বল কাকে বলে?
যা প্রয়োগের ফলে স্থির বস্তু চলমান হয়, সমবেগে চলন্ত বস্তুর বেগ পরিবর্তন হয়, চলন্ত বস্তুর বেগ রোধ বা বৃদ্ধি হয়, কোনো বস্তুর আকারের পরিবর্তন হয় তাকেই বল বলে। বলের একক N (নিউটন) এবং বলের মাত্রা [`MLT^-2`]। বল একটি ভেক্টর রাশি।
বলের গাণিতিক প্রকাশ
বলকে F, ভরকে m এবং ত্বরণকে a দ্বারা নির্দেশ করা হলে,
F = ma
বা, বল = ভর `\times` ত্বরণ
বলের এককের ব্যাখ্যা
প্রশ্ন: 1 N বলতে কী বুঝায়?
1 kg ভরের কোনো বস্তুর উপর যে বল প্রয়োগ করলে তা 1 `ms^-2` ত্বরণ প্রাপ্ত হয়, তাকে 1 N বলে।
মৌলিক বল কাকে বলে?
যেসকল বল অন্য কোনো বল থেকে লাভ করা যায় না, তাদেরকে মৌলিক বল বলে।
মৌলিক বল কত প্রকার?
মৌলিক বল ৪ প্রকার। যথা:
১. মহাকর্ষ বল – এটি সবথেকে দুর্বল মৌলিক বল
২. তড়িৎ চৌম্বক বল
৩. দুর্বল নিউক্লিয় বল
৪. সবল নিউক্লিয় বল – এটি সবথেকে শক্তিশালী মৌলিক বল।
মহাকর্ষ বল
মহাবিশ্বে কোনো দুটি বস্তুর মধ্যে যে আকর্ষণ বল কাজ করে, তাকে মহাকর্ষ বল বলে। যেমন, চাঁদ ও পৃথিবীর মধ্যে আকর্ষণ বল।
তড়িৎ চৌম্বক বল
দুটি চার্জিত বস্তুকণা তাদের চার্জের কারণে আকর্ষণ-বিকর্ষণের মাধ্যমে যে বল সৃষ্টি করে, তাকে তড়িৎ চৌম্বক বল বলে।
দুর্বল নিউক্লিয় বল
যে স্বল্প মানের এবং স্বল্প পাল্লার বল নিউক্লিয়াসের ভেতরে অবস্থিত প্রোটন এবং নিউট্রনের মধ্যে কাজ করে তাকে দুর্বল নিউক্লিয় বল বলে।
সবল নিউক্লিয় বল
যে উচ্চ মান এবং উচ্চ পাল্লার বল নিউক্লিয়াসের ভেতরে অবস্থিত প্রোটন এবং নিউট্রনের মধ্যে কাজ করে তাকে সবল নিউক্লিয় বল বলে।
জড়তা
স্থির বস্তুর চিরকাল স্থির এবং গতিশীল বস্তুর চিরকাল সমবেগে সরলপথে চলতে থাকার যে প্রবণতা তাকে জড়তা বলে। জড়তা দুই প্রকার। স্থির বস্তুর স্থির থাকার প্রবণতাকে স্থিতি জড়তা এবং গতিশীল বস্তুর গতিশীল থাকার প্রবণতাকে গতি জড়তা বলে। জড়তার ধারনা নিউটনের প্রথম সূত্র থেকে খুব সহজের পাওয়া যায়।
নিউটনের প্রথম সূত্র
বল প্রয়োগ না করলে স্থির বস্তু স্থির থাকবে এবং সমবেগে (সরলপথে) চলতে থাকা বস্তু সমবেগে (সরলপথে) চলতে থাকবে।
নিজে করো:
১. চলন্ত বাস হঠাৎ থেমে গেলে যাত্রীরা সামনের দিকে ঝুঁকে যায় কেন?
২. স্থির বাস হঠাৎ চলতে শুরু করলে যাত্রীরা পেছনের দিকে হেলে যায় কেন?
সাম্য বল এবং অসাম্য বল
দুই বা ততোধিক বল কোনো একটি বস্তুর উপর প্রয়োগ করার পর বলগুলোর সম্মিলিত লব্ধি যদি শূন্য হয়, তবে সে অবস্থায় থাকা বস্তুটিকে বলা হয় সাম্যাবস্থানে আছে। আর যদি শূন্য না হয়, তবে তা সাম্যে নেই।
যেমন, কোনো একটি বলকে দুইজন খেলোয়ার সমান বলে বিপরীত দিকে টানলে বলটি জায়গায় স্থির থাকবে। এতে সাম্যাবস্থা সৃষ্টি হবে। আর যদি কেউ কম, কেউ বেশি বল দেয়, তবে সেখানে বলটি যেকোনো একজনের কাছে চলে গিয়ে অসাম্যতার সৃষ্টি করবে।
ভরবেগ
ভর এবং বেগের সমন্বয়ে যে ভৌত রাশির উদ্ভব ঘটে তাকে ভরবেগ বলে। ভরবেগকে P দ্বারা প্রকাশ করা হয়। ভরবেগের মাত্রা [`MLT^-1`] এবং একক `kg ms^-2`।
ভরবেগ, P = mv
নিউটনের দ্বিতীয় সূত্রটি ভরবেগ সম্পর্কি।
নিউটনের দ্বিতীয় সূত্র
বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তনের হার তার উপর প্রযুক্ত বলের সমানুপাতিক এবং বল যেদিকে ক্রিয়া করে ভরবেগের পরিবররনও সেদিকে ঘটে।
নিউটনের দ্বিতীয় সূত্র থেকে F = ma এর প্রতিপাদন
মনে করি, m ভর বিশিষ্ট কোনো বস্তু u আদিবেগ নিয়ে t সময় চলে v বেগ প্রাপ্ত হয়। এই t সময়ব্যাপী বস্তুটির উপর প্রয়োগকৃত বলের মান F।
তাহলে বস্তুটির আদি ভরবেগ = mu
শেষ ভরবেগ = mv
t সময়ে ভরবেগের পরিবর্তন mv - mu
সুতরাং, একক সময়ে ভরবেগের পরিবর্তন (mv-mu)/t = m `\times` (v-u)/t = ma
নিউটনের দ্বিতীয় সূত্রানুসারে, F is proportional to ma
বা, F = kma [এখানে k ধ্রুবক।] ... ... 1 নং সমীকরণ
যদি 1 N বল, 1 kg ভর এবং 1 `ms^-2` ত্বরণের জন্য k এর মান হিসাব করা হয় তবে k = 1 পাওয়া যায়।
k = 1, 1 নং সমীকরণে বসিয়ে পাই,
F = ma
(প্রমাণিত)
সংঘর্ষ
ভরবেগের সংরক্ষণ সূত্র
ভরবেগের সংরক্ষণশীলতা নীতি প্রমাণের জন্য আমাদেরকে নিউটনের তৃতীয় সূত্র জানতে হবে যা নিচে দেয়া হয়েছে। দেখে এখানে ফিরে আসতে পারো যদি আগে না জেনে থাকো।
নিউটনের তৃতীয় সূত্রানুসারে,
`F_1 = -F_2`
বা, `m_1a_1 = m_2a_2`
এখান থেকে আমরা হিসাব করে পাই,
`m_1u_1 + m_2u_2 = m_1v_1 + m_2v_2`
এই সূত্রটি এই অধ্যায়ের জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। মিলিত বস্তুর ক্ষেত্রে `v_1 = v_2 = v` ধরে গণনা করতে হবে।
মিলিত বস্তুর বেগ নির্ণয় জানতে এখানে ক্লিক করুন।
এখান থেকে আমরা আরও কিছু সূত্র পাই যা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
এছাড়া, এই ধারণা আরও বেশি পরিষ্কার করতে পশ্চাৎবেগ সম্পর্কেও আমাদের জানতে হবে। নিরাপদ ভ্রমণের বিষয়েও এই সূত্রগুলো গুরুত্বপূর্ণ। পড়ুন: বন্দুকের পশ্চাৎবেগ।
এই অধ্যায়ের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, মহাকর্ষ বল। খুব দ্রুতই এই বিষয়গুলো এই কন্টেন্টে লিংক করে দেয়া হবে। একই ভাবে ঘর্ষণ বল নিয়েও আলাদা কন্টেন্ট লেখা হবে। আপনারা তা যদি পরে না পান, এমন আশংকা থাকে, তবে আমাদের Contact Us পেজে গিয়ে আমাদেরকে জানিয়ে রাখতে পারেন।
নিউটনের তৃতীয় সূত্র
প্রত্যেক ক্রিয়ার একটি সমান ও বিপরীতমুখী প্রতিক্রিয়া আছে।
অর্থাৎ, যখন একটি বস্তু অন্য একটি বস্তুর উপর বল প্রয়োগ করে, তখন সেই বস্তুটিও প্রথম বস্তুর উপর বিপরীত দিকে সমান বল ক্রিয়া করে। অর্থাৎ `F_1 = -F_2`।
প্রশ্ন: সংঘর্ষের সময় ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া বল পরষ্পর সমান হওয়া সত্ত্বেও কেন সাম্য প্রতিষ্ঠা হয় না?
বলের ঘাত
ঘাত বল
প্রশ্ন: কোনো বস্তুর ঘাতবল 10 Ns বলতে কি বুঝায়?
- কোনো বস্তুর উপর 5 N বল 2 সেকেন্ড ধরে ক্রিয়া করেছে।
- কোনো বস্তুর উপর 10 N বল 1 সেকেন্ড ধরে ক্রিয়া করেছে।
- কোনো বস্তুর উপর 20 N বল 0.5 সেকেন্ড ধরে ক্রিয়া করেছে ইত্যাদি।