রত্যেকের সর্ববহিঃস্থ স্তরের সাধারণ ইলেকট্রন বিন্যাস হলো `ns^1`। এর নিকটতম নিষ্ক্রিয় গ্যাসের স্থিতিশীল ইলেকট্রন কাঠামো অর্জনের জন্য এরা একটি ইলেক্ট্রন ত্যাগ করে একক ধনাত্মক চার্জ বিশিষ্ট আয়নে পরিণত হয় হাইড্রোজেন ছাড়া। এই আয়ন সমূহের ইলেকট্রন বিন্যাস অত্যন্ত স্থিতিশীল হওয়ায় আরও একটি ইলেকট্রন ত্যাগ করে দ্বিধনাত্মক আয়নে পরিণত হতে খুব বেশি শক্তির প্রয়োজন হয়। অর্থাৎ আয়নিকরণ শক্তির মান এদের ক্ষেত্রে উচ্চ। একারণে দ্বিধনাত্মক আয়ন গঠিত হয় না।
৮. গ্রুপ-I এর হ্যালাইডসমূহ জলীয় দ্রবণে কীভাবে থাকে?
হাইড্রোজেন ব্যতিত গ্রুপ-I এর হ্যালাইড সমূহ যথাক্রমে LiCl, NaCl, KCl, RbCl ইত্যাদি। এরা প্রত্যেকেই জলীয় দ্রবণে দ্রবীভূত অবস্থায় থাকে জলীয় দ্রবণে ধনাত্ম ধাতব আয়নের চতুর্দিকে পোলার পানির অণুসমূহের ঋণাত্মক প্রান্ত এবং ঋণাত্মক আয়নের চারদিকে পানির অনুসমূহের ধনাত্মক প্রান্ত আকৃষ্ট হয়। এর কারণে দ্রবণে পানি যোজিত আয়ন সৃষ্ট হয়।
৯. `CO_2` এবং `SiO_2` অম্লধর্মী কি না? ব্যাখ্যা কর।
কার্বন ডাই অক্সাইড পানির সাথে বিক্রিয়া করে কার্বনিক এসিড (`H_2CO_3`) উৎপন্ন করে। এছাড়া একটি ক্ষারের সাথে বিক্রিয়া করে `Na_2CO_3` লবণ এবং পানি উৎপন্ন করে। অর্থাৎ, `CO_2` অম্লধর্মী।
`CO_2 +H_2O = H_2CO_3`
`CO_2 + 2NaOH = Na_2CO_3 + H_2O`
`SiO_2` পানির সাথে বিক্রিয়া করে না। কিন্তু ক্ষারের সাথে বিক্রিয়া করে লবণ ও পানি উৎপন্ন করে। তাই এটিও অম্লধর্মী অক্সাইড।
`SiO_2 + 2NaOH = Na_2SiO_3 + H_2O`
১০. C`Cl_4` আর্দ্র বিশ্লেষিত হয় না কিন্তু `SiCl_4` আর্দ্র বিশ্লেষিত হয়- ব্যাখ্যা কর।
সিলিকন পরমাণুতে বহিঃস্থ ফাঁকা 3d অরবিটাল থাকে, ফলে `SiCl_4` এর সাথে পানি যোগ করলে সিলিকন পরমাণুর অষ্টক সম্প্রসারন ঘটে এবং ফাঁকা d অরবিটালে পানির অক্সিজেন পরমাণুর ইলেকট্রন যুগল স্থান গ্রহন করে। এই ইলেকট্রন যুগল দ্বারা সিলিকনের সঙ্গে অক্সিজেনের সন্নিবেশ বন্ধন গঠিত হয়। ফলে Si – Cl এর বদলে Si – OH বন্ধন গ্যঠিত হয়। এভাবে এক এক করে `SiCl_4` এর চারটি Cl পরমাণু পানির চারটি -OH মূলক দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়ে `Si(OH)_4` উৎপন্ন হয়।
অন্যদিকে কার্বন পরমাণুর বহিঃস্থ স্তর দ্বিতীয় স্তর বলে এখানে d অরবিটালই নেই। তাই কার্বনের বহিঃস্থ স্তরে অষ্টক সম্প্রসারণেরও সুযোগ নেই। একারণে পানির অণু এক্ষেত্রে স্ননিবেশ বন্ধন গঠন করতে পারে না। ফলে C`Cl_4` আর্দ্র বিশ্লেষিত হয় না।