প্রফেসর আবদুস সালাম
(২৯শে জানুয়ারি ১৯২৬-২১শে নভেম্বর ১৯৯৬)
প্রথম মুসলিম
বিজ্ঞানী এবং এখন পর্যন্ত একমাত্র মুসলিম পদার্থবিজ্ঞানী হিসেবে প্রফেসর আবদুস সালাম
১৯৭৯ সালে নোবেল পুরষ্কার লাভ করেন। আবদুস সালাম, ওয়েনবার্গ এবং গ্লাশো সম্মিলিতভাবে
তড়িৎ চৌম্বক বল এবং দুর্বল নিউক্লিয় বলকে একীভূত করে ইলেকট্রোউইক বা দুর্বল তড়িৎ তত্ত্ব
প্রদান করেন। এই আবিষ্কারের ফলেই তারা তিনজনই ১৯৭৯ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কার
লাভ করেন।
ছবিতে বামে (উপরে আবদুস সালাম, নিচে উগার শাহীন), ডানে (উপরে আবদুস সাত্তার খান, নিচে আজিজ সানজার)। Image Source: BBC, Wikipedia, Legends of Bangladesh, Financial Times, Anadolu Agency।
এই গুরুত্বপূর্ণ
আবিষ্কার ছাড়াও তিনি মৌলিক কণাগুলোর প্রতিসাম্যতা, মেসন তত্ত্ব ইত্যাদি নিয়ে গুরুত্বপূর্ন
কাজ করেছেন। সুপারসিমেট্রি এবং টু কম্পোনেন্ট নিউট্রিনো তত্ত্ব নিয়েও তিনি কাজ করেছেন।
আবদুস সালাম ১৯২৬ সালের ২৯শে জানুয়ারি তৎকালীন ভারতের পাঞ্জাবে জন্মগ্রহণ করেন। ভারত বিভাগের পর পাঞ্জাবও দুই ভাগ হয় এবং আবদুস সালাম পাকিস্তানের নাগরিক হন। জীবনের শুরু থেকেই ধর্মপরায়ন ছিলেন তিনি। প্রথম মুসলিম বিজ্ঞানী হিসেবে নোবেল জয় করলেও তাঁর মাতৃভূমি পাকিস্তানসহ বিশ্বের আরো অনেক মুসলিম দেশই তাকে মুসলিম হিসেবে স্বীকৃত দেয় না। মূলত তিনি যে আহমাদিয়া সম্প্রদায়ের ছিলেন সেই আহমাদিয়া সম্প্রদায়কেই বিভিন্ন দেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে ‘অমুসলিম’ঘোষণা করে।
বিভিন্ন দেশ
মুসলিম হিসেবে স্বীকৃতি না দিলেও আবদুস সালাম নিজেকে একজন গর্বিত মুসলমান হিসেবেই পরিচয়
দিতেন। নোবেল পুরষ্কার গ্রহনের সময়ও সে তাঁর নিজ সম্প্রদায়ের পোশাকে গিয়েছিলেন। ডিজেনারেটিভ
নিউরোলজিক্যাল ডিজঅর্ডারে ভোগে ১৯৯৬ সালের ২১শে নভেম্বর তিনি অক্সফোর্ডে মৃত্যুবরণ
করেন। তাঁর সমাধীস্থল পাকিস্তানের আসমাদি শহরে।
আজিজ সানজার
(৭ই সেপ্টেম্বর ১৯৪৯-বর্তমান)
মুসলিম বিজ্ঞানী হিসেবে নোবেল জয়ী সর্বশেষ বিজ্ঞানী তুরস্কের আজিজ সানজার। ২০১৫ সালে তিনি থমাস লিন্ডাল ও পল মড্রিকের সাথে যৌথভাবে রসায়নে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। তাঁদের নোবেল জয়ী গবেষণাটি ছিলো ক্ষতিগ্রস্থ ডিএনএর স্বয়ংক্রিয় পুনঃউৎপাদন সংক্রান্ত যে প্রক্রিয়াকে ‘নিউক্লিওটাইড এক্সিসন রিপেয়ার’ বলা হয়। তাদের এই আবিষ্কারটি ছিল জীবরসায়নের ইতিহাসের অন্ততম সেরা আবিষ্কারের একটি।
১৯৪৬ সালের ৭ সেপ্টেম্বর আজিজ সানজার তুরস্কের মারদিন প্রদেশের স্যাভুরে জন্মগ্রহন করেন। তাঁর বাবা মা প্রাতিষ্ঠিক শিক্ষা পাননি, তবে আজিজ সানজারকে তারা লেখাপড়া করিয়েছেন। সানজার ১৯৬৯ সালে ইস্তাম্বুল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টর অব মেডিসিন শেষ করেন। ১৯৭৩ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে যান এবং মলিকিউলার বায়োলজিতে পিএইচডি সম্পন্ন করেন। ২০১৬ সালে আজিজ সানজার তাঁর নোবেল পুরষ্কার কামাল আতার্তুকের সমাধি সংলগ্ন জাদুঘরে দান করেন।
উগার শাহীন
(২৯শে সেপ্টেম্বর ১৯৬৫-বর্তমান)
২০১৯ সালের শেষদিকে চীনের উহান শহরে নতুন এক ধরনের ভাইরাসের সন্ধান মিলে, যার নাম পরবর্তীতে দেয়া হয় ‘কোভিড-১৯’। এই কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে বিশ্ব লড়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে এখনো। এই মহামারি থেকে মুক্তি পেতে আধুনিক বিজ্ঞান যখন চায় প্রতিষেধক তখনই বিশ্ববিখ্যাত ওষুধ কোম্পানি ফাইজার ও বায়োএনটেক কোম্পানি করোনার ভ্যাকসিন নিয়ে প্রথম সুখবর দেয়। করোনা ভ্যাকসিন এখন পর্যন্ত অনেকগুলো আবিষ্কৃত হলেও ফাইজার-বায়োএকটেকের ভ্যাকসিনটিই ছিলো প্রথম। আর এই প্রথম ভ্যাকসিনের পেছনে ছিলেন মুসলিম দম্পতি উগার শাহীন এবং ওজলেম তুরেসি।
উগার শাহিন
১৯৬৫ সালের ২৯শে সেপ্টেম্বর তুরস্কের ইস্কেন্দেরুন শহরে জন্মগ্রহণ করেন। ৪ বছর বয়সেই
অভিবাসী হয়ে জার্মানে আসতে হয় তার পরিবারের সাথে। উগার শাহিন জার্মানির কোলন বিশ্ববিদ্যালয়
থেকে মেডিসিন বিষয়ে পড়া শেষ করেন ১৯৯২ সালে। টিউমার কোষের ইমিউনোথেরাপি বিষয়ে তিনি
পিএইচডি সম্পন্ন করেন। ওজলেম
তুরেসির সাথে তাঁর পরিচয় ঘটে কাজ করতে গিয়েই। ২০০২ সালে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
ওজলেম তুরেসিও এখন চিকিৎসক (ইমিউনলজিস্ট)।
মানবদেহের আরএনে সেল নিয়ে গবেষণা করেন ড. শাহিন। ড. শাহিন ও তুরেসি দম্পতি বায়োএনটেক প্রতিষ্ঠানটি তৈরি করেন ক্যান্সার সেল নিয়ে গবেষণার উদ্দেশ্যে। কোভিড ভ্যাকসিন নিয়ে কাজের আগেই ২০১৯ সালে mRNA ভিত্তিক ক্যান্সার ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ করায় ‘মুসলিম জগতের নোবেল’ খ্যাত মুস্তাফা(স) পুরষ্কার জিতেন ড. উগার শাহিন।
আবদুস সাত্তার খান
(১৯৪১-৩১শে জানুয়ারি ২০০৮)
বাংলাদেশি বিজ্ঞানী
আবদুস সাত্তার খান ১৯৪১ সালে বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার খাগাতুয়া
গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। রতনপুর উচ্চ বিদ্যালয়, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের পর ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে পড়া শেষ করে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক হিসেবে
যোগ দেন। ১৯৬৪ সালে তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যান পিএইচডি করতে। পিএইচডি অর্জন
করে দেশে ফিরে আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন আবদুস সাত্তার খান। পরবর্তীতে তিনি
সংকর ধাতু নিয়ে গবেষণা করতে আবার দেশ ত্যাগ করেন।
আবদুস সাত্তার
তাঁর জীবদ্দশায় ৪০ টি সংকর ধাতু তৈরি করেন। এসব সংকর ধাতুর একটি ছিলো নিকেল ও তামার
মিশ্রণ যা অত্যন্ত হালকা। তাঁর এই আবিষ্কারই ব্যবহৃত হয় মার্কিন বিমান বাহিনীর যুদ্ধবিমান
এফ-১৫ এবং এফ-১৬ তৈরি করতে। এই ধাতুর ওজন কম হওয়ায় নতুন মডেলের এই যুদ্ধবিমান ছিলো
আগের বিমানগুলোর তুলনায় দ্রুতগতির। তিনি এই আবিষ্কার করেন নাসা ইউনাইটেড টেকনোলজিস
এন্ড অ্যালস্টমে কাজ করাকালীন।
আবদুস সাত্তার খান ফ্লোরিডা স্টেট ইউনিভার্সিটির যন্ত্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে কাজ করেছেন। ১৯৯৩ সালে ‘প্রাট এন্ড হুইটনি’র বিশেষ সম্মাননা পান তিনি। একই জায়গা থেকে পেয়েছেন আজীবন সম্মাননাও। ১৯৯৪ সালে পান ‘ইউনাইটেড টেকনোলজিস রিসার্চ সেন্টার অ্যাওয়ার্ড অব এক্সিলেন্স’ পদক। এছাড়া আরও বিভিন্ন পদক পেয়েছেন তিনি। তিনি মোট ৩১টি প্যাটেন্টেরঅধিকারী। ৩১শে জানুয়ারি ২০০৮-এ তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় মৃত্যুবরণ করেন।