১৬৮৭ সালে নিউটন তার লেখা "ফিলোসফিয়া ন্যাচারালিস প্রিন্সিপিয়া ম্যাথামেটিকা" বইতে বস্তুর ভর, গতি ও বলের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করে তিনটি প্রকাশ করেন যা মূলত নিউটনের গতিসূত্র নামে পরিচিত। পদার্থবিজ্ঞানে এই সূত্রগুলোর গুরুত্ব অনেক বেশি। বিভিন্ন সমস্যার সমাধান এবং নতুন সূত্র প্রণয়নের ক্ষেত্রে নিউটনের গতিসূত্রগুলির গুরুত্ব অনেক বেশি।
আমরা এই আর্টিকেলে নিউটনের গতিসূত্রের দ্বিতীয় সূত্র অর্থাৎ Newton's 2nd Law of Motion নিয়ে আলোচনা করব। এ বিষয়ে বিভিন্ন সূত্র, প্রমাণ ও উদাহরণ সংযুক্ত করা হয়েছে যাতে করে আপনি নিউটনের গতিসূত্রের দ্বিতীয় সূত্র সম্পর্কে জানতে পারবেন।
নিউটনের দ্বিতীয় সূত্র
"কোন বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তনের হার তার ওপর প্রযুক্ত বলের সমানুপাতিক এবং বল যে দিকে ক্রিয়া করে বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তন সেদিকে ঘটে।"
নিউটনের গতি বিষয়ক দ্বিতীয় সূত্র বলের পরিমাপ সূত্র নামে পরিচিত। বস্তুর ভর এবং বেগের গুনফল কে মূলত ভরবেগ বলা হয়ে থাকে। কোন বস্তুর ভর এবং বেগকে আমরা যদি গুন করি তবে আমরা তার ভরবেগ পাই। বস্তুর ভর (m), বস্তুর বেগ (v) এবং ভরবেগ (p) হলে,
`p=mv`
[ভরবেগের একক `kgms^{-1}` এবং মাত্রা `MLT^{-1}`]
নিউটনের দ্বিতীয় সূত্রের গাণিতিক প্রমাণ
যদি কোন বস্তুর শেষবেগ = V, আদিবেগ = u, সময় = t, ত্বরণ = a, বল = F হয় তবে বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তনের হার হবে:
`\frac{m.v-m.u}t`
নিউটনের দ্বিতীয় সূত্র হতে আমরা জানি, বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তনের হার তার ওপর প্রযুক্ত বলের সমানুপাতিক। এই সূত্রকে সমীকরণ রূপে প্রকাশ করলে দাঁড়াবে:
`\Rightarrow F\propto\frac{m\left(V-u\right)}t`
`\Rightarrow F\propto m\frac{\left(V-u\right)}t`[যেহেতু a = ( v - u ) / t]
`\Rightarrow F\propto ma`
`\Rightarrow F=kma` [এখানে K একটি সমানুপাতিক ধ্রুবক]
একক সময়ে, একক ভর বিশিষ্ট বস্তুতে একক বল প্রয়োগ করা হলে, t=1 তাই a=1, m=1, F=1 হবে। F = kma সূত্রে F, m, a এর মান বসালে পাই, K = 1
নিউটনের দ্বিতীয় সূত্রের বাস্তব উদাহরণ
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে নিউটনের দ্বিতীয় সূত্রের ব্যবহার আমরা সবসময় দেখে থাকি। অর্থাৎ যেসকল কাজ আমরা দৈনন্দিন করে থাকি তা লক্ষ্য করলে দেখতে পাবেন যে নিউটনের দ্বিতীয় সূত্র উদাহরণ আমরা সেখান থেকে দিতে পারছি।
ধরুন আপনার বন্ধু এবং আপনি বাইসাইকেল চালাচ্ছেন এক্ষেত্রে আপনার বাইসাইকেলের সামনে একটি ঝুড়িতে বেশকিছু ভারী বস্তু রয়েছে। আপনার বন্ধুর সাইকেলের ঝুড়িতে কোন কিছু নেই। এক্ষেত্রে সাইকেলে প্যাডেল করার মাধ্যমে আমরা মূলত বলপ্রয়োগ করছি সাইকেলটি গতিপ্রাপ্ত হওয়ার জন্য। যখন সাইকেলটি সামনের দিকে এগোচ্ছে তখন আসলে বলা যায় সাইকেলটি বেগ পেয়েছে এবং সাইকেলের উপর অবস্থিত আপনার শরীর, সাইকেলের ঝুড়িতে অবস্থিত বস্তু এবং সাইকেলের নিজের ভরকে যুক্ত করলে মূলত মোট ভর বের হবে।
দুই বন্ধুর শরীর এবং সাইকেলের ভর যদি একই হয়ে থাকে সেই ক্ষেত্রে একসাথে চলতে হলে সে ব্যক্তিকে বেশি বল প্রয়োগ করতে হবে যার ঝুড়িতে ভারী কোন বস্তু রয়েছে। অর্থাৎ বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তনের হার তার ওপর প্রযুক্ত বলের সমানুপাতিক।