SSC পদার্থবিজ্ঞান: দ্বিতীয় অধ্যায়, গতি (PDF Download)

স্থিতি এবং গতি

সময়ের সাথে কোনো বস্তুর অবস্থানের পরিবর্তন না হলে তাকে স্থির বস্তু এবং তার এই ধর্মকে স্থিতি বলে। এবং সময়ের সাথে কোনো বস্তুর অবস্থানের পরিবর্তন হলে তাকে গতিশীল বস্তু এবং এই ধর্মে গতি বলে।

 

SSC পদার্থবিজ্ঞান: দ্বিতীয় অধ্যায়, গতি (PDF Download)

প্রসঙ্গ বিন্দু

কোনো বস্তুর অবস্থান নির্ণয়ের জন্য আমরা যে বস্তুর সাপেক্ষে তা নির্ণয় করে থাকি তাকে প্রসঙ্গ বিন্দু বা মূল বিন্দু বলা হয়। যেমন একটি রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তির সাপেক্ষে একটি বাস গতিশীল। এখানে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিই প্রসঙ্গ কাঠামো।

 

কোনো গতিই পরম নয়, পরম নয় কোনো স্থিতিই। সকল গতিই আপেক্ষিক, সকল স্থিতিই আপেক্ষিক।

প্রসঙ্গ কাঠামোর সাপেক্ষে কোনো বস্তু স্থির হলে তা স্থিতি, এবং গতিশীল হলে তা গতি। কিন্তু আমাদের এই মহাবিশ্বের কোনো কিছুই স্থির না। সব কিছুই একটি নির্দিষ্ট গতিতে চলমান। আমাদের পৃথিবী ঘূর্ণায়মান, এই গ্যালাক্সি ঘূর্ণায়মান, সবই। তাই প্রকৃতপক্ষে কোনো গতি বা স্থিতিই পরম গতি বা স্থিতি নয়, সবই আপেক্ষিক। তাই আমাদের দৃষ্টিতে যাকে স্থির মনে হবে তার সাপেক্ষেই আমরা স্থিতি বা গতি নির্ণয় করব। যেমন একটি চলন্ত ট্রেনের সিটে মুখোমুখি বসে থাকা দুজন যাত্রী একজন অন্যজনের সাপেক্ষে স্থির।

 

বিভিন্ন প্রকার গতি

সরলরৈখিক গতি

কোনো কিছু যদি সরলরেখা বরাবর গতিশীল থাকে, তবে তাকে সরলরৈখিক বা রৈখিক গতি বলে। যেমন সমতল রাস্তায় চলতে থাকা সাইকেলের গতি, মুক্তভাবে নিচের দিকে পড়ন্ত কোনো বস্তুর গতি।

 

ঘূর্ণন গতি

কোনো একটি নির্দিষ্ট বিন্দু থেকে সমান দূরত্বে থেকে যদি কোনো বস্তু ঘুরতে থাকে, তবে তাকে ঘূর্ণল গতি বলে। যেমন ঘড়ির কাটার গতি, পৃথিবীর চারদিকে চাঁদের ঘূর্ণন গতি।

 

চলন গতি

কোনো বস্তু যদি এমনভাবে চলতে থাকে, যাতে করে বস্তুর সকল কণা একই সময়ে একই দিকে যেতে থাকে, তবে তাকে চলন গতি বলে।

 

পর্যায়বৃত্ত গতি

কোনো গতিশীল বস্তু যদি একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর একটি নির্দিষ্ট বিন্দু দিয়ে একইভাবে অতিক্রম করে তবে তাকে পর্যায়বৃত্ত গতি বলে। হৃদপিন্ডের স্পন্দন পর্যায়বৃত্ত গতির উদাহারণ।

 

সরল স্পন্দন গতি

এটি বিশেষ ধরনের পর্যায়বৃত্ত গতি। যখন কোনো গতিশীল বস্তু যদি একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর একটি নির্দিষ্ট বিন্দু দিয়ে একইভাবে অতিক্রম করে এবং এরপর আবার একটি নির্দিষ্ট সময়ে ওই বিন্দুকে বিপরীত দিক থেকে অতিক্রম করে, তখন সেই গতিকে সরল স্পন্দন গতি বলে। যেমন দুলতে থাকা দোলনার গতি।

স্কেলার রাশি এবং ভেক্টর রাশি

রাশি

এই মহাবিশ্বে যা কিছু পরিমাপ করা যায়, তাকেই রাশি বলে। যেমন ভর পরিমাপ করা যায়, তাই ভর একটি রাশি। কোনো বস্তুর দৈর্ঘ্য পরিমাপ করা যায়, তাই দৈর্ঘ্য একটি রাশি। এসকল রাশি দুই প্রকার।

  • স্কেলার রাশি
  • ভেক্টর রাশি

 

স্কেলার রাশি

যেসকল রাশি সম্পূর্ণরূপে প্রকাশের জন্য শুধু মানই যথেষ্ট, দিকের প্রয়োজন হয় না, তাকে স্কেলার রাশি বা অদিক রাশি বলে। যেমন কোনো একটি বস্তুর দৈর্ঘ্য কত? এই প্রশ্নের উত্তরে স্বাভাবিকভাবেই শুধু মান বললেই চলবে। যেমন ১২ ইঞ্চি। আমরা কেউই জানতে চাইবো না যে এর দৈর্ঘ্য কোন দিকে ১২ ইঞ্চি। আরও কয়েকটি স্কেলার রাশির উদাহারণ হলো, তাপমাত্রা, বৈদ্যুতিক বিভব, সময়, দ্রুতি ইত্যাদি।

 

ভেক্টর রাশি

যেসকল রাশি সম্পূর্ণরূপে প্রকাশের জন্য মানের সাথে দিকেরও প্রয়োজন হয়, সেসকল রাশিকে ভেক্টর রাশি বা দিক রাশি বলা হয়। যেমন, যদি জিজ্ঞেস করি রিফাত দৌড় দিলো। এখন কত বেগে দৌড় দিলো? উত্তর যদি দেয় এতো বেগে, তখন প্রশ্ন আসবে কোন দিকে দৌড় দিলো? অর্থাৎ বেগের জন্য মানের সাথে দিকেরও প্রয়োজন হয়। তাই বেগ একটি ভেক্টর রাশি। ত্বরণ, মন্দন, বল, ওজন এসবও ভেক্টর রাশির উদাহারণ।

দূরত্ব ও সরণ

দূরত্ব হচ্ছে কোনো বস্তুর মোট অতিক্রান্ত দূরত্ব। কোন দিকে অতিক্রান্ত দূরত্ব তা এখানে গুরুত্বপূর্ণ নয়। অর্থাৎ কেউ যদি কোনো স্থান থেকে উত্তর দিকে ১ কিলোমিটার যাওয়ার পর পূর্ব দিকে ২ কিলোমিটার যায়, তবে তাঁর মোট অতিক্রান্ত দূরত্ব হবে (১+২) = ৩ কিলোমিটার। এর জন্য দিকের প্রয়োজন হবে না।


অন্যদিকে সরণ হচ্ছে সরলরৈখিক দূরত্ব। অর্থাৎ, কেউ উত্তর দিকে ১ কি. মি যাওয়ার পর পূর্ব দিকে ২ কি. মি. গেলে পিথারোগাসের সূত্রানুসারে অতিভূজই হবে সরন অর্থাৎ, ২.২৩৬০৭ কি. মি. এবং এর দিক হবে সরাসরি আদিবিন্দু থেকে শেষ বিন্দুর দিকে। দূরত্ব এবং সরণের উভয়ের মাত্রাই দৈর্ঘ্যের মাত্রা, [L]।


অর্থাৎ দূরত্ব এবং সরণের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে, একটির দিক আছে, অন্যটির দিক নেই।

দ্রুতি এবং বেগ মধ্যকার পার্থক্যও একই।

 

দ্রুতি ও বেগ

দ্রুতির দিক নেই, বেগের দিক আছে। অর্থাৎ দ্রুতি স্কেলার এবং বেগ ভেক্টর। দ্রুতি = অতিক্রান্ত দূরত্ব / মোট সময় এবং বেগ = সরণ / সময়। কোনো কিছু যখন সুষম দ্রুতিতে যায়, তখন তাৎক্ষণিক দ্রুতি এবং গড় দ্রুতির মান সমান হয়।

 

ত্বরণ ও মন্দন

সমবেগ বলতে বুঝায় মান ও দিক উভয়ই সময়ের সাথে অপরিবর্তনীয় থাকবে। যখনই বেগের পরিবর্তন হবে, তখই তার ত্বরণ বা মন্দন সৃষ্টি হবে। বেগের মানের পরিবর্তন কিংবা দিকের পরিবর্তন কিংবা দুইটিরই পরিবর্তন হয়, তখনই ত্বরণ বা মন্দনের সৃষ্টি হবে। যদি বেগের মান বাড়ে তবে ত্বরণ, আর যদি কমে তবে মন্দন হবে। অর্থাৎ, মন্দন হচ্ছে ঋণাত্মক ত্বরণ।

 

ত্বরণ = (শেষ বেগ – আদি বেগ) / অতিক্রান্ত সময়

 

গতির সমীকরণ

u = আদি বেগ বা শুরুর বেগ

a = ত্বরণ বা বেগের পরিবর্তন (পজিটিভ বা নেগেটিভ)

t = অতিক্রান্ত সময়

v = t সময় পর বেগ

s = t সময়ে অতিক্রান্ত দূরত্ব

 

যদি উপরের রাশিগলোকে এভাবে প্রকাশ করা হয়, তবে গতির চারটি সমীকরণ হলো

`s = vt` (সমবেগের ক্ষেত্রে)

`v = u + at` (সমত্বরণের ক্ষেত্রে)

`s = ut + frac{1}{2}at^2`

`v^2 = u^2 +2as`

পড়ন্ত বস্তুর সূত্র

মুক্তভাবে পড়ন্ত বস্তুর জন্য বিজ্ঞানী গ্যালিলিও ৩টি সূত্র প্রদান করেন যাদেরকে পড়ন্ত বস্তুর সূত্র বলা হয়। সূত্র তিনটি নিম্নরূপ:

 

পড়ন্ত বস্তুর প্রথম সূত্র: স্থির অবস্থান ও একই উচ্চতা থেকে বিনা বাধায় পড়ন্ত বস্তু সমান সময়ে সমান পথ অতিক্রম করবে।

 

পড়ন্ত বস্তুর দ্বিতীয় সূত্র: স্থির অবস্থান থেকে বিনা বাধায় পড়ন্ত বস্তুর নির্দিষ্ট সময়ে (t সময়ে) প্রাপ্ত বেগ (v) ওই নির্দিষ্ট সময়ের সমানুপাতিক।

 

পড়ন্ত বস্তুর তৃতীয় সূত্র: স্থির অবস্থান থেকে বিনা বাধায় পড়ন্ত বস্তু নির্দিষ্ট সময়ে যে দূরত্ব অতিক্রম করে, তা ওই সময়ের বর্গের সমানুপাতিক।

 

পড়ন্ত বস্তুর ক্ষেত্রে গতির সূত্রগুলোর a এর স্থলে g (অভিকর্ষজ ত্বরণ) এবং s এর স্থলে h (উচ্চতা) বসবে।

এই ডকুমেন্টটির পিডিএফ ডাউনলোড করতে ক্লিক করুন ডাউনলোড পিডিএফ-এ।

আরও পড়ুন:

১. গতির সমীকরণের প্রতিপাদন

Md. Rabiul Mollah

Okay! So here I'm Md. Rabiul Mollah from Pathgriho Network. I'm currently a student of B.Sc in Textile Engineering Management at Bangladesh University of Textiles. facebook instagram github twitter linkedin

Previous Post Next Post

এই লেখাটি আপনার সোশ্যাল মিডিয়া ওয়ালে শেয়ার করুন 😇 হয়তো এমনও হতে পারে আপনার শেয়ার করা এই লেখাটির মাধ্যমে অন্য কেউ উপকৃত হচ্ছে! এবং কারো উপকার করার থেকে ভাল আর কি হতে পারে?🥺