ষষ্ঠ শ্রেণির বিজ্ঞান বইয়ের দ্বিতীয় অধ্যায় (জীবজগৎ) থেকে গুরুত্বপূর্ণ ২৪টি প্রশ্ন এবং উত্তর এখানে দেয়া হলো।
১. জীবের প্রধান বৈশিষ্টসমূহ কী কী?
- চলন
- খাদ্য গ্রহন
- প্রজনন
- রেচন
- অনুভূতি
- শ্বাস-প্রশ্বাস
- বৃদ্ধি এবং
- অভিযোজন
২. চলন কী?
জীবের নিজের ইচ্ছায় চলাচল করতে পারার, এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে পারার ক্ষমতাকে চলন বলে।
৩. প্রজনন বলতে কী বুঝ?
জীবের বংশবৃদ্ধি করার ক্ষমতাকে প্রজনন বলে।
৪. রেচন কী?
জীবের বিশেষ প্রক্রিয়ায় তার দেহে উৎপাদিত বর্জ্য পদার্থ বাইরে বের করে দেয়ার প্রক্রিয়াকে রেচন বলে।
৫. অনুভূতি কাকে বলে?
দেহে বা মনে সংবেদন সৃষ্টি হওয়ার প্রক্রিয়াকে বলা হয় অনুভূতি।
৬. অভিযোজন বলতে কী বুঝ?
একটি জীবের পরিবেশের সাথে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেয়ার প্রক্রিয়াকে অভিযোজন বলে।
৭. শ্রেণিবিন্যাস কাকে বলে?
কম সময়ে এবং সহজে জীবজগৎ সম্পর্কে ধারনা পাওয়ার জন্য শ্রেণিকরণের সাহায্যে বর্তমান এবং অতীতের সকল জীবকে যে পদ্ধতিতে সাজানো হয় বা বিন্যাস করা হয় তাকেই জীবের শ্রেণিকরণ বা শ্রেণিবিন্যাস বলা হয়।
৮. আধুনিক শ্রেণিকরণ পদ্ধতি অনুযায়ী জীবজগতের রাজ্যগুলো কী কী?
আধুনিক শ্রেণিকরণ পদ্ধতি অনুযায়ী জীবজগতের রাজ্য ৫টি। এগুলো হলো:
- মনেরা
- প্রোটিস্টা
- ফানজাই
- প্লান্টি
- অ্যানিমেলিয়া
৯. প্লান্টি সম্পর্কে লিখ।
প্লাটি জীবজগৎ-এর ৫টি রাজ্যের একটি। এটি মূলত উদ্ভিদ জগতকেই বুঝিয়ে থাকে। এরা সাধারণত নিজেরা নিজেদের খাদ্য প্রস্তুত করে পারে, অর্থাৎ এরা স্বভোজী। এরা এককোষীও হতে পারে, আবার বহুকোষীও হতে পারে। এদের সেলুলোজ দ্বারা নির্মিত কোষপ্রাচীর থাকে। উদাহারণ: ফার্ন, আম গাছ, জাম গাছ, লেবু গাছ ইত্যাদি।
১০. মনেরা, প্রোটিস্টা কারা?
মনেরা এবং প্রোটিস্টা জীবজগতের ৫টি রাজ্যের দুটি। এককোষী জীব যাদের দেহে সুগঠিত নিউক্লিয়াস থাকে না তারা মনেরা রাজ্যের অন্তর্গত এবং যেসকল এককোষী জীবে সুগঠিত নিউক্লিয়াস থাকে তারা প্রোটিস্টা রাজ্যের অন্তর্গত। রাইজোবিয়াম মনেরা রাজ্যের উদাহারণ এবং অ্যামিবা প্রোটিস্টা রাজ্যের উদাহারণ।
১১. ফানজাইয়ের বৈশিষ্ট্যসমূহ লিখ।
জীবজগতের একটি রাজ্যের নাম ফানজাই বা ছত্রাক। এদের বৈশিষ্ট্যসমূহ নিচে দেয়া হলো:
- এরা এককোষী বা বহুকোষী
- এদের দেহে সুগঠিত নিউক্লিয়াস থাকে
- এদের দেহে ক্লোরোফিল নেই
- ইস্ট, পেনিসিলিয়াম, মাশরুম ইত্যাদি ফানজাইয়ের উদাহারণ।
১২. জীব কাকে বলে?
চলন, খাদ্য গ্রহন, প্রজনন, রেচন, অনুভূতি, শ্বাস-প্রশ্বাস, বৃদ্ধি, অভিযোজন ক্ষমতা আছে যার, তাকেই জীব বলে।
১৩. প্রত্যেক রাজ্যের শনাক্তকারী বৈশিষ্ট্য লিখ।
মনেরা রাজ্যের শনাক্তকারী বৈশিষ্ট্য
- এরা এককোষী জীব
- এদের দেহে সুগঠিত নিউক্লিয়াস থাকে না
- এরা অণুবীক্ষণিক
প্রোটিস্টা রাজ্যের শনাক্তকারী বৈশিষ্ট্য
- এরা এককোষী জীব
- এদের দেহে সুগঠিত নিউক্লিয়াস বিদ্যমান
- এরা একক বা দলবদ্ধভাবে থাকতে পারে।
ফানজাই রাজ্যের শনাক্তকারী বৈশিষ্ট্য
- এরা এককোষী বা বহুকোষী
- এদের দেহে সুগঠিত নিউক্লিয়াস আছে
- এদের দেহে ক্লোরোফিল নেই
প্লান্টি রাজ্যের শনাক্তকারী বৈশিষ্ট্য
- এদের দেহে ক্লোরোফিল থাকে
- এরা স্বভোজী
- এদের কোষপ্রাচীর সেলুলোজ দ্বরা নির্মিত
- এদের কোষ সুগঠিত নিউক্লিয়াসযুক্ত
- এরা এককোষী বা বহুকোষী
অ্যানিমেলিয়া রাজ্যের শনাক্তকারী বৈশিষ্ট্য
- এদের কোষে সেলুলোজ নির্মিত কোষপ্রাচীর থাকে না
- এদের কোষে প্লাস্টিড থাকে না
- এরা নিজেদের খাদ্য নিজেরা তৈরি করতে পারে না, উদ্ভিদের উপর নির্ভরশীল
১৪. অপুষ্পক উদ্ভিদ কাকে বলে?
যেসকল উদ্ভিদে ফুল ও ফল হয় না তাদের অপুষ্পক উদ্ভিদ বলে।
১৫. সপুষ্পক উদ্ভিদ কাকে বলে?
যেসকল উদ্ভিদে ফুল হয় তাদের সপুষ্পক উদ্ভিদ বলে।
১৬. সপুষ্পক ও অপুষ্পক উদ্ভিদের মধ্যে পার্থক্য লিখ।
নিচে সপুষ্পক ও অপুষ্পক উদ্ভিদের মধ্যে পার্থক্য দেখানো হলো:
ক্রম | অপুষ্পক উদ্ভিদ | সপুষ্পক উদ্ভিদ |
---|---|---|
১
|
অপুষ্পক উদ্ভিদে ফুল হয় না।
|
সপুষ্পক উদ্ভিদে ফুল হয়।
|
২ | এরা স্পোর বা রেণু সৃষ্টির মাধ্যমে প্রজনন সম্পন্ন করে। | এরা বীজের মাধ্যম্যে প্রজনন সম্পন্ন করে। |
৩
|
এসব উদ্ভিদে ফল হয় না।
|
কোনো কোনো সপুষ্পক উদ্ভিদে ফল হয়, আবার কোনো কোনো সপুষ্পক উদ্ভিদে ফল হয় না।
|
৪
|
এদের অনেকের দেহকে মূল, কাণ্ড, পাতায় বিভক্ত করা যায় না। এরা সমাঙ্গদেহী উদ্ভিদ।
|
এদের দেহকে মূল, কাণ্ড এবং পাতায় বিভক্ত করা যায়।
|
৫
|
এদের দেহে সাধারণত মূলের পরিবর্তে রাইজয়েড বিদ্যমান। | মূল বিদ্যমান থাকে। |
৬
|
মস, ফার্ন অপুস্পক উদ্ভিদের উদাহারণ।
|
আম গাছ, কাঠাল গাছ, সাইকাস ইত্যাদি সপুষ্পক উদ্ভিদের উদাহারণ।
|
১৭. নগ্নবীজী ও আবৃতবীজী উদ্ভিদ বলতে কী বুঝ?
নগ্নবীজী ও আবৃতবীজী উদ্ভিদ হচ্ছে সপুষ্পক উদ্ভিদের দুটি ভাগ। যেসকল সপুষ্পক উদ্ভিদের ফুলে ডিম্বাশয় থাকে না, ফলে ডিম্বক/বীজ নগ্ন থাকে তাদেরকে নগ্নবীজী উদ্ভিদ বলে। আর সেসকল উদ্ভিদের ফুলে ডিম্বাশয় থাকে এবং ডিম্বকগুলো ডিম্বাশয়ের ভেতরে সজ্জিত থাকে তাদেরকে আবৃতবীজী উদ্ভিদ বলা হয়।
১৮. মেরুদণ্ডী প্রাণি কারা এবং এদের বৈশিষ্ট্যগুলো কী কী?
(ষষ্ঠ শ্রেণির উপযুক্ত) যেসকল প্রাণির দেহে মেরুদণ্ড থাকে তাদের মেরুদণ্ডী প্রাণি বলে। মেরুদণ্ডী প্রাণির কয়েকটি বৈশিষ্ট্য হলো:
- এদের দেহের ভেতর কঙ্কাল থাকে
- পাখনা বা দুই জোড়া পা থাকে
- চোখ সরল প্রকৃতির
- মানুষ ছাড়া অন্য সকল মেরুদণ্ডী প্রাণির লেজ থাকে।
- শ্বাসকার্য চালায় ফুলকা বা ফুসফুস দিয়ে
১৯. অমেরুদণ্ডী প্রাণীর বৈশিষ্ট্য লিখ।
অমেরুদণ্ডী প্রাণীর বৈশিষ্ট্যগুলো হলো:
- এদের মেরুদণ্ড নেই
- এদের দেহের ভেতর কঙ্কাল থাকে না
- চোখ সরল প্রকৃতির কিংবা একটি চোখের মধ্যে অনেকগুলো চোখ থাকে
- এদের লেজ নেই।
২০. ব্যাঙ কোন ধরনের মেরুদণ্ডী প্রাণী?
যেহেতু ব্যাঙ জীবনের কিছু সময় ডাঙায় এবং কিছু সময় পানিতে বাস করে, তাই ব্যাঙ উভচর শ্রেণিভুক্ত মেরুদণ্ডী প্রাণী।
২১. সরীসৃপ কাকে বলে? উদাহারণ দাও।
যেসকল মেরুদণ্ডী প্রাণী বুকে ভর দিয়ে চলে তাদের সরীসৃপ বলে। এদের আঙুলে নোখ থাকে এবং এরা ডিম পারে। যেমন: টিকটিকি, কুমির, সাপ, গিরগিটি ইত্যাদি। (গিরগিটি কেন রঙ বদলায় জানতে চাও? চাইলে এখানে ক্লিক করো।)
২২. উভচর প্রাণীর বৈশিষ্ট্যগুলো উল্লেখ কর।
উভচর প্রাণীর বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নরূপ:
- এরা জীবনের কিছু সময় ডাঙায় এবং কিছু সময় পানিতে কাটায়
- এদের ত্বকে লোভ, আঁইশ বা পালক থাকে না।
- দুই জোড়া পা থাকে
- পায়ের আঙুলে কোনো নোখ থাকে না।
২৩. শৈবাল, মস এবং ফার্নের পার্থক্যগুলো কী কী?
শৈবাল, মস এবং ফার্নের মধ্যাকার পার্থক্যগুলো নিচে দেয়া হলো:
শৈবাল | মস | ফার্ন |
---|---|---|
শৈবালের দেহকে মূল, কাণ্ড এবং পাতায় বিভক্ত করা যায় না। |
মসবর্গীয় উদ্ভিদের কাণ্ড ও পাতা আছে, তবে মূল নেই। মূলের পরিবর্তে এদের রাইজয়েড বিদ্যমান।
|
ফার্নের দেহকে মূল, কাণ্ড এবং পাতায় বিভক্ত করা যায়।
|
এদের পরিবহন কলা থাকে না। | এদেরও পরিবহন কলা থাকে না। | এদের পরিবহন কলা থাকে। |
২৪. উদ্ভিদের চলন বলতে কী বুঝ?
জীবের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে চলন। প্রাণীর ক্ষেত্রে আমরা চলন বুঝতে পারি স্বাভাবিকভাবেই। যেকোনো প্রাণি এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে পারে। তবে উদ্ভিদ স্থান পরিবর্তন করতে পারে না। তবুও উদ্ভিদে চলন বিদ্যমান। উদ্ভিদ বেড়ে ওঠার সময় তার শাখা প্রশাখা, ডগা ইত্যাদি নড়াচড়া করে, সূর্যের আলোর দিকে বেঁকে যায়। এসবই উদ্ভিদের চলন।
ষষ্ঠ শ্রেণির বিজ্ঞান বইয়ের দ্বিতীয় অধ্যায় (জীবজগৎ) থেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এসবই। এই প্রশ্নগুলো ভালোভাবে অনুশীলন করলে সৃজনশীলের ক এবং খ নং প্রশ্নের উত্তর সরাসরি করতে পারবে আশা করা যায় এবং গ এবং ঘ নং উত্তর পরোক্ষভাবে দিতে পারবে বলে আশা করছি।
আরও কিছু জানার থাকলে যোগাযোগ করতে পারেন আমাদের ফেসবুক পেজে। পাঠগৃহ দ্যা রিডিং রুমের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
আরও দেখুন: