ঠিক আগের অধ্যায়েই ওয়ানডে ক্রিকেটে শচীনের শুরুর দিকের শচীনের মতো হয়ে ওঠতে না পারার বিষয়টা নিয়েই কথা হয়েছে। শচীনের সেই ব্যর্থতাকে কিভাবে কাটানো যেতে পারে, কী করলে শচীন টেস্টের মতো ওয়ানডে ক্রিকেটেও ভালো করতে পারবে- এসব নিয়ে আলোচনা তো চায়ের দোকান থেকে শুরু করে বড় বড় ক্রিকেটবোদ্ধা আর নামীদামী সব গণমাধ্যমেও হয়েছে। শচীনের ওয়ানডেতেও ভালো করার টোটকা হিসেবে নানা মুনি যে নানা মত দিচ্ছিলো তার মধ্যে একটি ছিলো ব্রায়ান লারার মতো করে ওপেনিংয়ে ওঠে আসা। লারাও ব্যর্থতার বৃত্ত ভাঙতে নিজের ১৮ তম ওয়ানডে ম্যাচে ওপেনে ওঠে এসেই খেলেন অপরাজিত ৮৮ রানের ইনিংস।
ইনিংস শুরু করলেই শচীন ওয়ানডেতেও সেরা হয়ে উঠতে পারবে- এই বিশ্বাস অনেকেরই ছিলো। তবে ভয়ও ছিলো, ইনিংসের শুরুতেই শচীন আউট হয়ে গেলে তো বিপদ। “শচীনের মতো কেউ একজন শুরুতেই নেই!”- এমনটা তো আর ম্যানেজমেন্ট চিন্তাও করতে পারে না। তাই বহু বলাবলি হলেও শচীনকে আর ওপেনিংয়ে পাঠানোর মতো সাহস ভারত দল দেখিয়ে উঠতে পারেনি। বলা বাহুল্য, ওপেনে ব্যাট করার ইচ্ছা শচীনের কিন্তু অনেক আগে থেকেই।
২৭ মার্চ ১৯৯৪
দিনটা যেন শচীনকে ওপেনে পাঠাতেই এভাবে শুরু হলো।
- কী হয়েছিলো?
- নভোজিৎ সিং সিধুর ঘাড়ে ব্যাথা হয়েছিলো।
- তাতে কী?
- খানিক বাদেই যে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৪ ম্যাচের ওডিআই সিরিজের
২য় টি।
- তো?
- সিধু তো খেলতে পারবে না। ওপেন করবে কে?
সিধু আজ মাঠে নামতে পারবে না- এমন খবর পেয়ে টিম ইন্ডিয়ার মন খারাপ হওয়া স্বাভাবিক, কারণ কোনো একজন নন-ওপেনারকে দিয়েই আজ ওপেন করাতে হবে। তবে এতোসবের পরও একজনের মনে আজ বেজায় আনন্দ। সেই একজন দৌড়ে গেলেন অধিনায়ক আজহারউদ্দিন আর টিম ম্যানেজার অজিত ওয়াদেকারের কাছে। গিয়েই বলে উঠলো “আজ আমি ওপেন করতে চাই।"
না, শচীন গিয়ে চাইলো আর তারা রাজি হয়ে গেলো- এমনটা ঘটেনি। শচীনকে অনেক কাকুতি-মিনতি, অনুনয়-বিনয়ের মধ্য দিয়ে নিজের দাবিটুকু উত্থাপন করতে হয়েছে। বুঝাতে হয়েছে প্রথম ১৫ ওভারের ফিল্ড রেস্ট্রিকশনকে কাজে লাগিয়ে ভালো করতে পারবে সে। এবার ব্যর্থ হলে আর কোনোদিন সে যে কোনো সুযোগ চাবে না তাও বলেছিলো। অবশেষে পাওয়া গেলো ওয়াকেদারের সম্মতি।
প্রথমবার ওপেনে নামলেন শচীন। নেমেছিলেনই এটাকিং খেলার প্রতিজ্ঞা করে।
- তারপর?
- ৪৮ বল খেলে আউট হলেন ম্যাথু হার্টের বলে। তার আগে এই ৪৮ বলের মধ্যে ডট বলই খেলে ফেলেছেন ২৬টি।
- তার মানে শচীন ব্যর্থ হয়েছিলো?
- মোটেও না।
সংখ্যাগুলো দেখুন তো। ২, ৪, ৪, ৪, ৪, ৩, ৪, ৪, ৪, ৪, ৬, ৪, ৪, ৬, ৪, ৪, ৪, ৪, ২, ৪, ২, ১। কী এগুলো? এগুলো শচীনের খেলা বাকি ২২ বলের স্কোর। ৪৮ বলে ৮২ রানের সফল এক ইনিংস শেষ করে ফিরেন শচীন। সেখান থেকেই শুরু, আর অনুনয়-বিনয়ের প্রয়োজন হয়নি। নতুন এক অধ্যায়ের শুরু হয়ে গেলো যার নাম “ওপেনার শচীন”-ও দিতে পারেন কিংবা দিতে পারেন “ওডিআই সম্রাট শচীন”। এটাও মানতেই হবে যে, ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা একটা কিছুর শুরু হয়েছিলো সেদিন, “রঙিন পোশাকে নতুন ভারত” শিরোনামও দিতে পারেন এই গল্পের। আপনারা ভাবুন কী নাম দেয়া যায়, আমি এই গল্প এখানেই থামাচ্ছি।
২০০২ এর ফেব্রুয়ারি থেকে শচীন কিছু ম্যাচে ৪ নাম্বারে এবং কিছু ম্যাচে ৩ নাম্বারে ব্যাট করলেও বছর ঘুরতে না ঘুরতেই আবার ফিরেন ওপেনিংয়েই।