সাহিত্য থেকে শুরু করে আমাদের দৈনন্দিন জীবন সব ক্ষেত্রে বাক্যের ব্যবহার আমাদের মনের ভাব প্রকাশ করার জন্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ ঠিক তেমনি ভাবে বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষা থেকে শুরু করে বিসিএস পরীক্ষা ও চাকরির পরীক্ষাতে এই অংশ থেকে বিভিন্ন প্রশ্ন আসতে দেখা যায়। এজন্য এই টপিকের গুরুত্ব আমাদের একাডেমিক লাইফ থেকে শুরু করে বাস্তব জীবন সবক্ষেত্রে অপরিসীম।
বাক্য কাকে বলে?
একাধিক শব্দ বা পদের সমন্বয়ে যদি কোন ব্যক্তি তার মনের ভাব সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ করতে পারেন তখন তাকে বাক্য বা Sentence বলে। বাক্যের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে কোন বক্তার মনের ভাবকে তুলে ধরা যাতে করে অন্য শ্রোতা তা বুঝতে পারে। অর্থাৎ বক্তার মনের সেই ভাবের সঙ্গে শ্রোতার মনে ভাবের সেতুবন্ধন তৈরি করা বাক্যের অন্যতম উদ্দেশ্য। বাক্যের পদ সমষ্টি অবশ্যই সুবিন্যাস্ত হতে হবে এবং বাক্যের অন্তর্গত বিভিন্ন পদ দ্বারা সম্মিলিত ভাবে একটি অখন্ড ভাব পূর্ণরূপে প্রকাশিত হওয়া প্রয়োজন।
বাক্যের গুণ কয়টি ও কি কি?
কতগুলো পদের সমষ্টিতে বাক্য গঠিত হলেও যেকোনো পদসমষ্টি বাক্য নয়। বাক্যের তিনটি গুণ থাকা প্রয়োজন যা না থাকলে পদসমষ্টি কখনও বাক্য হতে পারে না।
বাক্যের তিনটি গুণ হল:
১) আকাঙ্ক্ষা
২) আসত্তি
৩) যোগ্যতা
এই তিনটি গুণ ছাড়া একটি বাক্য গঠন হতে পারে না। এজন্য অবশ্যই বাক্য গঠনের ক্ষেত্রে উপরোক্ত তিনটি গুণের বিদ্যমান থাকাটা জরুরী। নিম্নে আমরা এগুলো সম্পর্কে ধারণা উপস্থাপন করছি।
আকাঙ্ক্ষা কাকে বলে?
একটি বাক্যে কি বোঝানো হচ্ছে সেটা বোঝার জন্য এক পদের পর অন্য পদ শোনার যে ইচ্ছা তাকে আকাঙ্ক্ষা বলে। একটি বাক্যে একজন বক্তা কি বুঝাতে চেয়েছেন সেটা বুঝার জন্য শ্রোতার এক পদের পর অন্য পদ শোনার যে আগ্রহ তৈরি হয় তাকে আকাঙ্ক্ষা বলে। এটিকে বুঝানোর জন্য আমরা একটি সহজ বাক্যের উদাহরণ দিতে পারি। ধরুন একটি বাক্যের কিছু অংশ বলা হয়েছে যেমন: "পৃথিবী সূর্যের চারদিকে" এতোটুকু অংশ থেকে কিন্তু বক্তা কি বুঝাতে চেয়েছেন সেটা সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা পাওয়া যায় না। অবশ্যই আমাদের জানার আগ্রহ জাগে যে সম্পূর্ণরূপে বক্তা কি বুঝাতে চেয়েছেন আর এই বিষয়টাকে মূলত বলা হয়ে থাকে আকাঙ্ক্ষা।
এক্ষেত্রে আমরা যদি বাক্যটিকে পূর্ণ বাক্য হিসেবে উপস্থাপন করতে চাই তবে অবশ্যই আমাদেরকে আকাঙ্ক্ষার নিবৃত্তি ঘটাতে হবে সেই ক্ষেত্রে পূর্ণাঙ্গ বাক্যটি হবে: "পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘোরে"।
আসত্তি কাকে বলে?
বাক্যের অর্থসঙ্গতি বজায় রাখার জন্য সুশৃংখলভাবে পদসমূহের যে বিন্যাস করা হয় তাকে আসত্তি বলে। সার্থক বাক্য গঠনের ক্ষেত্রে অবশ্যই পদ সমূহের বিন্যাস এমনভাবে হতে হবে যাতে করে বক্তা যা উপস্থাপন করতে চাইছেন তা যাতে শ্রোতার বোধগম্য হয়।
উদাহরণ হিসেবে আমরা একটি বাক্যকে উপস্থাপন করতে পারি যেমন: "আছে কলম আমার কালো একটি" যা থেকে আমরা ঠিকভাবে কিছু বুঝতে পারি না। অর্থাৎ সুশৃংখলভাবে পদসমূহের বিন্যাস করা হয়নি যার কারনে আমরা বাক্যের অর্থ বুঝতে পারিনি। এক্ষেত্রে আসত্তিসম্পূর্ণ বাক্যটি হবে: "আমার একটি লাল কলম আছে" যা আমাদের অর্থ সম্পর্কে ধারণা দেয়।
যোগ্যতা কাকে বলে?
বাক্যস্থিত পদসমূহের অন্তর্গত এবং ভাবগত মেলবন্ধনকে যোগ্যতা বলে। পদ সমষ্টির মধ্যে আকাঙ্ক্ষা ও আসত্তি উপস্থিতি থাকলেও সেটি বাক্য হবে না যদি না তার যোগ্যতা থাকে। একটি পদের সমষ্টি যদি এমন কোন অর্থ প্রকাশ করে যেটা বাস্তবে সম্ভব নয় বা যেটা ব্যাকরণ এর নিয়ম মেনে চলে না সেক্ষেত্রে সেই পদের সমষ্টি কখনোই বাক্য রূপে পরিপূর্ণভাবে গণ্য হতে পারেনা যাকে মূলত বাক্যের যোগ্যতা অভাব বলা হয়ে থাকে।
একটি সহজ উদাহরণের মাধ্যমে আমরা বাক্যের যোগ্যতা সম্পর্কে ধারণা পেতে পারি যেমন: "গরুগুলো ইলেকট্রিক তারের উপরে বসে আছে।" বাক্যটি একটি অযোগ্য বাক্য কারন গরুর ইলেকট্রিক তারের উপরে বসে বসে থাকাটা অবাস্তব তবে এর বিপরীতে যদি আমরা যোগ্যতাসম্পন্ন কোন বাক্যকে দাঁড় করাতে চাই তবে সেটি হতে পারে: "পাখিগুলো ইলেকট্রিক তারের উপরে বসে আছে।" যা কিনা বাস্তবভাবে সম্ভব।
বাক্য কত প্রকার?
গঠন অনুযায়ী বাক্য কে তিন ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। অর্থাৎ বাক্য তিন প্রকার যথা: সরল বাক্য, মিশ্র বা জটিল বাক্য, যৌগিক বাক্য। নিম্নে এদের সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
সরল বাক্য কাকে বলে?
যে বাক্যে একটি মাত্র কর্তা (উদ্দেশ্য) এবং একটি মাত্র সমাপিকা ক্রিয়া (বিধেয়) থাকে তাকে সরল বাক্য বলে। উদাহরন হিসেবে আমরা একটি বাক্যকে উপস্থাপন করতে পারি যেমন: "মাঠে ঘাস জন্মায়" যেখানে "ঘাস" উদ্দেশ্য এবং "জন্মায়" বিধেয়।
মিশ্র বা জটিল বাক্য কাকে বলে?
যে বাক্যে একটি প্রধান খন্ড বাক্যের এক বা একাধিক আশ্রিত বাক্য পরস্পর সাপেক্ষ ভাবে ব্যবহৃত হয় তাকে মিশ্র বা জটিল বাক্য বলে। উদাহরণ হিসেবে আমরা একটি বাক্য উল্লেখ করতে পারি যেমন: "যে পরিশ্রম করে, সে-ই সফলতা লাভ করে।" এক্ষেত্রে "যে পরিশ্রম করে," এই অংশটি আশ্রিত বাক্য আর "সে-ই সফলতা লাভ করে।" এই অংশটি প্রধান খন্ডবাক্য।
যৌগিক বাক্য কাকে বলে?
পরস্পর নিরপেক্ষ দুই বা ততোধিক সরল বা মিশ্র বাক্য মিলিত হয়ে একটি সম্পূর্ণ বাক্য গঠন করলে তাকে যৌগিক বাক্য বলে। যৌগিক বাক্যের অন্তর্গত নিরপেক্ষ বাক্যগুলো এবং, ও, কিন্তু, অথবা, অথচ, কিংবা, তথাপি প্রভৃতি অব্যয় দ্বারা সংযুক্ত থাকে। উদাহরণ হিসেবে একটি বাক্য আমরা উপস্থাপন করলাম: "যে পরিশ্রম করে, সে-ই সফলতা লাভ করে এবং সামনে এগিয়ে যায়।"
এইছিল বাক্য নিয়ে লেখা আমাদের এই আর্টিকেলটি। যদি ভালো লেগে থাকে তবে অবশ্যই আমাদের ওয়েবসাইটের আরো অন্যান্য আর্টিকেলগুলো দেখতে পারেন। আমরা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ইনফরমেটিভ আর্টিকেল পাবলিশ করে থাকি।