শচীন: অভিষেকের পথে, অভিষেকের আগে

শচীন রমেশ টেন্ডুলকার জাতীয় দলের জার্সি গায়ে জড়িয়েছিলেন মাত্র ১৬ বছর বয়সে। ২৪ বছর ধরে একটু একটু করে ঋদ্ধ করেছেন সাম্রাজ্য। এই ক্যারিয়ার শুরুর আগে ক্রিকেটার শচীনের ৬টি মাত্র ঘটনা তুলে ধরব এ অধ্যায়ে।

অভিষেকের আগে শচীন।

১৯৮৭

ক) ফাস্ট বোলার শচীন

শচীনের নাম নিলে ব্যাটার শচীনের ছবিটাই ভেসে ওঠে আমাদের সামনে। বোলার শচীনের কথা চিন্তা করলে মাথায় আসবে একজন পার্ট টাইম স্পিনারের কথা। কিন্তু ফাস্ট বোলার শচীন...? 

১৯৮৭ সালের ঘটনা। অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তি বোলার ডেনিস লিলি তখন চেন্নাইয়ের এমআরএফ পেস ফাউন্ডেশনের হেড কোচ। সেই পেস ফাউন্ডেশন আয়োজন করলো পেসার হান্টের, ওঠতি বোলারদের নাম চাওয়া হলো বিভিন্ন জনের কাছে। কিংবদন্তি ক্রিকেট কোচ ভাসু পরঞ্জপে নাম পাঠিয়ে দিলেন শচীনের।

তারপর? না, ফাস্টবোলার হয়ে উঠা হয়নি। উচ্চতার কারণে বাদ পরেন শুরুতেই, ব্যাটিং-এ মনোযোগ বাড়াতে বলেন লিলি।

খ) পাকিস্তানের হয়ে ভারতের বিপক্ষে মাঠে নামা

কি, আশ্চর্য? ঘটনাটা অনেকেরই জানা থাকার কথা, তবে যাদের জানা নেই তাদের জন্য অবাক হওয়ার মতোই বিষয়। শচীন আবার কবে পাকিস্তানে গেলো? পাকিস্তানের হয়েই বা কেন মাঠে নামলো? সেটাও আবার একেবারে নিজ দেশের বিপক্ষে!

অবাক হওয়ার আসলে তেমন কিছু নেই। ১৯৮৭ সালে ভারতের মুম্বাইয়ে একটি চ্যারিটি ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিলো দুই চির-প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত আর পাকিস্তান। পাকিস্তান দলের দুই প্লেয়ার জাবেদ মিয়াদাঁদ ও আব্দুল কাদির হোটেলের উদ্দেশ্যে মাঠ ছাড়লে পাকিস্তান অধিনায়ক ইমরান খান ২ জন সাবস্টিটিউট ফিল্ডার চান। সেই দুজনেরই একজন ছিলো শচীন রমেশ টেন্ডুলকার, ফিল্ডিং করেছিলেন ওয়াইড লং অনে। শচীনের ভাষ্যমতে, সেদিন লং অনের পরিবর্তে মিড অনে থাকলেই কপিল দেবের ক্যাচটাও নিয়ে নিতে পারতেন তিনি।


গ) সুনীল গাভাস্কারের সাথে ড্রেসিং রুম শেয়ারের সুযোগ হাতছাড়া

১৯৮৭ এর ১৪ই নভেম্বর, শচীন জায়গা পেলেন রঞ্জি ট্রফির মুম্বাই স্কোয়াডে। এই স্কোয়াড ঘোষণার কিছুদিন আগেই '৮৭ বিশ্বকাপ শেষে গাভাস্কার সব ধরনের ক্রিকেট থেকে অবসরে যান। শচীনের আক্ষেপটা সেখানেই। একটুর জন্য পারলেন না। যদিও, স্কোয়াডে ডাক পেলেও প্লেয়িং ইলেভেনে সে যাত্রায় শচীনের থাকা হয়নি একবারও।


১৯৮৮

ক) শচীন - বিনোদ - ৬৬৪

ফেব্রুয়ারি ১৯৮৮, হ্যারিস শিল্ডের সেমি ফাইনালে শচীনরা মুখোমুখি সেন্ট জাভিয়ারের। ৩ দিনের ম্যাচ, কোচের আদেশ অমান্য করে ইনিংস ডিক্লেয়ার না করা শচীন আর বিনোদ গড়েন ৬৬৪ রানের পার্টনারশিপ, সে সময়ের বিশ্ব ক্রিকেটের যে কোনো ফরমেটেই এর উপর কোনো পার্টনারশিপ ছিলোনা। শচীনের রান ছিলো ৩২৬, আর বিনোদের মোট ৩৪৯। রমাকান্ত আর্চেকারের কাছে লাঞ্চের পর আর একটা মাত্র ওভার খেলতে চাওয়ার সাহস দেখায়নি বিনোদ। ফলাফল, বাকি একটা রান আর করা হয়নি বিনোদের, অপরাজিতই থেকে গেছে ৩৪৯ রানেই।

শচীন ও বিনোদ কাম্বলির ৬৬৪ রান
সেই ম্যাচের একটি স্থিরচিত্র (Image Source: Twitter/Vinod Kambli)

খ) রঞ্জি ট্রফি: অভিষেকেই বাজিমাত

ওই বছরের ১০ ডিসেম্বর গুজরাটের বিপক্ষের ম্যাচ দিয়ে রঞ্জি ট্রফিতে অভিষেক ঘটে শচীন রমেশ টেন্ডুলকারের। অভিষেক ম্যাচেই শতরান করে সবচেয়ে কমবয়সী ভারতীয় ক্রিকেটার হিসেবে ফার্স্ট ক্লাশ ক্রিকেটে অভিষেকে সেঞ্চুরির রেকর্ড নিজের করে নেয়া শচীন ৭ ম্যাচে ৬ অর্ধশতক আর ৬৪.৭৭ গড়ে সেবার মুম্বাই দলের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হয়ে সিজন শেষ করে। মুম্বাই বাদ পরে সেমি ফাইনাল থেকে।


১৯৮৯

ক) জাতীয় দলের স্কোয়াডে অন্তর্ভূক্তি

রঞ্জি ট্রফির পারফরমেন্সের কল্যাণে ১৯৮৯ সালের ইরানি ট্রফিতে সুযোগ পায় ১৬ বছরের শচীন।  রঞ্জি ট্রফি চ্যাম্পিয়ন দিল্লির বিপক্ষে রেস্ট অব ইন্ডিয়ার হয়ে খেলে শচীন। রঞ্জি ট্রফির মতো ইরানি ট্রফিতেও প্রথম ম্যাচে সেঞ্চুরি করে বসে সে। আর এই ম্যাচ শেষ হওয়ার আগেই ঘোষণা হয় ভারত-পাকিস্তান সিরিজের স্কোয়াড যেখানে প্রথমবারের মতো জায়গা করে নেয় ১৬ বছর বয়সী এই ক্রিকেট সাম্রাজ্যের সম্রাট...

... ১৯৯১ সালের ১১ জানুয়ারি দিলীপ ট্রফিতে নিজের অভিষেক ম্যাচে ইস্ট জোনের বিপক্ষে ওয়েস্ট জোনের হয়ে ১৫৯ রান করলে একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে রঞ্জি ট্রফি, ইরানি ট্রফি এবং দিলীপ ট্রফির অভিষেক ম্যাচে সেঞ্চুরি করার রেকর্ড গড়েন শচীন রমেশ টেন্ডুলকার।


এই লেখাটি পাঠগৃহ নেটওয়ার্কের 'মোঃ রবিউল মোল্লা'র লেখা "শচীন রমেশ: এক ক্রিকেট সাম্রাজ্য" নামক ই-বুকের অংশ।
শচীন কবে পাকিস্তানের হয়ে মাঠে নেমেছিলো? শচীন প্রথমবার দলে ডাক পান কবে? স্কুল ক্রিকেটে শচীনের ৬৬৪ রানের পার্টনারশিপের গল্প। অভিষেকের আগে শচীন।
Md. Rabiul Mollah

Okay! So here I'm Md. Rabiul Mollah from Pathgriho Network. I'm currently a student of B.Sc in Textile Engineering Management at Bangladesh University of Textiles. facebook instagram github twitter linkedin

Previous Post Next Post

এই লেখাটি আপনার সোশ্যাল মিডিয়া ওয়ালে শেয়ার করুন 😇 হয়তো এমনও হতে পারে আপনার শেয়ার করা এই লেখাটির মাধ্যমে অন্য কেউ উপকৃত হচ্ছে! এবং কারো উপকার করার থেকে ভাল আর কি হতে পারে?🥺