ষষ্ঠ শ্রেণি বিজ্ঞান: ষষ্ঠ অধ্যায় সংবেদি অঙ্গ (গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এবং উত্তর)

ষষ্ঠ শ্রেণির বিজ্ঞান বইয়ের ষষ্ঠ অধ্যায় (সংবেদি অঙ্গ) - এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এবং উত্তর নিয়েই এই ব্লগপোস্টটি। অন্যান্য অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এবং উত্তরও দেয়া আছে 'পাঠগৃহ দ্যা রিডিং রুম' - এ।

ষষ্ঠ শ্রেণি বিজ্ঞান: ষষ্ঠ অধ্যায় সংবেদি অঙ্গ (গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এবং উত্তর)

১. সংবেদি অঙ্গ কাকে বলে?

যেসকল অঙ্গের মাধ্যমে আমরা বহির্জগতকে বুঝতে সক্ষম হই (তাপ অনুভব, স্বাদ গ্রহন, দেখা, শুনা ইত্যাদি) তাদেরকে সংবেদি অঙ্গ বলে।

২. কয়েকটি সংবেদি অঙ্গের নাম লিখ।

কয়েকটি সংবেদি অঙ্গ হলো: চোখ, কান, নাক, ত্বক, জিহ্বা।

৩. চোখের অবস্থান কোথায়?

মাথার সামনে দুটি অক্ষি কোটোরের মধ্যে চোখ থাকে।

৪. অশ্রু কাকে বলে?

অশ্রুগ্রন্থি থেকে নিঃসৃত তরলকে অশ্রু বা চোখের পানি বলে। এটি চোখকে সবসময় ভেজা রাখে।

৫. চোখের বিভিন্ন অংশের নাম ও তাদের কাজ উল্লেখ কর।

চোখের অংশ হিসেবে চোখের পাতা, কনজাংটিভা, অক্ষি গোলকের নাম বলা যায়। এদের নিয়ে নিচে বলা হলো:

ক) চোখের পাতা

চোখের পাতা হচ্ছে চোখের বাইরের আবরণ। চোখের পাতা খোলা যায়, বন্ধ করা যায়। এর মাধ্যমে ধুলাবালিসহ অনাকাঙ্ক্ষিত অনেক কিছু থেকেই চোখ রক্ষা পায়।

খ) কনজাংকটিভা

চোখের পাতা খুললেই চোখের যে অংশ আমরা দেখে থাকি, তা একটি পাতলা পর্দা দিয়ে ঢাকা থাকে। এই পাতলা পর্দার নাম কনজাংকটিভা।

গ) অক্ষি গোলক

অক্ষি গোলাকার বলের মতো একটি অঙ্গ। এটি তিন স্তর নিয়ে গঠিত। এর বিভিন্ন অংশ ভিন্ন ভিন্ন কাজ করে থাকে। এই অক্ষিগোলক নিয়ে বিস্তারিত পরের প্রশ্নে জানানো হলো।

৬. অক্ষি গোলক সম্পর্কে লেখ।

অক্ষি চোখের একটি অংশ যা গোলাকার। এর স্তর তিনটি। স্ক্লেরা, কোরয়েড এবং রেটিনা। এদের সম্পর্কে বিস্তারিত নিচে বলা হলো।

ক) স্ক্লেরা

অক্ষি গোলকের বাইরের দিকে থাকা সাদা, শক্ত এবং পাতলা স্তরটি হলো স্ক্লেরা। এটি চোখের আকৃতি রক্ষা করে এবং এর ভেতর দিয়ে চোখের ভেতর আলো প্রবেশ করতে পারে না। স্ক্লেরার সামনে কর্ণিয়া নামক একটি অংশ থাকে যার মাধ্যমেআলো চোখের ভেতর প্রবেশ করে।

খ) কোরয়েড

স্ক্লেরার নিচের স্তরটি কোরয়েড। এটি ঘন এবং রঞ্জিত পদার্থের স্তর। এখানে অনেক রক্তনালি প্রবেশ করে থাকে। এর মধ্যে আইরিশ এবং লেন্সের অবস্থান। আইরিশের পেশি সংকোচন প্রসারণের ফলে পিউপিল ছোট বড় হতে পারে যার ফলে আলোকরশ্মি রেটিনায় প্রবেশ করতে পারে।

গ) রেটিনা

রেটিনা অক্ষিগোলকের সবচেয়ে ভেতরের স্তর। এটি আলোক সংবেদি। এখানে রড় এবং কোন নামে দুই ধরনের কোষ থাকে। 

৭. কর্নিয়া কী?

চোখের অক্ষি গোলকের স্ক্লেরার সামনে থাকা স্বচ্ছ এবং চকচকে যে অংশটির মাধ্যমে চোখের ভেতর আলো প্রবেশ করে, তাকে কর্নিয়া বলে।

৮. কীভাবে চোখের যত্ন নিতে হয়?

চোখের যত্ন নেয়ার জন্য অনেকগুলো সতর্কতা অবলম্বন করা যেতে পারে। এদের মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে চোখ পরিষ্কার পানি দিয়ে ধোয়া। বিশেষ করে ঘুম থেকে ওঠে এবং বাসার বাইরে থেকে এসে দ্রুতই চোখ ধুয়ে নেয়া উচিত। ধোয়ার পর পরিষ্কার কাপড় দিয়ে চোখ মুছতে হবে। এবং চোখ ভালো রাখতে প্রচুর ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।

৯. কোন অঙ্গটি আমাদের দেহের ভারসাম্য রক্ষার প্রধান অঙ্গ হিসেবে কাজ করে?

কান বা কর্ণ আমাদের দেহের ভারসাম্য রক্ষার প্রধান অঙ্গ হিসেবে কাজ করে থাকে।

১০. আমাদের কান কয়টি অংশে বিভক্ত? অংশগুলোর নাম কী?

আমাদের কান তিনটি অংশে বিভক্ত। অংশগুলো হলো: বহিঃকর্ণ, মধ্যকর্ণ এবং অন্তঃকর্ণ।

১১. বহিঃকর্ণ সম্পর্কে লিখ।

বহিকর্ণ আমাদের কানের তিনটি অংশের একটি। এটি পিনা, কর্ণকুহর এবং কর্ণপটহ নিয়ে গঠিত। পিনা হচ্ছে কানের বাইরের অংশ। মাংস ও কোমলাস্থি দিয়ে গঠিত। পিনার কাজ হচ্ছে শব্দ কর্ণকুহরে পাঠানো।

কর্ণকুহর হচ্ছে সেই নালী যে নালীর সাথে পিনা যুক্ত থাকে। কর্ণকুহর যে পর্দায় শেষ হয়েছে, তাকে কর্ণপটহ বলা হয়। এটিই বহিঃকর্ণের শেষ অংশ।

১২. মর্ধকর্ণ কী? মধ্যকর্ণের কাজ কী?

বহিঃকর্ণ এবং অন্তঃকর্ণের মাঝে অবস্থিত অংশকে মধ্যকর্ণ বলে। এটি একটি বায়ুপূর্ণ থলি যার মধ্যে ম্যালিয়াস, ইনকাস ও স্টেপিস নামক তিনটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র হাড় রয়েছে। এদের মাধ্যমে শব্দ তরঙ্গ অন্তঃকর্ণে পৌঁছায়। মর্ধকর্ণেই কানের সাথে গলার সংযোগকারী নলটি রয়েছে।

১৩. অন্তঃকর্ণ সম্পর্কে লিখ/অন্তঃকর্ণের ইউট্রিকুলাস এবং স্যাকুলাস সম্পর্কে লিখ।

অন্তঃকর্ণ অডিটরি ক্যাপসুল অস্থির মধ্যে অবস্থিত। অন্তঃকর্ণ দুটি প্রধান প্রকোষ্ঠে বিভক্ত। প্রকোষ্ঠ দুটি হলো ইউট্রিকুলাস এবং স্যাকুলাস। ইউট্রিকুলাস অন্তঃকর্ণের এ প্রকোষ্ঠটি তিনটি অর্ধবৃত্তাকার নালি দিয়ে গঠিত। এদের ভেতর খুব সূক্ষ্ম লোমের মতো স্নায়ু ও রস থাকে। নালির ভেতরের রস যখন নড়ে বা আন্দোলিত হয়, তখনই স্নায়ুগুলো উদ্দীপ্ত হয় আর সেই উদ্দীপনা মস্তিষ্কে পৌঁছায়।

অন্যদিকে স্যাকুলাস হলো অন্তঃকর্ণের এই প্রকোষ্ঠের চেহারা অনেকটা শামুকের মতো প্যাঁচানো নালিকার মতো। একে বলা হয় ককলিয়া। ককলিয়ার ভেতরের শ্রবণ সংবেদি কোষ থাকে।

১৪. কানের যত্ন কীভাবে নেয়া উচিত? ব্যাখ্যা কর।

কানের যত্ন নেয়ার জন্য কয়েকটি কাজ করা যেতে পারে। উচ্চ শব্দে গান শুনা বাদ দিতে হবে। কানে বাইরের কোনো বস্তু বা পোকামাকড় ঢুকলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। কান অবশ্যই নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। পানি দিয়ে পরিষ্কারের সময় এবং গোসলের সময় কানের ভেতরে যেন পানি না ঢুকের যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

১৫. নাকের অংশ কয়টি ও কী কী?

নাকের দুটি অংশ। যথা:

  • নাসারন্ধ্র
  • নাসাপথ

১৬. নাসারন্ধ্র কাকে বলে?

নাকের যে ছিদ্র দিয়ে বাতাস দেহের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে, তাকে নাসারন্ধ্র বলে।

১৭. নাসাপথ কী? নাসাপথের গঠন এবং কাজ ব্যাখ্যা কর।

নাসারন্ধ্র থেকে গলার পেছন ভাগ পর্যন্ত বিস্তৃত একটি গহ্ববরে নাসাপথ বলা হয়। এই গহ্বরটি ত্রিকোণাকার। পাতলা প্রাচীর দিয়ে গহ্বরটি দুই ভাগে বিভক্ত হয়েছে। এর সামনের ভাগ লোম এবং পেছনের ভাগ পাতলা আবরণী ঝিল্লি দ্বারা আবৃত থাকে। এই ঝিল্লিকে বলা হয় ঘ্রাণ ঝিল্লি।

১৮. নাকের যত্ন কীভাবে নিতে হয়?

নাকের যত্ন নেয়ার জন্য নাকের ভেতরের শ্লেষার সাথে লেগে থাকা ধূলাবালি (বিশেষ করে শিশুদের নাকের) পরিষ্কার করতে হবে।

১৯. জ্বিহ্বার গঠন ব্যাখ্যা কর।

জিহ্বা আমাদের স্বাদ ইন্দ্রিয়। মুখ গহ্বরে অবস্থিত লম্বা পেশিবহুল অঙ্গটিকে জিহ্বা বলে। এর ইপরে একটি আস্তরণ আছে, এতে বিভিন্ন স্বাদ গ্রহনের জন্য স্বাদ কোরক থাকে। জিহ্বার সামনে, পেছনে এবং পাশে স্বাদ গ্রহনের জন্য বিশেষ কোরক থাকে। জিহ্বার মাঝে কোনো স্বাদ কোরক থাকে না।

২০. জিহ্বার কাজগুলো কী কী?

জিহ্বার কাজগুলো নিচে উল্লেখ করা হলো:

  • খাদ্যের স্বাদগ্রহন করা
  • খাবার গিলতে সাহায্য করা
  • খাদ্যবস্তুকে নেড়েচেড়ে দাঁতের কাছে পৌঁছে দেয়া।
  • খাদ্যবস্তুকে লালার সাথে মিশ্রিত করতে সাহায্য করা।
  • কথা বলতে সাহায্য করা।

২১. কীভাবে জিহ্বার যত্ন নেয়া যায়?

জিহ্বার যত্ন নেয়ার জন্য ব্রাশ করার সময় নিয়মিত জিহ্বাও পরিষ্কার করতে হবে। শিশুদের জিহ্বাও নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। অনেক সময় বিভিন্ন রোগের কারণে জিহ্বার উপর পর্দা পড়ে। তখন লবণ পানিতে কুলকুচি করা উচিত। মুখ এবং জিহ্বায় ঘা হলে চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করা উচিত।

২২. ত্বক কী?

আমাদের দেহের অভ্যন্তরীণ অঙ্গ সমূহকে রক্ষার জন্য সমস্ত দেহ যে চামড়া দিয়ে ঢাকা সেটাই ত্বক।

২৩. উপচর্ম এবং অন্তঃচর্ম সম্পর্কে লিখ।

উপচর্ম এবং অন্তঃচর্ম আমাদের দেহের ত্বকের দুটি স্তর। উপচর্ম হচ্ছে বাইরের আবরণ এবং অন্তঃচর্ম ভেতরের আবরণের নাম। উপচর্ম খুব পুরু এবং পাতলা দুই ধরনেরই হয়ে থাকে। উদাহারণ হিসেবে বলা যায়, হাত পায়ের ত্বক পুরু, অন্যদিকে ঠোটের ত্বক খুবই পাতলা। ত্বকের এই স্তর থেকেই লোম, চুল এবং নখের উৎপত্তি। অন্যদিকে অন্তঃচর্ম বা অন্তঃত্বকে রয়েছে রক্তনালি ও স্নায়ু। এছাড়াও লোমের মূল, ঘর্মগ্রন্থি, তেলগ্রন্থি ইত্যাদি থাকে।

২৪. ত্বকের সাধারণ কাজগুলো কী কী?

ত্বকের সাধারণ কাজগুলো হলো:

  • দেহের ভেতরের কোমল অংশকে বাইরের আঘাত থেকে রক্ষা করা।
  • দেহের ভেতরের অংশকে গরম, ঠাণ্ডা, রোদ, বৃষ্টি থেকে রক্ষা করা।
  • দেহে রোগজীবাণু ঢুকতে না দেয়া।
  • ঘাম বের করে দিয়ে শরীর ঠাণ্ডা এবং সুস্থ রাখা।
  • দেহের ক্ষতিকর পদার্থ বাইরে বের করে দেয়া।
  • সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে দেহকে রক্ষা করা।

২৫. ত্বকের যত্নের উপায়গুলো কী কী?

ত্বকের যত্নের জন্য নিয়মিত গোসল করতে হবে। এর দ্বারা চামড়ার সংক্রমণ, খুশকি, চুলকানি ইত্যাদি সমস্যা দূর করা সম্ভব। আলাদা গামছা এবং তোয়ালে ব্যবহার করা উচিত এবং কিছুদিন পর পর তা পরিষ্কার করা উচিত। ত্বকে কোনো ধরনের রোগ দেখা দিলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

২৬. চোখের লেন্স কেমন?

মানুষের চোখের লেন্স দ্বিউত্তল।

২৭. জিহ্বাকে স্বাদ ইন্দ্রিয় বলা হয় কেন?

জিহ্বার সামনের দিকে, পেছনের দিকে এবং দুই পাশে স্বাদ কোরক থাকে। এর মাধ্যমেই আমরা মিষ্টি, নোনতা, লবনাক্ততা এবং টক স্বাদ অনুভব করে থাকি। যেহেতু জিহ্বার মাধ্যমেই আমরা কোনো কিছুর স্বাদ নিয়ে থাকি, তাই জিহ্বাকে স্বাদ ইন্দিয় বলা হয়।

২৮. লোখের লেন্স নষ্ট হয়ে গেলে কী ঘটবে?

চোখের লেন্স নষ্ট হয়ে গেলে বাইরের পরিবেশ থেকে পাওয়া বস্তুর কোনো প্রতিবিম্বই আর রেটিনার উপর তৈরি হবে না। যার ফলে কোনো দৃষ্টি উদ্দীপনা মস্তিষ্কে প্রেরিত হবে না। ফলে আমরা কিছুই দেখতে পাব না।

২৯. অশ্রুর কাজ কী?

অশ্রুর কাজ হলো চোখকে সবসময় ভেজা রাখা। বাইরের ধুলাবালি ও জীবাণু চোখে পড়লে তা ধুয়ে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করা।

অন্যান্য অধ্যায়ের প্রশ্ন ও উত্তর খুঁজে পেতে সার্চ করুন আমাদের ওয়েবসাইটে।

Md. Rabiul Mollah

Okay! So here I'm Md. Rabiul Mollah from Pathgriho Network. I'm currently a student of B.Sc in Textile Engineering Management at Bangladesh University of Textiles. facebook instagram github twitter linkedin

Previous Post Next Post

এই লেখাটি আপনার সোশ্যাল মিডিয়া ওয়ালে শেয়ার করুন 😇 হয়তো এমনও হতে পারে আপনার শেয়ার করা এই লেখাটির মাধ্যমে অন্য কেউ উপকৃত হচ্ছে! এবং কারো উপকার করার থেকে ভাল আর কি হতে পারে?🥺