যেকোনো কিছু শিখতে গেলে অবশ্যই আমাদেরকে সময় দিতে হবে। সময় ও কঠোর অধ্যাবসায়ের মাধ্যমে আমরা কোন একটি জিনিস শিখতে পারি এবং যে জিনিসটা দ্বারা আমরা কোন কিছু তৈরি করতে পারি। কোন কিছু শিখতে হলে অবশ্যই আমাদেরকে ধাপে ধাপে এগোতে হবে। শুরুতেই আপনি প্রোগ্রামিং অথবা ওয়েব ডেভলপমেন্ট শিখে ফেসবুক, গুগোল, অ্যামাজনের মতো কোনো বড় প্রতিষ্ঠান তৈরি করতে পারবেন না। এর জন্য অবশ্যই আপনাকে সময় দিতে হবে এবং ধাপে ধাপে এগুতে হবে।
এই লেখাটির মাধ্যমে আমি আপনাদেরকে ওয়েব ডেভলপমেন্ট সম্পর্কে একটি সম্পূর্ণ গাইড লাইন দিতে চলেছি এবং এই লেখাটি পড়ার পরে আপনি বুঝতে পারবেন কিভাবে আপনাকে এই ক্যারিয়ার গড়ার জন্য এগিয়ে যেতে হবে। আপনাদের সুবিধার্থে এই লেখাটিতে ঝংকার মাহবুব ভাইয়ার একটি ভিডিও যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে যেটি আপনাদেরকে অনেক সাহায্য করবে।
ধাপ ১: এইচটিএমএল (HTML) শিখতে হবে
আমাদের শরীর গঠন করার জন্য হাড়ের গুরুত্ব যেমন অনেক বেশি ঠিক তেমনিভাবে ওয়েবসাইট তৈরি হওয়ার জন্য এইচটিএমএল এর গুরুত্ব অনেক বেশি। এটি বলতে গেলে একটি ওয়েবসাইটের গাঠনিক ভিত্তি। যেকোনো একটি ওয়েবসাইট তৈরি করার জন্য শুরুতেই আমাদেরকে সেই ওয়েবসাইটে এইচটিএমএল নিয়ে কাজ করতে হয়। এটি দ্বারা মূলত ওয়েবসাইটের মূল গঠনটি তৈরি করা হয়ে থাকে। অর্থাৎ ওয়েবসাইটের কোন অংশে কি থাকবে এবং কোন অংশ আগে থাকবে বা পরে থাকবে সেগুলোকে নির্ধারণ করার জন্য এই জিনিসটা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
ওয়েব ডেভলপমেন্ট শেখা শুরু করতে হলে অবশ্যই এইচটিএমএল সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। কেননা আপনি Front End Developer অথবা Back End Developer যাই হতে চান না কেন এইচটিএমএল (HTML) নিয়ে আপনাকে কাজ করতে হবেই।
এইচটিএমএল শেখার জন্য অবশ্যই আপনাকে HTML Tag List সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। অর্থাৎ কোনটির মাধ্যমে আসলে কি করা হয়ে থাকে সে সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে হবে। এর পরে আপনাকে বিভিন্ন আকার আকৃতি ওয়েবসাইট সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে হবে এবং সেগুলোকে তৈরি করার জন্য কোন লেআউট ব্যবহার করা হয় সেটা জানতে হবে এবং শিখতে হবে। এর জন্য w3school হতে পারে আপনার জন্য সেরা একটি প্ল্যাটফর্ম যেখানে আপনি খুব সহজে HTML সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য জানতে পারবেন এবং সেগুলোকে শিখতে পারবেন। এর সাথে সাথে বিভিন্ন প্র্যাকটিস করার মত হোমওয়ার্ক পেয়ে যাবেন এই ওয়েবসাইট এর মধ্যে।
ধাপ ২: সিএসএস (CSS) শিখতে হবে
আপনি যদি একজন front-end ডেভলপার হতে চান তবে অবশ্যই আপনাকে সিএসএস সম্পর্কে সম্পূর্ণ স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে। এর ফলে আপনি খুব সহজেই অনেক সুন্দর সুন্দর ওয়েবসাইট তৈরি করতে পারবেন।
এ সম্পর্কে ভালোভাবে ধারণা লাভ করতে হলে অবশ্যই আপনি ইউটিউবে বিভিন্ন ভিডিও দেখতে পারেন। এছাড়াও আপনি w3school কে অনুসরণ করতে পারেন। প্রকৃতপক্ষে এইচটিএমএল এবং সিএসএস শিখার ক্ষেত্রে সবথেকে ইফেক্টিভ প্ল্যাটফর্ম হচ্ছে w3school.
HTML ও CSS শেখার পরে যা করবেন
এইচটিএমএল এবং সিএসএস শেখার পরে আপনি মূলত কমপ্লিটলি একটি প্রজেক্ট তৈরি করতে পারবেন। বিভিন্ন প্রজেক্ট গুলোর মধ্যে অন্যতম হতে পারে আপনি বর্তমানে যে প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছেন অথবা পড়ালেখা করেছেন তার জন্য একটি ওয়েবসাইট তৈরি করা। এর মাধ্যমে আপনি মূলত বিভিন্ন জিনিস সম্পর্কে ধারনা লাভ করতে পারবেন। আর এই জিনিসটা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।শুরুতে এইচটিএমএল এবং সিএসএস শেখার পরে বড় কিছু শুরু করার আগে অবশ্যই আপনাকে বেশ কিছু প্রজেক্ট সম্পন্ন করে তারপরে সে সম্পর্কে ধারণা নিয়ে সামনের দিকে যেতে হবে।
আপনি যখন মোটামুটি সিএসএস এবং এইচটিএমএল সম্পর্কে ধারণা লাভ করবেন তখন কিন্তু খুব সহজে যেকোনো ওয়েবসাইটের ক্লোন অথবা প্রতিরূপ তৈরি করতে সক্ষম হবেন। সুতরাং আমার পরামর্শ থাকবে আপনার প্রিয় বেশ কিছু ওয়েবসাইটকে নিজে আকৃতি দান করার চেষ্টা করুন। ধরুন আপনি গুগলের সার্চ পেজটাকে কিভাবে এইচটিএমএল এবং সিএসএস দিয়ে তৈরি করতে যায় সেটা project হিসাবে নিতে পারেন।
ধাপ ৩: সিএসএস ফ্রেমওয়ার্ক শিখতে হবে
বিভিন্ন ফ্রেমওয়ার্কে ধারনার মাধ্যমে আমরা খুব সহজেই উন্নত মানের ডিজাইন তৈরি করতে পারি। এছাড়াও এমন অনেক কাজ করতে পারি যার জন্য হয়তবা আমাদেরকে অনেকগুলো লাইনের কোড লিখতে হতো। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ফ্রেমওয়ার্ক ব্যবহার করলে আমাদের সে কাজ করতে হবে না।
ডিজাইনিং এর জন্য বিভিন্ন কোড আগে থেকেই লেখা রয়েছে এবং সেগুলোকে আমরা চাইলেই খুব সহজে নির্দিষ্ট নাম নির্দেশ করার মাধ্যমে আমাদের ডিজাইনে সংযুক্ত করতে পারি। এতে করে যেমন সময় বেঁচে যায় ঠিক তেমনি ভাবে বিভিন্ন আইডিয়া আমরা খুব সহজে বাস্তবতা দান করতে পারি।
Bootstrap, Foundation, Bulma, Tailwind CSS, UIkit, Milligram, Pure, Tachyons বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় কিছু ফ্রেমওয়ার্ক। এর মধ্যে যেগুলো কেমনে ব্যবহার করতে পারেন কিন্তু Bootstrap এর ব্যবহার সবথেকে বেশি। অন্যান্য ফ্রেমওয়ার্ক গুলোর তুলনায় Bootstrap শেখা সহজ এবং রিসোর্স অনেক বেশি যাতে করে যেকোনো বিগেনার খুব সহজে এটিকে রপ্ত করতে পারে। Bootstrap ব্যবহার করে অসাধারণ কিছু ডিজাইন তৈরি করা কোন ব্যাপারই না।
ধাপ ৪: জাভাস্ক্রিপ্ট শিখতে হবে
জাভাস্ক্রিপ্ট অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রোগ্রামিং ভাষা ওয়েব ডেভলপমেন্ট এর জন্য। এটির মাধ্যমে আমরা একটি ওয়েবসাইটকে জীবন দিতে পারি। অর্থাৎ পূর্বের কথা যদি আমরা চিন্তা করি, আমরা শুরুতে এইচটিএমএল দিয়ে ওয়েবসাইটে স্ট্রাকচার দাড় করাই এরপরে সিএসএস দিয়ে সেটাকে আমরা দেখতে সুন্দর করি এবং জাভাস্ক্রিপ্টের মাধ্যমে আমারা সেটাতে জীবন দান করতে পারি।
জাভাস্ক্রিপ্ট শেখা শুরু করতে হলে অবশ্যই আমাদেরকে প্রোগ্রামিংয়ের খুঁটিনাটি জিনিসগুলো সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে হবে। অর্থাৎ ভেরিয়েবল কি, ডেটা টাইপ কি, কিভাবে বিভিন্ন গাণিতিক সমস্যা সমাধান করা যায় প্রোগ্রামিং এর মাধ্যমে, এছাড়াও আরও অনেক খুঁটিনাটি বিষয় রয়েছে যেগুলো সম্পর্কে আমাদের ধারণা লাভ করতে হবে। এইজন্যই অবশ্যই আপনি ইউটিউব এর সাহায্য নিতে পারেন। জাভাস্ক্রিপ্ট শুরু থেকে শেখানোর জন্য অনেক ভিডিও রয়েছে যেগুলোতে পূর্বে প্রোগ্রামিং সম্পর্কে ধারনা নেই এমন ব্যক্তিদেরকে উদ্দেশ্য করে টিউটোরিয়াল তৈরি করা হয়েছে।
ইউটিউবে গিয়ে আপনি খুব সহজে অনেক বাংলা টিউটোরিয়াল পাবেন যেখানে জাভাস্ক্রিপ্ট সম্পর্কে শিখানো হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম একটি টিউটোরিয়াল এর কথা যদি আমি বলি তবে আনিসুল ইসলাম স্যারের তৈরি করা জাভাস্ক্রিপ্টের টিউটোরিয়াল সিরিজটি আমার দেখা সবথেকে ভালো মানের কিছু সিরিজের মধ্যে অন্যতম।
ধাপ ৫: জাভাস্ক্রিপ্টের ফ্রেমওয়ার্ক শিখতে হবে
বর্তমানে আমরা জাভাস্ক্রিপ্টের বিভিন্ন ফ্রেমওয়ার্ক দেখতে পায় পাই। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ReactJs, Angular, Vuejs, jquery ইত্যাদি। এগুলো ব্যবহারের মূল কারণ হচ্ছে ওয়েবসাইটের ফাংশনালিটি বৃদ্ধি করা এবং বিভিন্নভাবে ওয়েবসাইটকে পূর্বের তুলনায় উন্নত করে তোলা।
শুরুতে জাভাস্ক্রিপ্টকে খুব ভালোভাবে রপ্ত করে নিতে হবে, এরপরে শুধুমাত্র আপনি এগুলো শেখা শুরু করতে পারেন। না হলে আপনি কখনোই ফ্রেমওয়ার্ক সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারবেন না। সবথেকে জনপ্রিয় জাভাস্ক্রিপ্ট ফ্রেমওয়ার্ক হচ্ছে রিঅ্যাক্ট (ReactJs) এবং বর্তমানে এটির ব্যবহার অসংখ্য ওয়েবসাইটে দেখা যাচ্ছে। আপনি চাইলে ইউটিউব থেকে অথবা বিভিন্ন কোর্স থেকে ReactJs শিখতে পারেন এবং এটি শেখার জন্য বাংলাদেশের বিভিন্ন ইউটিউব চ্যানেল আপনি ফলো করতে পারেন। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে রাব্বিল হাসান ভাইয়া তৈরি করা সিরিজ টিউটিরিয়াল।
এই পর্যায়ে মূলত আপনাকে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন প্রজেক্ট নিজে নিজে করার চেষ্টা করতে হবে। আপনি বিভিন্ন ওয়েবসাইটের প্রতিরূপ তৈরি করতে পারেন। আপনি ফেইসবুক, টুইটার, ইউটিউবের মত ওয়েবসাইটের ক্লোন তৈরি করতে পারেন। নিজের বিভিন্ন আইডিয়াকে বাস্তবে রূপদান করার জন্য প্রজেক্ট তৈরি করতে পারেন। এর মাধ্যমে আপনি নিজেকে যেমন দক্ষ ভাবে গড়ে তুলবেন ঠিক তেমনি ভাবে হয়তোবা নতুন কোন বিজনেস আইডিয়া প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবেন।
খুঁটিনাটি যে বিষয় গুলো শিখতে হবে
Dev Tool সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে
Dev Tool ওয়েব ডেভলপারদের জন্য অনেক বেশি সাহায্যকারী একটি টুল। এর মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন error solve করতে পারি তথা সমস্যার সমাধান বের করতে পারি। আপনার ব্রাউজারে রাইট ক্লিক করে ইনস্পেক্ট অপশনে গেলে আপনি মূলত এই অংশকে দেখতে পাবেন। এটি দ্বারা ডিজাইন এবং কোডের ভুল নির্ণয় করা অনেক সহজ হয় এবং বিভিন্ন স্ট্যান্ডার্ড অনুসরণ করার জন্য এর গুরুত্ব অপরিসীম।
GitHub ব্যবহার জানতে হবে
GitHub হচ্ছে আমাদের কোড জমা রাখার ও সংরক্ষন করার একটি প্ল্যাটফর্ম। এর মাধ্যমে আমরা আমাদের বিভিন্ন কোডকে সংরক্ষণ করতে পারি। এর ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা খুব সহজে আমাদের কোডকে অন্যান্য ডেভলপারদের সাথে শেয়ার করতে পারি।
এর মাধ্যমে আমরা আমাদের বিভিন্ন প্রজেক্টকে অন্যদের সামনে তুলে ধরতে পারি এবং চাকরির আবেদন করার জন্য এটির গুরুত্ব অপরিসীম। এর মাধ্যমে কিন্তু আমরা আমাদের বিভিন্ন প্রজেক্ট একজন ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের সামনে উপস্থাপন করতে পারি এবং জানাতে পারি আমাদের দক্ষতা কতটা এবং আমরা কি ধরনের কাজ পারি।
এজন্য শুরু থেকে যখন আপনি বিভিন্ন প্রজেক্ট তৈরি করবেন সেগুলোকে সংরক্ষণ করার চেষ্টা করবেন। এতে করে আপনি কোন সমস্যায় পড়লে আপনার পুরনো কোডগুলো থেকে ধারণা নিতে পারবেন। যারা নতুন রয়েছে তারাও আপনার code থেকে উপকৃত হবে।
শিখতে গেলে অবশ্যই আমাদের সময় দিতে হবে। আর অবশ্যই বিশ্বাস রাখতে হবে নিজেদের উপর। প্রকৃতপক্ষে সময় এবং আত্মবিশ্বাসই আমাদেরকে সফল হতে সাহায্য করে। উপরোক্ত সকল পদ্ধতি গুলো এবং ধাপগুলো অনুসরণ করার মাধ্যমে আপনি একজন ওয়েব ডেভলপার হয়ে উঠতে পারবেন। এই ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই কঠোর পরিশ্রমী এবং উন্নত মানসিকতার হতে হবে।