পৃথিবীর বিভিন্ন রহস্য উম্মোচন করাই বিজ্ঞানের মূল কাজ। 'পাঠগৃহ নেটওয়ার্ক' নিয়ে এলো সেই বিজ্ঞানের প্রশ্নোত্তর সিরিজ 'বিজ্ঞানময় জগৎ'। আজকের এই প্রথম পর্বে থাকছে ১৫ টি প্রশ্ন এবং উত্তর। আপনারা আপনাদের কোনো প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইলে তাও আমাদেরকে জানাতে পারেন নিচে কমেন্ট করে। তাহলে আজকের প্রশ্ন ও উত্তর শুরু করা যাক।
১. মাছ কি উড়তে পারে?
হ্যাঁ, কিছু প্রজাতির মাছ উড়তে পারে। তবে পাখির মতো এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় উড়ে যেতে পারে না। জলো গ্লহিড করা ডানায় ভর দিয়ে বাতাসে ভেসে থাকে এসব মাছ। ওর্ভূক নামক এক ধরনের মাছ (এশিয়ার বাইরে পাওয়া যায়) পানির উপরে উঠে ডানা মেলে দেয় এবং বাতাসের চাপে শূন্যে ভাসতে থাকে। অনেক সময় এরা প্রবল বাতাসের কারণে সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চল থেকে দূরে চলে যায় এবং অক্সিজেনের অভাবে মারাও যায়।
২. পঁচা ডিম পানিতে ভাসে কেন?
ডিম পঁচে গেলে এর ভেতরের উপাদানগুলোর একটা অংশ এক ধরনের গ্যাসে পরিণত হতে শুরু করে। ডিমের গায়ের অসংখ্য আণুবীক্ষণিক ছিদ্র দিয়ে এই গ্যাস ডিমের বাইরে চলে আসায় ডিম হালকা হয়ে যায়। এমনভাবে ডিমের আপেক্ষিক ঘনত্ব পানির থেকে কমে গিয়ে ডিম পানিতে ভাসতে শুরু করে।
৩. লজ্জাবতী গাছের পাতা স্পর্ষ করলে বন্ধ হয়ে যায় কেন?
লজ্জাবতী গাছের নাম লজ্জাবতী দেয়াই হয়েছে এই কারণেই। এ গাছের বোটানিক্যাল নাম Mimosa pudica। এদের পাতাগুলো বৃন্তের সাথে যেখানে সংযুক্ত থাকে সে অংশটি অনেকটা স্ফীত। এই অংশটিতে পাতলা আবরণের অনেক কোষ থাকে। এসব কোষগুলো যখন পানি পায় তখন তা শোষণ করে স্ফীত হয়। পানি বের হয়ে গেলে সংকুচিত হয়ে যায়৷ আমরা যখন এদেরকে স্পর্ষ করি তখন এদের পাতলা আবরণের কোষ থেকে পানি কান্ডে চলে যায়। ফলে পাতা গুলো কুঞ্চিত হয়ে যায়।
৪. ডলফিন কেন এক চোখ খোলা রেখে ঘুমায়?
ডলফিনের এই এক চোখ খোলা রেখে ঘুমানোকে বলা হয় ইউনিহেমিস্ফেরিক স্লিপ। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে শাহ ফরান শাকিবের লেখা 'ডলফিনের Unihemispheric Sleep' লেখাটি পড়ুন।
৫. পর্বতারোহীদের টাইট জামা পড়তে হয় কেন?
পাহাড়ের উপরে উঠলে সেখানে যে দেহের বাইরের বায়ুচাপ দেহের ভেতরের বায়ুচাপের তুলনায় অনেক কমে যায়। অর্থাৎ দেহেত ভেতরের বায়ুচাপ বেড়ে যায়। এর ফলে নাক দিয়ে রক্ত পরার সম্ভাবনা থাকে। এই সম্ভাবনাকে কমিয়ে আনতেই টাইট জামা পরতে হয়।
৬. হাতে উদ্বায়ী তরল রাখলে ঠান্ডা লাগে কেন?
হাতের মধ্যে উদ্বায়ী তরল রাখলে এরা খুব দ্রুত উড়ে যায়। বাষ্পায়নের জন্য যে পরিমাণ সুপ্ততাপ প্রয়োজন হয় তা হাত থেকে গৃহীত হওয়ায় হাতের তাপমাত্রা কম বা ঠান্ডা অনুভূত হয়।
৭. আমরা কোনো বস্তু দেখি কেন?
বস্তু থেকে আলো আমাদের চোখে পৌঁছালে আমরা ওই বস্তুকে দেখতে পাই৷ এই আবিষ্কারের জন্য হাসান ইবনে আল হাইসাম (আল হাজেন)-কে আলোকবিজ্ঞানের জনক বলা হয়। বস্তু থেকে আলো এসে আমাদের চোখের রেটিনাতে পরে এবং তা উত্তেজিত হয়। এই উত্তেজনা চক্ষু স্নায়ু দ্বারা মস্তিষ্কে বস্তু সম্পর্কে দর্শনানুভূতির জন্ম দেয়।
৮. খুব বেশি শীতে আমরা কাঁপি কেন?
প্রচন্ড শীতে যখন আমাদের দেহ অত্যাধিক পরিমানে তাপ হারাতে থাকে তখন মস্তিষ্কের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রক কেন্দ্র দেহের তাপমাত্রা রক্ষার জন্য সংকেত প্রেরণ করে। এর ফলে মেটাবলিজম বৃদ্ধি পায় এবং এই অতিরিক্ত শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়ার জন্য শরীরে কাঁপুনি দেখা দেয়। এর ফলে পেশীর সংকোচন-প্রসারনের মাধ্যমে পেশী কোষগুলো অধিকতর খাদ্য ব্যবহার করে দেহের তাপমাত্রা ঠিক রাখার চেষ্টা করে।
৯. প্যারাসুট কিভাবে কাজ করে?
প্যারাসুটের ইতিহাস এবং কার্যপ্রণালী বিস্তারিত পড়তে 'অদ্রিশিখর সংখ্যা ০১ জুন ২০২১' ফ্রিতে ডাউনলোড করে ৪৪ তম পৃষ্ঠায় দেখুন।
১০. আকাশে অনেক নক্ষত্র থাকলেও শুধু সূর্য অস্ত গেলেই কেন আমরা আকাশকে অন্ধকার দেখি?
দিনের বেলায় সূর্যের আলো পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে যে ধূলিকণা ভাসমান অবস্থায় থাকে তাতে বিক্ষেপণ ঘটায়। এর ফলশ্রুতিতেই আমরা আকাশকে আলোকিত দেখি। কিন্তু সূর্য অস্ত গেলে বাকি যে নক্ষত্রগুলো থাকে তারা পৃথিবী থেকে অনেক বেশি দূরে হওয়ায় তাদের থেকে যে সামান্য আলো আসে তা বিক্ষেপণ ঘটাতে পারে না। ফলে সূর্য অস্তমিত হলেই অন্ধকার নেমে আসে। সূর্য আমাদের সবথেকে নিকটবর্তী নক্ষত্র।
১১. টিকটিকি কেন নিজের লেজ রেখে পালিয়ে যায়?
টিকটিকির লেজ পুনরায় গজাতে পারে। এজন্য টিকটিকির লেজ কেটে ফেললে খুব একটা সমস্যা হয় না। টিকটিকির এই লেজ ফেলে পালানোর বিষয়টা অনেকটা তাদের আত্মরক্ষার কৌশল। কোনো বিপদের সম্মুখীন হয়ে লেজ কেটে গেলে কিংবা অনেক সময় বিপদের সম্মুখীন হলে নিজ থেকেই লেজ খসে ফেলে পালিয়ে যায়। টিকটিকির এই কৌশলকে বলা হয় Caudal Autotomy।
১২. ইলেকট্রিক বাল্ব আলো দেয় কেন?
খুব উচ্চ রোধযুক্ত তারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হলে তা উত্তপ্ত এবং লাল হয়ে যায় এবং এতে আলো বিকিরণ ঘটে। এই প্রক্রিয়াতেই ইলেকট্রিক বাল্ব আলো দেয়।
১৩. পিঁপড়া সাড়ি বেঁধে চলে কিভাবে?
পিঁপড়া যখন হাটে তখন তাদের শরীর থেকে 'ফেরোমোন' নামক একটি হরমোন নিঃসরণ করে। এই হরমোনকে অনুসরণ করেই পেছনের পিঁপড়াগুলো সামনের পিঁপড়াদের সাথে একই সাড়িতে যেতে পারে। এমনকি তারা ফিরে আসার সময়ও একই পথে ফিরে আসে।
১৪. আলোকবর্ষ কী?
এক বছর সময়ে আলো যতখানি দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে তাকে আলোকবর্ষ বলে। আলো এক সেকেন্ডে ১ লক্ষ ৮৬ হাজার মাইল পর্যন্ত যায়।
১৫. কাঁচের মধ্য দিয়ে কোন রঙের আলো সবচেয়ে বেশি বেগে চলে?
লাল রঙের আলো কাঁচের মধ্য দিয়ে সবথেকে বেশি বেগে চলে থাকে।
Tags:
QnA