হ্যাঁ, বঙ্গবাণী ও কপোতাক্ষ নদ উভয় কবিতাতেই মাতৃভাষা প্রীতির মাধ্যমে দেশপ্রেম প্রকাশ পেয়েছে।– উক্তিটি যৌক্তিক। বঙ্গবাণী কবিতাটি কবি আবদুল হাকিমের নূরনামা কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত। মধ্যযুগীয় পরিবেশে বাংলা ভাষার প্রতি বলিষ্ঠ বাণীবদ্ধ কবিতা এটি। অন্যদিকে কপোতাক্ষ নদ কবিতাটি মাইকেল মধুসূদন দত্তের চতুর্দশপদী কবিতাবলি থেকে গৃহীত হয়েছে। এই কবিতায় কবির স্মৃতিকাতরতার ভেতর দিয়ে দেশপ্রেমই প্রকাশ পেয়েছে।
উত্তরের স্বপক্ষে যুক্তি
আরবি-ফার্সি ভাষার প্রতি ‘বঙ্গবাণী’ কবিতার কবির কোনো বিদ্বেষ নেই। তবে মাতৃভাষাই মনের ভাব প্রকাশের সব থেকে ভালো মাধ্যম। এসব কারণেই কবি মাতৃভাষায় গ্রন্থ রচনায় মন দেন। তৎকালীন সমাজের অধিপতিরা মাতৃভাষাকে বাদ দিয়ে আরবি-ফারসির প্রতি প্রয়োজনের অধিক অনুরাগ দেখাতো। একটি অঞ্চলের ভাষাকে আবার অনেকেই অন্য বিশেষ ধর্মের ভাষা বলে হেয় করতো। এর বিরুদ্ধেই কবির এই কবিতা। কবির মতে, সৃষ্টিকর্তা সকল ভাষাই বুঝেন, তাই মানুষ যে কোনো ভাষায় তাকে ডাকলেও সৃষ্টিকর্তা শুনবেন। বাংলাদেশে জন্মেও যাদের মধ্যে বাংলা ভাষার প্রতি মমতা নেই, তাদের প্রতি কবি তীব্র ক্ষোভ দেখিয়েছেন।
অন্যদিকে কপোতাক্ষ নদ কবিতায় মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্মস্থল যশোর জেলার সাগরদাঁড়ি গ্রামের পাশ দিয়েই বয়ে গেছে কপোতাক্ষ নদ। শৈশবে কবি এই নদকে সাথে করেই বড় হয়েছেন। তিনি যখন মাতৃভূমিকে ভুলে গিয়ে খ্যাতি লাভের আশায় ফ্রান্সে পাড়ি জমান, তখন ধীরে ধীরে তার মধ্যে মাতৃভূমির প্রতি টান বাড়তে থাকে।
এই কবিতা থেকে জানা যায় যে, কবি মাতৃভূমিকে বিশেষভাবে ভালোবেসেছিলেন। দূরে বসেও তিনি তার শৈশবের স্মৃতি কপোতাক্ষকে ভুলে যাননি। সেখান থেকেও তিনি কপোতাক্ষ নদের কলকল ধ্বনি শুনতে পেয়েছেন।
উপরের আলোচনা থেকে দেখা যায়, বঙ্গবাণী কবিতা এবং কপোতাক্ষ নদ কবিতা, উভয় কবিতাতেই ভাষার প্রেম এবং নদের প্রেমের ভেতর দিয়ে প্রকৃতপক্ষে দেশমাতৃকার প্রতি প্রেমের কথাই বুঝানো হয়েছে। তাই ‘বঙ্গবাণী ও কপোতাক্ষ নদ উভয় কবিতাতেই মাতৃভাষা প্রীতির মাধ্যমে দেশপ্রেম প্রকাশ পেয়েছে”- মন্তব্যটি যৌক্তিক।
আরও দেখুন:
- বালু মিশ্রিত খাবার লবণকে খাবার উপযোগী করার প্রক্রিয়া।
- অপ্রচলিত বাংলা শব্দের অর্থ ১
- অপ্রচলিত বাংলা শব্দের অর্থ ২
‘পাঠগৃহ নেটওয়ার্ক’-এর মাসিক ই-ম্যাগাজিন অদিশিখরে আপনি লেখা পাঠাতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন। ‘পাঠগৃহ The Reading Room’ এ আপনার ব্লগ প্রকাশ করতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন। কোনো প্রশ্ন থাকলে আমাদেরকে করুন আমাদের ফেসবুক পেজে। পাঠগৃহের সাথেই থাকুন।