অনুচ্ছেদ ১: অপরের জন্য তুমি প্রাণ দাও
অপরের জন্য তুমি প্রাণ দাও, আমি তা বলতে চাইনে। অপরের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দুঃখ তুমি দূর কর। অপরকে একটুখানি সুখ দাও। অপরের সঙ্গে একটুখানি মিষ্টি কথা বল। পথের অসহায় মানুষটির দিকে একটু করুণ কটাক্ষ নিক্ষেপ করো, তাহলেই অনেক হবে। চরিত্রবান, মনুষ্যত্ব সম্পন্ন মানুষ নিজের চেয়ে পরের অভাবে বেশি অধীর হন, পরের দুঃখকে ঢেকে রাখতে গৌরব বোধ করেন। [এইচএসসি চট্টগ্রাম বোর্ড ২০০২, ঢাকা বোর্ড ২০০৯]
সারাংশ
নিজের জন্য সময় না দিয়ে, নিজের জীবন দিয়ে অন্য কারো উপকার করতে হবে- এমনটা কথা নয়। মানুষের সাথে ভালো আচরণ, তাদের ছোট ছোট প্রয়োজনে তাদের পাশে থেকেও মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটানো যায়। আদর্শবান ব্যক্তি অন্যকে সুখী করার মধ্যেই নিজের সুখ খুঁজে পান।
অনুচ্ছেদ ২: অভ্যাস ভয়ানক জিনিস
অভ্যাস ভয়ানক জিনিস- একে হঠাৎ স্বভাব থেকে তুলে ফেলা কঠিন। মানুষ হবার সাধনাতেও তােমাকে সহিষ্ণু হতে হবে। সত্যবাদী হতে চাও? তাহলে ঠিক করাে, সপ্তাহে অন্তত একদিন মিথ্যা বলবে না। ছ মাস ধরে এমনি করে নিজে সত্য কথা বলতে অভ্যাস করাে । তারপর এক শুভদিনে আর একবার প্রতিজ্ঞা করাে, সপ্তাহে তুমি দু দিন মিথ্যা বলবে না। এক বছর পরে দেখবে সত্য কথা বলা তােমার কাছে অনেকটা সহজ হয়ে পড়েছে। সাধনা করতে করতে এমন একদিন আসবে যখন ইচ্ছে করলেও মিথ্যা। বলতে পারবে না। নিজেকে মানুষ করার চেষ্টায় পাপ ও প্রবৃত্তির সঙ্গে সংগ্রামে তুমি হঠাৎ জয়ী হতে কখনাে ইচ্ছা করাে না, তাহলে সব পণ্ড হবে। [এইচএসসি বরিশাল বোর্ড ২০০২, দিনাজপুর বোর্ড ২০১০।]
সারাংশ
মানুষের নিজের স্বভাব থেকে বদঅভ্যাসগুলোকে চাইলেই হঠাৎ করে তুলে ফেলা সম্ভব না। বদঅভ্যাসগুলোকে ছাড়তে হলে চাই দীর্ঘদিনের অনুশীলন। দীর্ঘদিনের অনুশীলনে স্বভাব থেকে বদঅভ্যাসগুলো দূর করা যায় সহজে এবং চিরতরে।
অনুচ্ছেদ ৩: অতীতকে ভুলে যাও
অতীতকে ভুলে যাও। অতীতের দুশ্চিন্তার ভার অতীতকেই নিতে হবে। অতীতের কথা ভেবে ভেবে অনেক বোকাই মরেছে। আগামীকালের বোঝার সঙ্গে মিলে আজকের বোঝা সবচেয়ে বড় হয়ে দাঁড়ায়। ভবিষ্যৎকেও অতীতের মতো দৃঢ়ভাবে দূরে সরিয়ে দাও। আজই তো ভবিষ্যৎ-কাল বলে কিছু নেই। মানুষের মুক্তির দিন তো আজই। ভবিষ্যতের কথা যে ভাবতে বসে সে ভোগে শক্তিহীনতায়, মানসিক দুশ্চিন্তায় ও স্নায়ুবিক দুর্বলতায়। অতএব অতীতের এবং ভবিষ্যতের দরজায় আগল লাগাও, আর শুরু করো দৈনিক জীবন নিয়ে বাঁচতে। [এইচএসসি কুমিল্লা বোর্ড ২০০৫, রাজশাহী বোর্ড ২০০৯।]
সারাংশ
মানুষের কাছে বর্তমান সময়টাই সেরা সময়। অতীতের ব্যর্থতার কথা মনে নিয়ে বসে থেকে কল্যান লাভ হবে না। বর্তমানকে সঠিকভাবে কাজে লাগানোতেই মূল লাভ। কেননা, বর্তমান কর্মের উপরেই ভবিষ্যতের সফলতা অধিকতর নির্ভরশীল।
অনুচ্ছেদ ৪: আজকের দুনিয়াটা
আজকের দুনিয়াটা আশ্চর্যভাবে অর্থ বা বিত্তের ওপর নির্ভরশীল। লাভ ও লোভের দুর্নিবার গতি শুধু আগে যাওয়ার নেশায় লক্ষ্যহীন প্রচণ্ড বেগে আত্মবিনাশের পথে এগিয়ে চলেছে। মানুষ যদি এই মূঢ়তাকে জয় করতে না পারে, তবে মনুষ্যত্ব কথাটাই লোপ পেয়ে যাবে। মানুষের জীবন আজ এমন একপর্যায়ে এসে পৌঁছেছে, সেখান থেকে হয়তো নামার উপায় নেই, এবার ওঠার সিঁড়ি না খুঁজলেই নয়। ওঠার সিঁড়ি না খুঁজে পেলে আমাদের আত্মবিনাশ যে অনিবার্য, তাতে আর কোনো সন্দেহ থাকে না। [এইচএসসি, যশোর ২০১৭, দিনাজপুর ২০১৬, বরিশাল ২০০৯, ২০১১, কুমিল্লা ২০১৬, রাজশাহী ২০০৫, চট্টগ্রাম ২০০৫, ঢাকা ২০০৮।]
সারাংশ
বর্তমান সময়ের মানুষ অর্থ আর বিত্তের পেছনেই শুধু ছুটছে। যার ফলে মানুষের মনুষ্যত্ব আজ সর্বনাশের দ্বারপ্রান্তে উপনীত। বর্তমান সভ্যতার জন্য এক ভয়াবহ অশনি সংকেত এটি। এর থেকে মুক্তি পাওয়ার পথ খোঁজার এখনই সময়।
অনুচ্ছেদ ৫: ছাত্রজীবন আমাদের ভবিষ্যৎ
ছাত্রজীবন আমাদের ভবিষ্যৎ-জীবনের বীজ বপনের সময়। এ সময় যে যেমন বীজ বপন করবে, ভবিষ্যৎ-জীবনে সে সেরূপ ফল ভোগ করবে। এ সময় যদি আমরা নিষ্ঠার সঙ্গে জ্ঞানের অনুশীলন করে যাই তবে ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাময় হবে। আর যদি হেলায় সময় কাটিয়ে দেই, তাহলে জীবনের মহৎ উদ্দেশ্য ব্যর্থ হতে বাধ্য। যে শিক্ষা জীবন ও জীবিকার পথে কল্যাণকর, যে শিক্ষা মানুষকে উন্নত চরিত্রের অধিকারী করে, তাই সর্বোৎকৃষ্ট শিক্ষা। ছাত্রদের জীবন গঠনে শিক্ষকসমাজ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। তাঁদের সুষ্ঠু পরিচালনার মধ্যে দিয়েই ছাত্রদের জীবন গঠিত হয় এবং উন্মুক্ত হয় মহত্তর সম্ভাবনার পথ। [এইচএসসি কুমিল্লা ২০০২, বরিশাল ২০১০, যশোর ২০১১।]
সারাংশ
ভবিষ্যতের সফলতা লাভের প্রস্তুতির জন্য ছাত্রজীবন হচ্ছে সর্বোৎকৃষ্ট সময়। এ সময়ের যথাযথ ব্যবহার না করতে পারলে শিক্ষার্থীর জীবন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে পারে। আদর্শ চরিত্র গঠন ও প্রকৃত শিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে ছাত্রজীবনকে সম্ভাবনাময় করে তুলতে শিক্ষকের ভূমিকা অনেক বেশি গুরুত্ব বহন করে।