স্যার আইজ্যাক নিউটন বস্তুর ভর, গতি ও বলের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করে তিনটি সূত্র প্রকাশ করেন। এ তিনটি সূত্র মূলত নিউটনের গতিসূত্র নামে পরিচিত। ১৬৮৭ সালে নিউটন তার লেখা "ফিলোসফিয়া ন্যাচারালিস প্রিন্সিপিয়া ম্যাথামেটিকা" বইতে এই সূত্র তিনটি প্রকাশ করেন। পদার্থবিজ্ঞানে এই সূত্রগুলোর গুরুত্ব অনেক বেশি। বিভিন্ন সমস্যার সমাধান এবং নতুন সূত্র প্রণয়নের ক্ষেত্রে নিউটনের গতিসূত্রগুলির গুরুত্ব অনেক বেশি।
আমরা এই আর্টিকেলে নিউটনের গতিসূত্রের তিনটি সূত্র অর্থাৎ Newton's 3 Law of Motion নিয়ে আলোচনা করব। এ বিষয়ে বিভিন্ন সূত্র, প্রমাণ ও উদাহরণ সংযুক্ত করা হয়েছে যাতে করে আপনি নিউটনের গতিসূত্র সম্পর্কে জানতে পারবেন।
নিউটনের প্রথম সূত্র
"বাহ্যিক বল প্রয়োগে বস্তুর অবস্থার পরিবর্তন করতে বাধ্য না করলে স্থির বস্তু চিরকাল স্থিরই থাকবে এবং গতিশীল বস্তু সমদ্রুতিতে সরল পথে চলতে থাকবে।"
নিউটনের প্রথম সূত্রকে জড়তার সূত্রও বলা হয়ে থাকে। পদার্থ যে অবস্থায় আছে চিরকাল সেই অবস্থায় থাকতে চাওয়ার যে প্রবণতা বা সেই অবস্থা বজায় রাখতে চাওয়ার যে ধর্ম তাকে জড়তা বলে। জড়তা মানে হচ্ছে কোন পরিবর্তনকে বাধা দেওয়া। গতির প্রথম সূত্র থেকে পাওয়া যায় কোন বস্তু তার যে বেগ আছে সেই বেগ বজায় রাখতে চায়। কোন বস্তুর উপর প্রযুক্ত বল মোট বল যদি শূন্য হয় তবে বস্তুর গতি বেগ ধ্রুব থাকবে।
`\sum F=0\Rightarrow\frac{dv}{dt}=0`
অর্থাৎ যদি কোন বস্তু স্থির থাকে বা সমদ্রুতিতে সরল পথে চলে তাহলে তার ত্বরণ শূন্য হয়। অর্থাৎ যদি কোন বস্তুর ওপর বল প্রয়োগ করা না হয় তাহলে তার ত্বরণ শূন্য হয়।
একটি গ্লাসের উপরে একটি কাগজ রাখি এবং সে কাগজটির উপরে একটি কয়েন রাখি তবে দেখা যাবে যখন আমরা কাগজটিকে ঝটকা টান দেব তখন কয়েনটি কাগজের সাথে না এসে বরঞ্চ সরাসরি গ্লাসের মধ্যে পড়বে। এ থেকে বোঝা যায় বস্তু যে অবস্থানে থাকে সেই অবস্থানে থাকতে চায়। অর্থাৎ বাহ্যিক বল প্রয়োগে বস্তুর অবস্থার পরিবর্তন করতে বাধ্য না করলে স্থির বস্তু চিরকাল স্থিরই থাকবে।
মহাশূন্যে যদি একটি বস্তুকে একটি নির্দিষ্ট বেগে নিক্ষেপ করা হয় তবে তার সামনে যদি কোন বাঁধা না আসে তবে তা সমদ্রুতিতে সরল পথে চলতে থাকবে। অর্থাৎ বাহ্যিক বল প্রয়োগে বস্তুর অবস্থার পরিবর্তন করতে বাধ্য না করলে গতিশীল বস্তু সমদ্রুতিতে সরল পথে চলতে থাকবে।
আরও পড়ুন: নিউটনের গতিসূত্রের প্রথম সূত্র
নিউটনের দ্বিতীয় সূত্র
"কোন বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তনের হার তার ওপর প্রযুক্ত বলের সমানুপাতিক এবং বল যে দিকে ক্রিয়া করে বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তন সেদিকে ঘটে।"
নিউটনের গতি বিষয়ক দ্বিতীয় সূত্র বলের পরিমাপ সূত্র নামে পরিচিত। বস্তুর ভর এবং বেগের গুনফল কে মূলত ভরবেগ বলা হয়ে থাকে। কোন বস্তুর ভর এবং বেগকে আমরা যদি গুন করি তবে আমরা তার ভরবেগ পাই। বস্তুর ভর (m), বস্তুর বেগ (v) এবং ভরবেগ (p) হলে,
`p=mv`
[ভরবেগের একক `kgms^{-1}` এবং মাত্রা `MLT^{-1}`]
যদি কোন বস্তুর শেষবেগ = V, আদিবেগ = u, সময় = t, ত্বরণ = a, বল = F হয় তবে বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তনের হার হবে:
`\frac{m.v-m.u}t`
নিউটনের দ্বিতীয় সূত্র হতে আমরা জানি, বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তনের হার তার ওপর প্রযুক্ত বলের সমানুপাতিক। এই সূত্রকে সমীকরণ রূপে প্রকাশ করলে দাঁড়াবে:
`\Rightarrow F\propto\frac{m\left(V-u\right)}t`
`\Rightarrow F\propto m\frac{\left(V-u\right)}t`[যেহেতু a = ( v - u ) / t]
`\Rightarrow F\propto ma`
`\Rightarrow F=kma` [এখানে K একটি সমানুপাতিক ধ্রুবক]
একক সময়ে, একক ভর বিশিষ্ট বস্তুতে একক বল প্রয়োগ করা হলে, t=1 তাই a=1, m=1, F=1 হবে। F = kma সূত্রে F, m, a এর মান বসালে পাই, K = 1
আরও পড়ুন: নিউটনের গতিসূত্রের দ্বিতীয় সূত্র
নিউটনের তৃতীয় সূত্র
"প্রত্যেক ক্রিয়ারই একটি সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে"
নিউটনের প্রথম ও দ্বিতীয় সূত্র হচ্ছে একটিমাত্র বস্তু সম্পর্কে অপর দিকে তৃতীয় সূত্র দুটি বস্তুর সাথে সম্পর্কিত। ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া বল সবসময় দুটি ভিন্ন বস্তুর ওপর ক্রিয়া করে, কখনোই একটি বস্তুর ওপর ক্রিয়া করে না। প্রতিক্রিয়া বলটি ততক্ষণই থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত ক্রিয়া বলটি থাকবে। ক্রিয়া থেমে গেলে প্রতিক্রিয়াও থেমে যাবে। এই ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া বস্তুগুলোর সাম্যবস্থায় বা গতিশীল অবস্থায় থাকা বা একে অপরের সংস্পর্শে থাকা বা না থাকার ওপর নির্ভরশীল নয়।
রকেট পৃথিবী ছেড়ে মহাকাশে যেতে পারে শুধুমাত্র বিপরীত প্রতিক্রিয়ার সাহায্যে। এটি জ্বালানি পুড়িয়ে একটি বিপরীতমুখী ধাক্কা সৃষ্টি করে যার কারণে এটি মহাকাশে দিকে ধাবিত হতে পারে। আমরা যখন হাঁটি তখন আমরা পা দিয়ে বিপরীত দিকে বল প্রয়োগ করি যার কারণে আমরা সামনে এগিয়ে যেতে পারি। এগুলো নিউটনের তৃতীয় সূত্রের বাস্তব উদাহরণ।
আরও পড়ুন: নিউটনের গতিসূত্রের তৃতীয় সূত্র
সূত্রগুলোকে মুখস্ত করাটা গুরুত্বপূর্ণ নয় বরং সূত্রগুলোকে বোঝাটা সবথেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সূত্রের প্রয়োগ ও উদাহরণগুলোকে মনে রাখলেই আপনারা খুব সহজেই সূত্রগুলোকে মনে রাখতে পারবেন। আমাদের ওয়েবসাইটে এরকম আরও অনেক তথ্যবহুল আর্টিকেল রয়েছে এবং আমাদের ওয়েবসাইটটা ঘুরে দেখার জন্য আমন্ত্রণ রইল।