শচীনকে নিয়ে যারা প্রশ্ন তোলে, তাদের প্রশ্নগুলোর মধ্য থেকে কমন কয়েকটি প্রশ্নের এটি একটি। শচীন তো আসলে টেস্ট ক্রিকেটের ৪র্থ ইনিংসে খুব বেশি সফল ছিলেন না। শচীন তবে সবদিক থেকে সেরা হলো কিভাবে?
কথা সত্য! টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে শচীনের ব্যাটিং গড় ছিলো ৩৬.৯৩। তবে এটা কী ফেলনা? না, তবে আহামরি কিছুও না। আর সবথেকে বড় কথা, শচীনের এই গড়ের থেকে টেস্ট ম্যাচের চতুর্থ ইনিংসে বেশি গড়ের মালিক আছেন অনেকজন। তারা কী তবে শচীনের থেকে সেরা না?
এই এক জায়গায় এসে আপনি বলতেই পারেন, অন্যরা এখানে শচীনের থেকে এগিয়ে। একজন ক্রিকেটারকে গ্রেট হতে হলে যে সবদিক থেকেই সবার উপরে থাকতে হবে এমন কোনো কথা তো নেই। শচীনের এই ৩৬.৯৩ এর উপরে অনেক ব্যাটারই আছে সেটা যেমন সত্য তেমনি অনেক গ্রেটটরাও এক্ষেত্রে শচীনের পরে আছেন। তাই শচীন যে টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে অনেক ভালো ব্যাটার ছিলেন তেমনটা প্রমাণ করতে চাওয়ার কোনো মানে নেই, একই সাথে এই কারণে শচীনকে ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা ব্যাটার হিসেবে না মানার প্রশ্নই আসে না। এখন দেখা যাক টেস্টের চতুর্থ ইনিংসের গড়ে কার কী অবস্থা!
টেস্ট ইতিহাসের প্রথম ৩০ জন সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকদের তালিকা করে তাদের মধ্য থেকে গড়ের ভিত্তিতে শচীনকে খুঁজতে গেলে পাওয়া যাবে ২৫ জনের পরে; শচীন এক্ষেত্রে শেষ ৫ জনের প্রথমজন। ৫৮.৭৬ গড় নিয়ে এই তালিকায় সবার উপরে আছেন জিওফ্রে বয়কট। পরবর্তী নাম গুলো সুনীল গাভাস্কার, জ্যাক হবস, গ্রায়েম স্মিথ, গর্ডন গ্রিনিজ, ইউনিস খান, রিকি পন্টিং, ম্যাথু হেইডেনদের। শচীন এদের থেকে ঢের পিছিয়ে। ১১ তে থাকা ডেভিড ওয়ার্নারের গড় ৪৩.৪২।
শচীনের আগে ২৫ জন, পরে কিন্তু ৪ জন আছে। সেই ৪ জনের প্রথম ২ জন কে কে? অ্যালিস্টার কুক আর ব্রায়ান লারা।
অন্তত ২৫টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন এমন ব্যাটারদের তালিকাতেও শচীনের অবস্থান অনেক পরে, ৫৭ তম স্থানে আছে শচীনের নামটা। শচীনের পরে কুক আর ব্রায়ান লারা ছাড়াও আছেন অ্যাডাম গিলক্রিস্ট, সনাৎ জয়সুরিয়া, জো রুট, মোহাম্মাদ আজহারউদ্দিনরা। এ সময়কার অন্যতম সেরা টেস্ট ব্যাটার স্টিভ স্মিথের গড় ৩০.৭৩। বাংলাদেশের মুশফিকুর রহিমের গড় এখানে ৩৪.৭২। তাই বলে কী স্মিথকে এখন বাতিলের খাতায় ফেলতে হবে? না কি যুক্তি প্রমাণ দিয়ে বুঝাতে হবে টেস্টের চতুর্থ ইনিংসের আসলে কোনো গুরুত্বই নেই। এখানে ভালো খেললেই কী আর না খেললেই বা কী?
শচীনের এই চতুর্থ ইনিংসের গড় নিয়ে আরও একটু ধাক্কাধাক্কি করা যাক। কেউ কেউ বলতে চাবেন যে, শচীনের চতুর্থ ইনিংসে খারাপ করার মূল কারণ টেস্টের শেষ দিনের উইকেটের স্পিন সামলাতে না পারা। মেনে নিলাম। এখন দেখার বিষয় স্পিন পিচ কোথায় বেশি তৈরি হচ্ছে? অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা না কি ভারতে? অবশ্যই বাকি ২ দেশের থেকে ভারতের পিচ বেশি স্পিন সহায়ক। কিন্তু শচীনের গড় তো ভারতের মাটিতে অনেক বেশি। ভারতের মাটিতে শচীনের চতুর্থ ইনিংস গড় যেখানে ৪৭.৪৭ সেখানে দক্ষিণ আফ্রিকায় তা মাত্র ১২.৫০। যেই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে শচীন সবথেকে বেশি সফল, সেই অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে শচীনের গড় ২০.৩৩। ভারতের বাইরে বাকি সব দেশ হিসাব করলেও শচীনের গড় মাত্র ২৮.৯২।
শচীন তার ক্যারিয়ার জুড়ে পেসারদের বিপক্ষেই দুর্বল ছিলেন, এই জায়গাতেও
একই। চতুর্থ ইনিংসে পেসারদের বলে আউট হয়েছেন ২৪ বার যেখানে স্পিনারদের বিপক্ষে ১৭ বার। স্পিনারদের বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পরে ফিরেছেন মাত্র ৬ বার। আনুপাতিক হিসেবে অবশ্য এই ২৪:১৭ অন্যান্য সময়ের থেকে অনেকটাই কাছাকাছি।
আমার এই লেখাটুকুর পেছনের কারণ শচীনের এই বিষয়টিকে অস্বীকার করা না, কিংবা শচীনকে খুব বাজে প্লেয়ার হিসেবে প্রমাণ করাও না; বরং এটাই বুঝানো যে, শচীন এখানে তার পুরো ক্যারিয়ারের মতো উজ্জ্বল না থাকলেও তেমন কিছু যায় আসে না, আরও অনেক গ্রেটদের গড়ও এর থেকে অনেক কম। তারা কেউই ফেলনা না। এই একটা ইস্যু দিয়ে শচীনকে ক্রিকেট ইতিহাসের সেরাদের একজন বলতে কার্পন্য করার কোনো মানেই থাকে না…
এই লেখাটি পাঠগৃহ নেটওয়ার্কের 'মোঃ রবিউল মোল্লা'র লেখা "শচীন রমেশ: এক ক্রিকেট সাম্রাজ্য" নামক ই-বুকের অংশ।
শচীনের চতুর্থ ইনিংসের ব্যাটিং ব্যর্থতা।
Tags:
Sachin