একদিনের ক্রিকেটের মতো সাদা পোশাকের ক্রিকেটেও সবথেকে বেশি ম্যাচ খেলা ক্রিকেটারের নাম শচীন রমেশ টেন্ডুলকার। ২০০টি আন্তর্জাতিক টেস্ট ম্যাচ খেলা শচীনের পরে থাকা রিকি পন্টিং আর স্টিভ ওয়াহ ম্যাচ খেলেছেন ১৬৮টি করে। সবথেকে বেশি সংখ্যক ম্যাচ খেলে সবথেকে বেশি রানও তো শচীনই সংগ্রহ করবে। ২০০ ম্যাচে শচীনের সংগ্রহটা মোটমাট ১৫ হাজার ৯২১, গড় ৫৩.৭৮। শচীনের এই ১৫,৯২১ রানের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান যার তিনি রিকি পন্টিং আর তার সংগ্রহ ১৩,৩৭৮। এইতো গেলো সোজাসাপ্টা পরিসংখ্যান। এবার একটু পরিসংখ্যানের সমুদ্রে ডুব দেয়া যাক।
২০১০ সালে এক ক্যালেন্ডার ইয়ারে শচীনের সর্বোচ্চ রান ১৫৬২ যা এক ক্যালেন্ডার ইয়ারে সর্বোচ্চ রানের তালিকায় ৫ম। শচীনের থেকে ২২৬ রান বেশি নিয়ে সবার উপরে পাকিস্তানের মোহাম্মাদ ইউসুফ, এক্ষেত্রে ইউসুফ শচীনের থেকে ৪ ইনিংস কম খেলেছেন।
টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বোচ্চ ৫১টি সেঞ্চুরির মালিক শচীনের আছে ৭ম সর্বোচ্চ ৬টি ডবল হান্ড্রেড, এক ক্যালেন্ডার ইয়ারে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৭ট শতক। সর্বকনিষ্ঠ ক্রিকেটার হিসেবে টেস্ট শতক আছে মোহাম্মদ আশরাফুলের, শচীন এই তালিকায় ৩য়। সর্বোচ্চ শতকের সাথে সর্বোচ্চ ১১৯টি অর্শশতকের মালিকও এই শচীন, সাথে ওডিআইয়ের মতো টেস্টেও সবথেকে বেশিবার ৯০ থেকে ৯৯ রানে আউট হওয়া ব্যাটারও তিনিই।
সময়ের হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে শচীনের ক্যারিয়ারের সেরা সময় কেটেছে ১৯৯৭ থেকে ২০০২ পর্যন্ত। এ সময়ে শচীন ৫৯টি ম্যাচ খেলেছেন, ৫৭০৫ রান করেছেন ৬৩.৩৮ গড়ে। এসময়ে শচীনের টেস্ট শতক ২১টি আর অর্ধশতক ২০টি। অর্থাৎ, এই সময়কালে প্রতি ২.৮১ ম্যাচে শচীন একটি করে সেঞ্চুরি করেছেন। এই সময়টাতে শচীন শুধু নিজের ক্যারিয়ারেরই সেরা না, বরং অন্য যেকোনো টেস্ট ব্যাটারের থেকেও সেরা ছিলেন।
১৯৯৭ এর জানুয়ারি থেকে ২০০২ এর ডিসেম্বর পর্যন্ত শচীন রমেশ টেন্ডুলকারের গড় ছিলো ওই সময়ে খেলা অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার, ম্যাথু হেইডেন, রাহুল দ্রাবিড়, জ্যাক ক্যালিস, ইনজামাম-উল-হক, অরবিন্দ ডি সিলভাদের থেকে বেশি। সর্বোচ্চ গড় যেখানে শচীনের ৬৩.৩৮ সেখানে ২য় সর্বোচ্চ গড় ছিলো যেই অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারের, তার গড় ছিলো ৫৬.৭৮।
প্রতিপক্ষ বিবেচনায় শচীনের সবথেকে বেশি গড় বাংলাদেশের বিপক্ষে। ৭ ম্যাচে ৯ ইনিংসে ৩ বার নট আউটে গড় ১৩৬.৬৬। অন্তত ১০ ম্যাচ খেলেছে এমন প্রতিপক্ষদের মধ্য থেকে সবথেকে বেশি ৬০.৪৫ গড় শ্রীলংকার বিপক্ষে।
শচীন যে প্রতিপক্ষের বিপক্ষে সবথেকে বেশি ম্যাচ খেলেছেন তার নাম অস্ট্রেলিয়া। অজিদের বিপক্ষে ৩৯ ম্যাচ খেলেন শচীন যার মধ্যে ১৯টি ভারতে আর ২০টি অস্ট্রেলিয়ায়। দুই জায়গাতেই শচীনের পারফরমেন্স প্রায় একই। ১৯৯০ এর পর থেকে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অন্তত ১০ টেস্ট খেলেছে এমন ক্রিকেটাদের মধ্যে হিসাব করলে দেখা যাবে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সর্বোচ্চ টেস্ট এভারেজ শচীনেরই। শচীনের ৫৫.০০ গড়ের আগে আছে ইউনিস খানের ৫৭.৪০।
টেস্টে শচীনের হোম আর অ্যাওয়ে পারফরমেন্সের মধ্যে খুব বেশি পার্থক্য নেই। হোমে ৯৪ ম্যাচের ১৫৩ ইনিংসে সংগ্রহ যেখানে ৫২.৬৭ গড়ে ৭২১৬, সেখানে অ্যাওয়েতে ১২ ম্যাচ বেশি খেলে ৫৪.৭৪ গড়ে মোট সংগ্রহ ৮৭০৫ রান। শচীন টেন্ডুলকার তার টেস্ট ক্যারিয়ারে চার মেরেছেন ২০৫৮টিরও বেশি, ২ নাম্বারে থাকা দ্রাবিড়ের চারের এর সংখ্যা ১৬৫৪।
শচীনের দুর্বলতা পেস বলে, সেটা আবার ডানহাতি পেস বোলার হলে তো কথাই নেই- এটা তো ওডিআই ক্যারিয়ার নিয়ে কথা বলতে গিয়েই জানিয়েছিলাম। টেস্টেও এর ব্যতিক্রম না, ১৯১ বার আউট হয়েছেন পেস বোলারদের বলে যার মধ্যে ১৭০ বারই ডান হাতি পেস বোলার। ৯ রানের কম করে টেস্টে আউট হয়েছেন ৭৬ বার। টেস্টে সবথেকে বেশি ৯ বার ফিরেছেন জেমস অ্যান্ডারসনের বলে, ৮ বার ফিরিয়েছেন মুত্তিয়া মুরালিধরন।
অসাধারণ এক ক্যারিয়ারের শেষটা এতোটাই সমৃদ্ধ ছিলো যে, বড় কোনো স্ক্রিপ্ট রাইটারদের স্ক্রিপ্টও এতোটা পরিপূর্ণ থাকে না। তাইতো, শচীনের ক্যারিয়ার নিয়ে ব্রায়ান লারা বলেছিলেন,
“He has scripted the greatest ever career.”
কথাটা কথার কথা না, অনুভব করার মতোই কিছু একটা।