আমরা কিন্তু প্রায় সময় বলে থাকি যে মানুষটা গিরগিটির মত রং বদলায়। আসলে কিছু মানুষের স্বভাব বর্ণনার জন্য আমরা এমনটা বলি। কিন্তু গিরগিটি যে রং বদলায় সেটা আমরা জানলেও এরা কীভাবে এবং কী কারনে আসলে এমনটা করে সেটা হয়তো অনেকেই জানিনা। তাহলে চলুন আজ আমরা এই মজার বিষয়টি জানার চেষ্টা করি। আমি শাহ ফরান শাকিব আজ এই বিষয়টিই ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করব আপনাদের সামনে।
আমাদের অনেকের মধ্যে একটা ভুল ধারণা আছে যে, শুধুমাত্র ছদ্মবেশ ধারণ অর্থাৎ প্রকৃতির সাথে মিশে যাওয়ার জন্য গিরগিটি তাদের রং পরিবর্তন করে। কিন্তু বিষয়টা পুরোপুরি এমন না। আসলে গিরগিটি এদের দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করার জন্যই মূলত রং বদলায়। এছড়াও এরা এদের সঙ্গীদের সাথে ভাব বিনিময়ের ক্ষেত্রেও এমনটা করে থাকে।
গিরগিটি তাদের নিজেদের দেহের তাপমাত্রা উৎপাদনে অক্ষম। এরা এদের দেহের রং পরিবর্তন এর মাধ্যমে আশপাশের পরিবেশ থেকে তাপ শোষণ করতে পারে আবার বিকিরণও করতে পারে। আর এভাবেই এরা দেহের জন্য অনুকূল তাপমাত্রা বজায় রাখে।
গিরগিটির দেহত্বকে অনেকগুলি স্তর থাকে। এর একদম বাইরের স্তরটি স্বচ্ছ। আর ভিতরের স্তরগুলোতে একধরনের বিশেষায়িত কোষ থাকে। এই কোষগুলিকে বলা হয় ক্রোমেটাফোর। প্রতিটা স্তরের ক্রোমেটাফোর কোষগুলি বিভিন্ন রঞ্জক পদার্থ দ্বারা পূর্ণ থাকে। একদম ভিতরের ক্রোমেটাফোর কোষগুলিকে বলা হয় মেলানোফের যেগুলি কিনা বাদামী বর্ণের মেলানিন ধারণ করে। ওপরের দিকের স্তরে থাকে ইরিডিওফোর। এই কোষগুলিতে নীল রঞ্জক থাকে যেটা আলোর নীল এবং সাদা রশ্মি প্রতিফলিত করে। এছাড়াও অন্যান্য ক্রোমেটাফোর কোষের মধ্য রয়েছে জ্যান্থোফোর এবং ইরিথ্রোফোর যারা যথাক্রমে হলুদ এবং লাল রঞ্জক ধারণ করে।
এই ক্রোমেটাফোর কোষগুলির সংকোচন প্রসারণের ফলে দেহের রং পরিবর্তিত হয় যা গিরগিটির মস্তিষ্ক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। যখন এরা গাঢ় বর্ণ ধারণ করে তখন পরিবেশ থেকে তাপ শোষণ করে নেয় এবং হালকা বর্ণ ধারণের মাধ্যমে পরিবেশে তাপ বিকিরণ করে। এভাবে প্রয়োজন মত গিরগিটি দেহের রং পরিবর্তন করে এবং দেহের অনুকূল তাপমাত্রা বজায় রাখে।
আমার মানুষরা কিন্তু আমাদের বিপাকীয় প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই দেহের প্রয়োজনীয় তাপ উৎপন্ন করি। সেটা সবারই জানা। কিন্তু আজ তাহলে মজার একটা বিষয় জানলাম যে সব প্রাণীরা কিন্তু দেহ তাপ উৎপাদনে আমাদের মত বিপাকীয় প্রক্রিয়া ব্যবহার করে না। যেমন আমরা জানতে পারলাম যে গিরগিটি তার দেহের রং পরিবর্তনের মাধ্যমেই দেহের জন্য প্রয়োজনীয় তাপ উৎপন্ন করে থাকে।
এছাড়াও গিরগিটির রং পরিবর্তন এর পেছনে আরো কয়েকটা কারন আছে। তবে প্রধান কারনটা কিন্তু আমরা আজ জেনে গেলাম। আমরা সুযোগ পেলে বাকী কারণগুলোও অন্য একসময় জানার চেষ্টা করব, ইনশাআল্লাহ। আজ এখান পর্যন্তই থাকুক। সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। আল্লাহ হাফেজ।
শিক্ষার্থী, এমবিবিএস, আব্দুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজ, নোয়াখালী
অনুষ্ঠান বিষয়ক সম্পাদক, জ্ঞানের আলো পাঠাগার
লেখাটি আমাদের Special Guest-দের থেকে নেয়া লেখাসমূহের একটি। ইচ্ছে করলে লিখতে পারেন আপনিও। পাঠগৃহ The Reading Room এ লিখতে চাইলে এখানে ক্লিক করে জেনে নিন বিস্তারিত।