আপনি যদি বিজ্ঞান বিভাগে পড়ালেখা করে থাকেন তবে সাইন্টিফিক ক্যালকুলেটর আপনার জন্য দৈনন্দিন ব্যবহার্য একটি জিনিসের মতই। সাইন্টিফিক ক্যালকুলেটর ছাড়া অনেক বড় বড় হিসাব করাটা বেশ কঠিন। এছাড়াও বিজ্ঞান বিষয়ে পড়তে হলে সাইন্টিফিক ক্যালকুলেটর এর গুরুত্ব অপরিসীম। আপনি যদি এই মুহূর্তে নবম-দশম শ্রেণীতে পড়ালেখা করে থাকেন তবে এখন থেকেই সাইন্টিফিক ক্যালকুলেটর সম্পর্কে ভালো ধারণা অর্জন করাটা আপনাকে ভবিষ্যতে বিজ্ঞান বিভাগে ভালো করার জন্য সাহায্য করবে।
আমরা যারা নতুন সাইন্টিফিক ক্যালকুলেটর কিনতে চাই তাদের সবসময় বেশকিছু কনফিউশনের মধ্যে পরতে হয়। এরমধ্যে মূল ব্যাপারটা হচ্ছে কোন সাইন্টিফিক ক্যালকুলেটরটা কিনব এবং কোনটা আসলে ভালো হবে আর কীভাবেই বা নতুন সাইন্টিফিক ক্যালকুলেটর আমরা কেনার ক্ষেত্রে আসল কিনা নকল সেটা বুঝতে পারবো?
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা এই সকল বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। আপনি এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণভাবে পড়ার পরে বুঝতে পারবেন কোন ক্যালকুলেটরটি আপনার জন্য প্রয়োজন এবং কিভাবে আপনি ক্যালকুলেটর কেনার ক্ষেত্রে আসল নকল বুঝবেন। এছাড়া অনলাইন থেকে ভালো মানের ক্যালকুলেটর কেনার জন্য আমরা ভালো কিছু লিংক আপনাদের সাথে শেয়ার করব আর ক্যালকুলেটর এর দাম কেমন হতে পারে সেটা সম্পর্কে আমরা ধারণা দেব।
কোন সায়েন্টিফিক ক্যালকুলেটরের কিনবেন
আপনি যদি একটি দোকানে গিয়ে সাইন্টিফিক ক্যালকুলেটর এর কথা বলেন তবে ভালো দোকান হলে তারা আপনাকে অনেকগুলো সাইন্টিফিক ক্যালকুলেটর দেখিয়ে আপনার পছন্দসই ক্যালকুলেটর বেছে নিতে বলবে। প্রকৃতপক্ষে অসংখ্য মডেলের সাইন্টিফিক ক্যালকুলেটর রয়েছে তবে এই সবগুলো সাইন্টিফিক ক্যালকুলেটর কিন্তু আমরা পরীক্ষা ব্যবহার করতে পারব না। আপনি যদি নবম-দশম শ্রেণীতে পড়েন এবং সামনে এসএসসি (SSC) পরীক্ষা দেবেন এরকম হয়ে থাকেন তবে এই ক্ষেত্রে আপনাকে Non-Programmable Scientific Calculator ব্যবহার করতে হবে।
শিক্ষা বোর্ড থেকে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য নির্দেশনাবলী ভিতর অধিকাংশ ক্ষেত্রে Non-Programmable Scientific Calculator কথাটা উল্লেখ করে দেওয়া থাকে। এছাড়া আমরা এই ক্যালকুলেটর গুলো ব্যবহার করব কেননা এই বয়সে এই শ্রেণীতে আমাদের থেকে শক্তিশালী ক্যালকুলেটরের প্রয়োজন নেই।
ঠিক একইভাবে যারা একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীতে পড়ালেখা করছেন তাদের ক্ষেত্রেও এই একই ধরনের (Non-Programmable Scientific Calculator) ক্যালকুলেটর ব্যবহার করার জন্যই বলা হয়ে থাকে। এইচএসসি (HSC) পরীক্ষার হলে যাওয়ার ক্ষেত্রে নন প্রোগ্রামেবল ক্যালকুলেটর নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়ে থাকে। এর মূল কারণ হচ্ছে প্রোগ্রামেবল ক্যালকুলেটর গুলোর মধ্যে বিভিন্ন বিষয় কপি করে নিয়ে যাওয়া যেটা সম্পূর্ণভাবে অবৈধ এবং পরীক্ষার ক্ষেত্রে এটা একটি দণ্ডনীয় অপরাধ। অবশ্যই আমাদের এই ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে।
বাংলাদেশে ও ভারতে সবথেকে বেশি CASIO সায়েন্টিফিক ক্যালকুলেটর ব্যবহার করা হয়ে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে অন্য ব্র্যান্ডের ক্যালকুলেটর ব্যবহার করাটা একটু কষ্টকর হয়ে যায়। কেননা শিক্ষকরাও অধিকাংশ ক্ষেত্রে ক্যাসিও ক্যালকুলেটর ব্যবহার করে থাকেন যার কারণে তারা অন্য ক্যালকুলেটর বিষয়ে কোনো সমস্যা সমাধানে আপনাদের দিতে পারার সম্ভাবনা খুবই কম।
নিম্নে আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে সবথেকে বহুল ব্যবহৃত এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষার জন্য গ্রহণযোগ্য কিছু Non-Programmable Scientific Calculator এর মডেল নাম দিয়ে দিচ্ছি।
সিরিজের নাম | মডেল এর নাম |
---|---|
MS Series (কালো ২ লাইন ডিসপ্লে নামে পরিচিত) | fx-991MS / 570MS / 115MS / 100MS / 95MS / 85MS / 350MS / 82MS |
ES PLUS Series (সাদা তবে এখন কালোও আছে) | fx-991ES plus এবং fx-570ES plus |
ES PLUS Series (কালো, নতুনভাবে বাজারে আনাগুলোও কালো) | fx-350ES plus, fx-95ES plus, fx-85ES plus, fx-82ES plus |
ES series (সাদা ও সোজা, বাকানো অংশ খুব সামান্য) | fx-991 ES, fx-570 ES এবং fx-100 ES |
ClassWiz Series (কালো Arrow key গুলো সিলভার রঙের) | fx-991 EX এবং fx-570 EX |
দেশের অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্যালকুলেটর গুলোকে সাদরে গ্রহণ করা হয়ে থাকে এবং অধিকাংশ শিক্ষকদের ক্ষেত্রে এই ক্যালকুলেটরগুলো পছন্দের। যেহেতু এগুলো কোন ধরনের প্রোগ্রাম করা যায় না সে ক্ষেত্রে এসএসসি এবং এইচএসসি হলে নিয়ে গেলে কোন ধরনের সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
ইউনিভার্সিটির ক্ষেত্রে ক্যালকুলেটরে ব্যাপারটা একটু অন্যরকম হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় ইঞ্জিনিয়ারিং স্টুডেন্টদের ক্ষেত্রে এমন ধরনের ক্যালকুলেটর প্রয়োজন যেটাতে গ্রাফ তৈরি করা যেতে পারে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এ কাজগুলো এখন কম্পিউটারের মাধ্যমে করা হয়ে থাকে তাই মোটামুটি মানের সাধারন Scientific Calculator থাকলেই চলে। স্কুল-কলেজে ব্যবহার করা সেই Scientific Calculator থাকলেই চলে।
তবে আমাদের দেশে একটি ভুল ধারণা রয়েছে যে ৮ম শ্রেণীতে উঠলেই আমাদেরকে সাইন্টিফিক ক্যালকুলেটর কিনতে হবে। এটি একটি ভুল ধারণা। প্রকৃতপক্ষে JSC পরীক্ষায় দেশের অনেক নামিদামি প্রতিষ্ঠান তাদের হলে সাইন্টিফিক ক্যালকুলেটর এলাও করেন না। অর্থাৎ এ থেকে বুঝা যায় ক্লাস এইটে সাইন্টিফিক ক্যালকুলেটর কিনতে হবে এমন ভুল ধারণা পোষণ করা যাবে না।
সায়েন্টিফিক ক্যালকুলেটরের দাম
বাজারে আপনি বিভিন্ন দামের সায়েন্টিফিক ক্যালকুলেটর পাবেন। তবে ভালো মানে আসল সায়েন্টিফিক ক্যালকুলেটরের দাম সবসময় একটু বেশি হয়ে থাকে। এর কারন এগুলো বাহির এর দেশ থেকে আনা হয়। এছাড়া ভালো মানের মাল দিয়ে তৈরী করা হয় বলে এর দাম বেশি হয়। দাম বেশি হলেও এগুলো টিকে অনেকদিন।
এমনিতে বাজারে 300 থেকে 400 টাকার মধ্যে অনেক ক্যালকুলেটর পাওয়া যায় এগুলো প্রকৃতপক্ষে আপনাকে তেমন ভাল সার্ভিস দিবে না। এগুলো হিসাব করতে পারবে কিন্তু টেকসই এর দিক থেকে এগুলো একদম ভালো না। এছাড়াও এগুলো পরীক্ষার হলে নষ্ট হয়ে আরো সমস্যা করতে পারে।
একটি ভালো মানের সাইন্টিফিক ক্যালকুলেটর দিয়ে স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটি পর্যন্ত পার করে দেওয়ার যায়। এ জন্য ভালো মানের একটি সাইন্টিফিক ক্যালকুলেটর কেনা বুদ্ধিমানের কাজ। তবে আপনার যদি এই মুহূর্তে আর্থিক সমস্যা চলে তবে লোকাল মার্কেটে কম টাকার মধ্যে আপনি মোটামুটি মানের নকল ক্যালকুলেটরগুলো পাবেন। তবে সে ক্ষেত্রে দেখে শুনে একটু ভালো মানের নকল প্রোডাক্ট কেনাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। এ ধরনের Fx-Ms ও Fx-ES সিরিজের ক্যালকুলেটর গুলোর দাম ৩০০ থেকে ৪০০ টাকার মধ্যে হয়ে থাকে। আর Fx-ES Plus সিরিজের ক্যালকুলেটর গুলোর দাম ৫০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকার মধ্যে থাকে।
আসল এবং ওয়ারেন্টি সহ যদি ভালো মানের ক্যালকুলেটর আপনি চান তবে নিম্নে আমাদের দেওয়া লিঙ্ক গুলো চেক করতে পারেন। এই লিংকগুলো BDSHOP থেকে দেওয়া হয়েছে এবং এগুলো Affiliate লিঙ্ক।
Casio Fx-991ES PLUS Non-Programmable Scientific Calculator (2nd Edition) দাম ১৫৮০ টাকা
Casio FX-991MS Scientific Calculator দাম ১৩০০ টাকা
Original Casio Fx-991EX Scientific Calculator (Classwiz Series) দাম ১৬৫০ টাকা
এ প্রোডাক্টগুলো ইন্টারন্যাশনাল হওয়ার কারণে দাম উঠা-নামা করতে পারে তাই উপরোক্ত উল্লেখিত দামের বাহিরেও হয়তো বেশি যেমন থাকতে পারে আবার কম দামে থাকতে পারে। তবে আমরা এতটুকু বলতে পারি যে উক্ত সায়েন্টিফিক ক্যালকুলেটরগুলো মানে ও গুনে অনেক ভালো। আর ওয়ারেন্টি থাকার কারণে যে কোন সময় প্রোডাক্টের সমস্যা থাকলে তা আপনি ঠিক করে নিতে পারবেন এবং প্রতিটি প্রোডাক্ট এ ৩ বছরের ওয়ারেন্টি দেওয়া রয়েছে।
শেষ কিছু কথা
আপনি যদি বিজ্ঞান বা ব্যবসা শিক্ষা নিয়ে পড়ালেখা করে থাকেন তবে সাইন্টিফিক ক্যালকুলেটর আপনার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি স্টেশনারি। এটি যেমন আপনাকে পারফেক্ট ভাবে হিসাব করতে শিখাবে ঠিক তেমনি ভাবে বড় বড় হিসাব করার ক্ষেত্রে সময় বাঁচাবে। তবে ভর্তি পরীক্ষার সময় সাইন্টিফিক ক্যালকুলেটর অনেক ক্ষেত্রে নিয়ে যাওয়া যায় না এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ক্যালকুলেটর ভর্তি পরীক্ষার সময় নেওয়া যায় না। এক্ষেত্রে অবশ্যই কিভাবে হিসাব গুলো করা হয় সে সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে এবং ক্যালকুলেটর ছাড়া যাতে তাড়াতাড়ি হিসাব করতে পারেন এমনভাবে নিজেকে তৈরি করতে হবে।
আরো পড়ুন: Scientific calculator tips and tricks in Bangla
এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষার ক্ষেত্রে ক্যালকুলেটর এমসিকিউ কোশ্চেনগুলো সলভ করার ক্ষেত্রে অনেক সাহায্য করে থাকে। এর সাহায্যে বড় বড় অংকগুলো কে খুব সহজে করে ফেলা যায় যাতে করে এক মিনিট সময় থাকা সেই MCQ তাড়াতাড়ি শেষ করা যায়।
যদি আপনার আর্থিক সমস্যা থাকে তবে দামি ক্যালকুলেটর নেওয়ার তেমন প্রয়োজন নেই। হয়তো আর্থিক সমস্যা আপনার ভবিষ্যতে নাও থাকতে পারে সে সময় আপনি ভালো ক্যালকুলেটর নিতে পারবেন। তবে পরিবারে অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে ভালো ক্যালকুলেটর কিনা খুব একটা যুক্তিসঙ্গত হবেনা। বরং মোটামুটি মানের একটি ক্যালকুলেটর আপনি বাজার থেকে কিনে নিয়ে নিজের লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারেন।
এই ছিল সাইন্টিফিক ক্যালকুলেটর বিষয়ে আমাদের এই আর্টিকেলটি। এরকম আরো আর্টিকেল পড়তে অবশ্যই আমাদের ওয়েবসাইট থেকে ঘুরে দেখুন। আশা করি আপনি আপনার পছন্দসই লেখা এখানে খুঁজে পাবেন।