৯৯ তম শতক হয়েছে ২০১১ এর মার্চের ১২ তারিখে, বিশ্বকাপে, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। এরপর ১১টি টেস্ট আর ১২টি ওডিআই ম্যাচ খেলে ফেললেও শততম শতক ধরা দিচ্ছিলো না শচীনকে। বার বার একেবারে কাছে গিয়েও ফিরতে হয়েছে হতাশ হয়ে। ওডিআইতে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৮৫, টেস্টে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৯১, উইন্ডিজের বিপক্ষে ৯৪ রানের ইনিংসগুলো কেবলই হতাশা বাড়িয়েছে। ২৩টি ম্যাচ চলে গেলো; এখনো স্বপ্নই রয়ে গেলো ১০০টি আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরি কেউ একজন ছুঁয়ে দেখবে এমন ভাবনাটা। কবে আসবে সেই দিনটা, যেদিন ক্রিকেট নিজে সমৃদ্ধ হবে কোনো এক ক্রিকেটারের কীর্তিতে? অপেক্ষার পর্ব আর কতটা লম্বা? সমর্থকরা ততদিনে ব্যাকুল।
প্রত্যেক ম্যাচের শুরুতেই সমর্থকদের চিন্তা জুড়ে থাকে শচীনের একশোতম শতকটি। বহু কষ্ট করে স্টেডিয়ামে প্রবেশ করা প্রত্যেকের ভেতরেই বিশ্বাস থাকে ‘এই বুঝি আমি শততম শতকটি স্টেডিয়ামে বসেই দেখে ফেললাম।‘ টিভি সেটের সামনেও প্রতি ম্যাচে ভারত দলের ব্যাটিং শুরুর আগেই বসে পড়েন সমর্থকরা সেই একই আশা নিয়ে। শচীনের নিজের ভেতরেও তো এই একটাই আশা। শততম শতকটিতো পেতেই হবে।
এশিয়া কাপ ২০১২, ঢাকায় বসেছে সেবারের আসর। ভারতের প্রথম ম্যাচে ভারত মুখোমুখি শ্রীলংকার। প্রথমে ব্যাট করে গৌতম গাম্ভির আর ভিরাট কোহলি সেঞ্চুরি করলেও শচীন ফিরে যান ১৯ বলে মাত্র ৬ রান করে।
পরের ম্যাচ স্বাগতিক বাংলাদেশের বিপক্ষে। টস হেরে ব্যাটিংয়ে ভারত। ভারত গৌতম গাম্ভিরের উইকেট হারায় দলীয় ২৫ রানেই। ২য় উইকেট জুটিতে ভিরাট কোহলির সাথে শচীন টেন্ডুলকারের ১৪৮ রানের জুটি, যেখানে শচীনের অবদান ৭৫। এর মাধ্যমেই শচীনের হয়ে গেছে ৮৭ রান। আর ১৩টা রান হলেই লেখা হয়ে যাবে নতুন এক ইতিহাস।
পরের ১২ রানের জন্য শচীনের খেলা বলগুলোর স্কোর ছিলো: ০, ১ (লেগ বাই), ১, ১, ০, ০, ১, ৪, ০, ১ (ওয়াইড), ১, ১, ১, ০, ১, ০, ০, ০, ১, ০, ০।
৪৪ তম ওভারের ৪র্থ বল। বল হাতে সাকিব আল হাসান। বাকিটা ক্রিকিনফোর ভাষ্যে,
“And he's finally done it! Clips it down to square leg and jogs the single, very subdued celebration, he must be mightily relieved but he's not showing it, removes his helmet, the Bangladesh fielder congratulate him, 100 international centuries - we may never see it emulated, well done Sachin! Take a bow.”
সেঞ্চুরির পর শচীন। (Image Source: BCCI) |
সেঞ্চুরি হয়ে গেলো। একদিনের ক্রিকেটে বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম, সব দল মিলিয়ে ৪৯তম আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সংখ্যাটা এখন ১০০!
শত বছরের ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোনো একজন ব্যাটার একশোটি আন্তর্জাতিক শতক করলেন। শচীন রমেশ টেন্ডুলকার; ক্রিকেটের সব কিছুই পেয়ে যাওয়া একজন। সাম্রাজ্যের সম্রাটও তো যা ইচ্ছা তা পায় না, শচীন সবই পেয়ে গেলো। সেই যে ১৬ বছর বয়স থেকে শুরু, এখনো চলছে। ডন ব্রাডম্যানকে না দেখার আফসোসটা এ প্রজন্ম কাটিয়ে নিলো শচীনকে দেখেই, তর্ক সাপেক্ষে শচীনই সেরা, তর্ক তুলে রাখলে শচীন অবশ্যই সেরাদের একজন; সেরাদের একজনও তো সেরাই। শচীনই সেরা তবে।