পৃথিবীর সবচেয়ে বড় প্রাণী কোনটি?
এর উত্তর নিশ্চয় আপনাদের অনেকেরই জানা আছে।
চলুন আজ আমরা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় প্রাণীটিকে নিয়েই মজার কিছু তথ্য উদঘাটনে নেমে পড়ি।
এতক্ষণে বুঝে ফেলারই কথা যে আমাদের অলোচনায় আজ কোন প্রাণীটি থাকছে। তাই না? হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন। নীল তিমি বা ব্লু হোয়েল নিয়েই আমাদের আজকের এই আলোচনা।
পৃথিবীর সবচেয়ে বৃহৎ প্রাণী নিয়ে আলোচনায় নামলাম আমরা। তাহলে স্বাভাবিকভাবে আমাদের মনে প্রথম যে প্রশ্নটা আসবে সেটি হলো যে একটা নীল তিমি ঠিক কতটুকু দীর্ঘ? তাহলে চলুন শুরুতেই আমরা এই প্রশ্নের উত্তরটা ফটাফট জেনে নিই।
ব্লু হোয়েল কতটা লম্বা?
নীল তিমির দৈর্ঘ্য প্রায় ৮০-১০০ ফুট (২৪-৩০ মিটার) হয়ে থাকে। সাধারণত উত্তর গোলার্ধের চেয়ে দক্ষিণ গোলার্ধের নীল তিমি অধিক দীর্ঘ হয়। আবার স্ত্রী নীল তিমিগুলো পুরুষ নীল তিমির চেয়েও দীর্ঘ হয়ে থাকে। এখনো পর্যন্ত রেকর্ডকৃত সবচেয়ে বড় নীল তিমিটি ১১০ ফুট ১৭ ইঞ্চি (৩৩.৫৮ মিটার) দীর্ঘ । এটি ছিল একটি স্ত্রী নীল তিমি যেটি কিনা ১৯০৯ সালে সাউথ জর্জিয়া হোয়েলিং স্টেশন থেকে রেকর্ড করা হয়েছিল। এর চেয়েও বড় নীল তিমি থাকতেই পারে যেটি কিনা হয়তোবা এখনো আমাদের রেকর্ডের বাইরেই রয়ে গেছে।
নীল তিমির ওজন কত?
তাহলে এখন কি আপনারা কোনো ধারণা করতে পারছেন যে এই বিশাল প্রাণীটির ওজন কেমন হবে? গড়ে একটি নীল তিমির ওজন ২০০,০০০-৩০০,০০০ পাউন্ড (১০০-১৫০ টন) হয়ে থাকে। তুলনা করতে গেলে বলা যায় যে একটি নীল তিমি ৩০টি আফ্রিকান বুশ হাতির চেয়েও ওজনে ভারী। আর আফ্রিকান এই বুশ হাতিগুলো কিন্তুু স্থলভাগের সবচেয়ে বড় স্তন্যপায়ী প্রাণী। তাহলে ভেবেই দেখুননা ঠিক কতটা ভারী একেকটা নীল তিমি। এখনো পর্যন্ত রেকর্ডকৃত সবচেয়ে ভারী নীল তিমিটির ওজন হলো ৪১৮,৮৭৮ পাউন্ড (১৯০ টন) যেটিও কিনা একটি স্ত্রী নীল তিমি ছিল।
হৃদপিন্ড
আর এরকম এক একটা নীল তিমি প্রায় ৪০০ পাউন্ডের হৃদপিন্ড নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। নীল তিমিরা যখন পানির উপরিপৃষ্ঠে উঠে আসে তখন তাদের হৃৎস্পন্দন প্রতি মিনিটে ২৫-৩৫ বিট হয়ে থাকে। কিন্তু যখন তারা খাবারের খোঁজে পানির গভীরে চলে যায় তখন তাদের হৃৎস্পন্দন প্রতি মিনিটে ৪-৮ বিটে নেমে যায়। মজার ব্যাপার হলো আপনি কিন্তুু ২ মাইল দূর থেকেও নীল তিমির এই হৃদস্পন্দের আওয়াজ শুনতে পাবেন।
নীল তিমিরা কথা বলে কীভাবে?
নীল তিমি হলো পৃথিবীর সবচেয়ে উচ্চস্বর উৎপন্নকারী প্রাণী। এরা ১৮৮ ডেসিবেলে শব্দ উৎপন্ন করে যেখানে একটি জেট ইঞ্জিন কিনা ১৪০ ডেসিবেলের মত শব্দ উৎপন্ন করে থাকে। একটা নীল তিমির আওয়াজ আরেকটা নীল তিমি প্রায় ৫০০ মাইল দূর থেকেও শুনতে পায়। আর এই আওয়াজের মাধ্যমেই এরা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করে থাকে।
ব্লু হোয়েল কত বছর বাঁচে?
এবারে আসা যাক এই বিশাল প্রাণীটির আয়ুষ্কাল নিয়ে। ভাবতে পারেন যে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় প্রাণী যেহেতু এটি হয়তোবা হাজার হাজার বছর ধরে বেঁচে থাকতে পারে। কিন্তু এমনটা ভাবলে ভুল করবেন। কারণ বিজ্ঞানীদের গবেষণা থেকে জানা গেছে যে এই বিশাল প্রাণীটির আয়ুষ্কাল মাত্র ৮০-৯০ বছর।
নীল তিমি কোথায় থাকে?
আর্কটিক ব্যতীত পৃথিবীর বাকি সব মহাসাগরেই নীল তিমি পাওয়া যায়। তবে দক্ষিণ গোলার্ধে সবচেয়ে বেশি নীল তিমি পাওয়া যায়।
ব্লু হোয়েলের খাবার কী?
এত বিশাল প্রাণীটি আসলে কী খেয়ে জীবন ধারণ করে? জেনে অবাক হবেন যে প্রাণীটি বিশাল হলেও এর প্রধান খাদ্য কিন্তুু খুবই ক্ষুদ্র প্রজাতির সামুদ্রিক ক্রিল। ক্রিল হলো চিংড়ির মত ক্ষুদ্র ক্রাস্টাসিয়ান প্রাণী। আর প্রাপ্ত বয়স্ক একটি নীল তিমি প্রতিদিন প্রায় ৪০ মিলিয়ন ক্রিল আহরণ করে থাকে।
খাবার আহরণ পদ্ধতি
আলোচনার শেষে এখন আপনাদেরকে একটা মজার তথ্য দিয়ে যাই। নীল তিমির মুখে ব্রাশের মত এক সাড়ি প্লেট থাকে। খাবার আহরণের সময় তিমি যখন মুখে পানি নেয় তখন তা থেকে খাবার ফিল্টার করার জন্যই এই প্লেটগুলি ব্যবহার করে। নীল তিমি একসাথে মুখে প্রায় ৫০০০ কিলোগ্রাম পানি এবং প্লাঙ্কটন (সামুদ্রিক ক্ষুদ্র পাণী) নিতে পারে। এটি যখন জোর করে তার মুখ থেকে পানি বের করে দেয় তখন প্লেটগুলি খাবার আটকে রাখার কাজ করে। তারপরে তিমি তার বিশাল জিহ্বা দিয়ে প্লেটগুলি পরিষ্কার করে এবং মূলত এভাবেই তিমি তার খাবার আহরণ করে থাকে।
আজ এই পর্যন্তই। এখন বিদায় নেয়ার পালা। সবাই তাহলে ভালো থাকার চেষ্টা করবেন। আর অবশ্যই নিরাপদে থাকবেন। আল্লাহ হাফেজ।
শাহ ফরান শাকিবের লেখা আরও কিছু আর্টিকেল: