বিজ্ঞানময় জগৎ (পর্ব ২)

বিজ্ঞানের ১৫ টি প্রশ্নের উত্তর নিয়ে 'বিজ্ঞানময় জগৎ (পর্ব ০১)' এর পর আজকে ২য় পর্বেও থাকছে আরও ৩ টি প্রশ্ন এবং উত্তর।

বিজ্ঞানময় জগৎ (পর্ব ২)


১. পানির মধ্যে কোনো শব্দ হলে তা আমরা পানির বাইরে থেকে শুনতে পাই না কেন?

শব্দের বেগ মাধ্যম অনুযায়ী আলাদা। গ্যাসীয় মাধ্যমে শব্দের বেগ অন্যান্য মাধ্যমের থেকে কম। কঠিন পদার্থে শব্দ সবথেকে দ্রুত যায়, তারপর তরল এবং সবশেষে গ্যাস। যখন এক মাধ্যমে প্রবাহিত শব্দ তরঙ্গ অন্য মাধ্যমে প্রবেশ করতে চায় তখন দুই মাধ্যমের বিভেদতলে কতগুলো বিশেষ ঘটনা ঘটে থাকে। ধরা যাক, গভীর সমুদ্রের নীচে কোনাে বিদষ্ফোরণ হয়েছে, শব্দ তরঙ্গের সৃষ্টি হয়েছে। শব্দ তরঙ্গ খুব দ্রুত উপরে উঠে এলো। এবার তার বায়ুতে ঢুকে যাওয়ার পালা।


তরল মাধ্যম (পানি) থেকে গ্যাসীয় মাধ্যম (বায়ু)-তে ঢােকার কাজটা কিন্তু শব্দ তরঙ্গের পক্ষে মােটেই সহজ নয়, দুই মাধ্যমের সীমানা থেকে শব্দ তরঙ্গ প্রতিফলিত হয়ে ফেরৎ যেতে পারে পুরােনাে মাধ্যমে। কিছুটা শব্দশক্তি শােষিত হয়ে যেতে পারে, কিছুটা অবশ্যই নতুন মাধ্যমে প্রবেশ করতে পারে। দুই মাধ্যমের ঘনত্ব, প্রকৃতি ও অন্যান্য ধর্মের বেশি পার্থক্য থাকলে শব্দ তরঙ্গ প্রবেশের ব্যাপারটা খুবই কমে যায়। পানির তুলনায় বায়ুর ঘনত্ব এতটাই কম যে দুই মাধ্যমের বিভেদতলে শব্দ তরঙ্গ শক্তির বহুলাংশের শােষণ বা প্রতিফলন ঘটে যায়। বাতাসে যেটুকু আসে তা প্রায় শুনতে না পারারই মতো।


২. মহাকাশ ফেরৎ অভিযাত্রীদের পৃথিবীতে প্রত্যাবর্তনের পরেই কয়েকদিন কেন কোয়ারিন্টিনে রাখা হয়? 

মহাকাশ থেকে পৃথিবীতে প্রত্যাবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মহাকাশচারীদের কয়েকদিনের জন্য একটি নির্দিষ্ট জায়গায় বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়। এই সময় তাদের শারীরিক অবস্থার নানা রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়, রক্ত ও অন্যান্য নানা কিছু পরীক্ষা করে দেখা হয় তারা কোনাে নতুন ভাইরাস বহন করে এনেছেন কি না। মহাকাশ থেকে এমন ভাইরাস এই মহাকাশচারীদের মাধ্যমে পৃথিবীতে পৌঁছে যেতে পারে যা হয়তাে সমগ্র মানবজাতিকে ধ্বংস করে দিতে পারে।


এছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি আইনের জন্য নাসাকে এই কাজটি করতে হচ্ছে। যখন চাঁদে মানুষ পাঠানাের তােড়জোড় যখন শুরু হয়েছে তখন থেকেই নানা রকম ভিন্ন গ্রহের প্রাণীর অস্তিত্বের কথা আলােচিত হতাে। মহাকাশচারীদের মধ্য দিয়ে যদি সেইসব প্রাণী, যাদের অনেককেই মানুষের চেয়ে অধিকতর বুদ্ধিমান মনে করা হয়, কোনাে বিশেষ ভাইরাস পাঠিয়ে মানব সভ্যতাকে ধ্বংস করার চেষ্টা করে তার জন্য ছিল এই ব্যবস্থা।


৩. গরম কিছু ধরলে হাত পুড়ে যায় কেন ?

গরম কিছু হাতে ধরে ফেললে আমরা প্রথম প্রতিক্রিয়া হিসেবে যত দ্রুত পারি আমরা হাতটিকে সেখান থেকে সরিয়ে নিয়ে থাকি। গরম বস্তু থেকে আমাদের ঠাণ্ডা হাতে তাপের প্রবাহ ঘটে। এই প্রবাহের হার গরম বস্তুর তাপমাত্রা এবং কত সময় যাবৎ আমাদের হাত গরম বস্তুটির সংস্পর্শে আছে তার উপর নির্ভর করে। কেবল তাই-ই নয়, গরম বস্তুর ও তার সংস্পর্শে আসা আমার হাতের তলের ক্ষেত্রফলের উপরেও এই প্রবাহ নির্ভর করে অর্থাৎ বস্তুর তাপমাত্রা যত বেশি হবে বা যত বেশি সময় ধরে তাকে ধরে রাখব তত বেশি ও দ্রুত তাপ হাতে ঢুকবে। আর গরম পানির গ্লাসকে দুই আঙুলে ধরলে যত না তাপ হাতে প্রবেশ করবে মুঠো করে ধরলে প্রবেশ করবে তার থেকে অনেক বেশি। কারণ হাতের অনেকটা জায়গা গরম গ্লাসের সংস্পর্শে আসে এতে।


হাতের চামড়া তুলনায় একটু শক্ত হওয়ায় ওই তাপ খুব অল্প সময় সহ্য করা যায়। আর আমরা সেই সময়ের মধ্যেই হাতটা সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করি। তবে প্রবাহিত তাপের পরিমাণ বেশি হলে তা চামড়ার নীচের কোষগুলিকে নষ্ট করতে শুরু করে, যন্ত্রণা শুরু হয় এবং আমরা বলি যে হাত পুড়ে যাচ্ছে। কোষ নষ্ট হয়ে গেলে ওই অঞ্চলে রক্তপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যে অবস্থার সৃষ্টি হয় তার ফলে অন্য জীবাণু সংক্রমণের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। 


তাছাড়া শরীরের প্রয়ােজনীয় কিছু উপাদান যেমন প্রােটিন, জলীয় পদার্থ, ইলেকট্রোলাইট প্রভৃতির ঘাটতি হতে থাকে। প্রসঙ্গত বলা দরকার যে, শরীরের কোন অংশটি এবং শরীরের বহিঃতলের কতটা অঞ্চল পুড়ে গেছে এবং তার গভীরতা কি রকম অর্থাৎ চামড়ার নীচে ঠিক কতদূর পর্যন্ত ক্ষতি হয়েছে এই বিষয়গুলি বিবেচনা করে চিকিৎসকেরা পুড়ে যাওয়ার মাত্রাটিকে শ্রেণীবিন্যাস করে থাকেন। সেজন্য আমরা ফার্স্ট ডিগ্রী বার্ন, সেকেন্ড ডিগ্রী বার্ন বা থার্ড ডিগ্রী বার্ন শব্দগুলি শুনতে পাই। চিকিৎসার পদ্ধতিও অবশ্য ঠিক করা হয় এই শ্রেণীবিভাগের উপর ভিত্তি করেই।


তথ্যসূত্র:

১. বিজ্ঞানের আরও ৫০০ প্রশ্নের উত্তর: সৌমেন সাহা

Md. Rabiul Mollah

Okay! So here I'm Md. Rabiul Mollah from Pathgriho Network. I'm currently a student of B.Sc in Textile Engineering Management at Bangladesh University of Textiles. facebook instagram github twitter linkedin

Previous Post Next Post

এই লেখাটি আপনার সোশ্যাল মিডিয়া ওয়ালে শেয়ার করুন 😇 হয়তো এমনও হতে পারে আপনার শেয়ার করা এই লেখাটির মাধ্যমে অন্য কেউ উপকৃত হচ্ছে! এবং কারো উপকার করার থেকে ভাল আর কি হতে পারে?🥺