এইচএসসি সিলেবাসের ভৌত জগৎ ও পরিমাপ অধ্যায়ের উপর আলোকপাত করার আগে কিছু কথা বলে নেয়া যাক। যদিও এইচএসসি সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে এই অধ্যায়কে (আংশিক) অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে, তবুও এই অধ্যায় থেকে বিগত বছরগুলোতে এইচএসসি পরীক্ষায় সৃজনশীল প্রশ্ন করা হয়নি। সৃজনশীল প্রশ্ন করা না হলেও এমসিকিউ কোয়েশ্চেন নিয়মিতই থাকতো এই অধ্যায় থেকে। তবে শুধু এমসিকিউ এর জন্য নয়, পুরো ফিসিক্স বইটিকে ভালোভাবে বুঝতে হলে পদার্থবিজ্ঞান প্রথম পত্রের এই প্রথম অধ্যায়টির উপর জ্ঞান থাকা চাই।
পরিসংখ্যান ঘেটে দেখা গেছে, এই অধ্যায় থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় সৃজনশীল আসে না। বহুনির্বাচনি যা আসে তার মধ্যে বড় একটা অংশ অন্যান্য অধ্যায় পড়ার সময় ভালোভাবে পড়া যায়, তাই সেগুলোকে অন্যান্য অধ্যায়ের অংশ হিসেবেই ভাবলে ভালো হয়। যে অংশটুকু এই অধ্যায়ের এবং বোর্ড পরীক্ষায় আসে তার একটা বড় অংশই 'ত্রুটি' সম্পর্কিত।
পরিমাপের এই ভুল বা ত্রুটি আবার ৪ প্রকার৷
- যান্ত্রিক ত্রুটি
- ব্যক্তিগত ত্রুটি
- অনিয়মিত ত্রুটি এবং
- পুনরাবৃত্তিক ত্রুটি৷
এছাড়া পিছট ত্রুটি, শূন্য ত্রুটি, লেভেল ত্রুটি, পরম ত্রুটি, আপেক্ষিক ত্রুটি, শতকরা হিসেবে ত্রুটি নির্ণয় করতে বলা প্রশ্ন কিংবা ত্রুটি গণনার সূত্র বহুনির্বাচনি প্রশ্ন হিসেবে এসে থাকে।
তাই ত্রুটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
ত্রুটি ব্যতিত এইচএসসি পরীক্ষায় 'লঘিষ্ঠ গণন নির্ণয় কর' ধরনের প্রশ্নও থেকে থাকে। আমরা এখন জানব লঘিষ্ঠ গণন কি এবং কিভাবে নির্ণয় করতে হয়।
লঘিষ্ঠ গণন কি?
স্ক্রু-গজের বৃত্তাকার স্কেলের এক ভাগ ঘুড়ালে তার প্রান্ত বা স্ক্রু-টি যতটুকু সরে যায় তাকেই লঘিষ্ঠ গণন বলা হয়।
লঘিষ্ঠ গণন কিভাবে নির্ণয় করে?
এই লঘিষ্ঠ গণন নির্ণয়ের জন্য আমাদেরকে যে সূত্র ব্যবহার করতে হবে তা হচ্ছে
লঘিষ্ঠ গণন বা LC (লঘিষ্ঠ ধ্রুবক) = পিচ/বৃত্তাকার স্কেলের ভাগ সংখ্যা।
এখন প্রশ্ন আসতে পারে, পিচ কি?
পিচ কি?
স্ক্রু-গজের টুপিকে একবার ঘুরালে এটি রৈখিক স্কেল বরাবর যে দূরত্ব অতিক্রম করে থাকে তাকেই পিচ বলে।
তাহলে একটি উদাহারণ দেখা যাক।
১. স্পেরোমিটারের বৃত্তাকার স্কেলের ভাগ সংখ্যা 50। স্কেলটিকে এক পাক ঘুরালে রৈখিক স্কেলে সরন হয় 0.5mm। এর লঘিষ্ঠ গণন কত? [চট্টগ্রাম বোর্ড, ২০১৬]
সমাধান: এখানে স্কেলটিকে এক পাক ঘুরালে তার সরন হয়েছে 0.5mm। এটিই এক্ষেত্রে পিচ। এখন পিচকে বৃত্তাকার স্কেলের ভাগ সংখ্যা দ্বারা ভাগ করলেই পাওয়া যাবে লঘিষ্ঠ গণন।
সুতরাং, লঘিষ্ঠ গণন = 0.5mm/50 = 0.01mm
এছাড়া ভার্নিয়ার ধ্রুবকও এ অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ একটি টপিক।
ভার্নিয়ার ধ্রুবক
ভার্নিয়ার ধ্রুবক: স্লাইড ক্যালিপার্সে প্রধান স্কেলের ক্ষুদ্রতম এক ভাগের চেয়ে ভার্নিয়ার স্কেলের ক্ষুদ্রতম এক ভাগ কতটুকু ছোট তার পরিমাণকে বলা হয় ভার্নিয়ার ধ্রুবক।
যেমন, ভার্নিয়ার স্কেলের 10 ভাগ, প্রধান স্কেলের 9টি ক্ষুদ্রতম ভাগের সমান হলে ভার্নিয়ার স্কেলের প্রতিটি ভাগের দৈর্ঘ্য = 0.9 মিমি এবং এক্ষেত্রে ভার্ণিয়ার ধ্রুবক, VC = 1 মিমি - 0.9 মিমি = 0.1 মিমি।
ত্রুটি, ভার্নিয়ার ধ্রুবক এবং লঘিষ্ঠ গণনের বাইরে এই অধ্যায় থেকে যে এইচএসসিতে অন্য যে প্রশ্ন আসে পারে তা হলো বিভিন্ন বিজ্ঞানির বিভিন্ন আবিষ্কার। এজন্য আপনি পড়তে পারেন নিচের লিংকড আর্টিকেলটি।
পড়ুন: কোন বিজ্ঞানির আবিষ্কার কোনটি?
বুয়েট, কুয়েট, চুয়েট, রুয়েট এবং বুটেক্সে এ অধ্যায় থেকে লিখিত কোনো কিছু ভর্তি পরীক্ষায় না আসলেও কোনো কোনোটিতে যখন এমসিকিউ পদ্ধতি ছিল তখন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লিখিত একটি প্রশ্ন এসেছে যা মাত্রা সমীকরণ টপিক থেকে।
মাত্রা সমীকরণ
- বল, [F]=[MLT−2]
- তাপ, [Q]=[ML2T−2]
- কাজ, [W]=[ML2T−2]
- শক্তি, [E]=[ML2T−2]
- ঘনত্ব, [ρ]=[ML−3]
- চাপ, [p]=[ML−1T−2]
- ক্ষমতা, [p]=[ML2T−3]
- তাপ ধারণ ক্ষমতা, [C]=[ML2T−2θ−1]
মনে রাখার বিষয়
- সরল দোলকের দোলনকালের সমীকরণটি মাত্রা সমীকরণের সাহায্যে সিদ্ধ প্রমাণ করা যায় না।
- মহাকর্ষ সূত্রের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য নয়।
- W = Fscos`\theta` সমীকরণের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।
এ অধ্যায় থেকে গুরুত্বপূর্ণ আর যে টপিক বাকি থাকে তা হলো ধারণা, সূত্র, নীতি, স্বীকার্য ইত্যাদি এবং পরিমাপের বিভিন্ন মাইক্রো-ম্যাক্রো এককের মধ্যাকার সম্পর্ক৷ এখন আমরা এগুলো সম্পর্কে জানবো।
ধারণা বা Concept
কোনো ভাবনা, চিন্তধারা বা সাধারণ অভিমতই ধারণা বা প্রত্যয়।
সূত্র বা Law
কোনো তত্ত্ব যখন অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষার সাহায্যে সত্য বলে প্রমানিত হয় এবং তার মূল।কথাকে একটি উক্তির মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়, তাকে সূত্র বলে। যেমন গ্যালিলিওর পড়ন্ত বস্তুর সূত্র।
নীতি বা Principle
যে সকল প্রাকৃতিক সত্য সরাসরি স্পষ্টভাবে প্রমাণ করা যায় এবং ওই সত্যের সাহায্যে অনেক প্রাকৃতিক ঘটনাকে প্রমাণ করা যায় তাকে নীতি বলে। যেমন হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তা নীতি।
স্বীকার্য বা Postulates
কোনো গাণিতিক সূত্র প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে যদি কিছু পূর্বশর্ত স্বীকার করে নেয়া হয়, তবে ওই পূর্বশর্তগুলোকে স্বীকার্য বলে৷
অনুকল্প বা Hypothesis
পর্যবেক্ষিত ঘটনার কারণ ব্যাখ্যার জন্য বিজ্ঞানীরা অনেক সময় পূর্বে আবিষ্কৃত প্রাকৃতিক নিয়মের সাথে মিল রেখে কিছু অনুমান করেন। এই অনুমানগুলোই অনুকল্প।
তত্ত্ব বা Theory
পরীক্ষা নিরিক্ষার দ্বারা প্রমাণিত অনুকল্পকে তত্ত্ব বলে৷
এমসিকিউর জন্য মনে রাখা প্রয়োজন:
১. সকল সূত্রই তত্ত্ব, কিন্তু সকল তত্ত্ব সূত্র নয়।
২. সকল তত্ত্বই অনুকল্প, কিন্তু সকল অনুকল্প তত্ত্ব নয়।
এই অধ্যায়ের আর যে একটি বিষয় বাকি থাকলো তার জন্য পড়ুন: পদার্থবিজ্ঞান সংশ্লিষ্ট এককের চৌদ্দগুষ্ঠি উদ্ধার।
এর মাধ্যমেই পদার্থবিজ্ঞানের এই অধ্যায়টি শেষ! লিংকড আর্টিকেলগুলোর সাথে এই আর্টিকেলটি পড়ে নিলে আশা করা যায় এইচএসসি এবং বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা দুই ক্ষেত্রেই এ অধ্যায় থেকে আসা প্রশ্ন গুলোর উত্তর করতে পারবেন খুব সহজেই। এই অধ্যায়ের কিছু সৃজনশীল প্রশ্ন অনুশীলন করতে চাইলে ক্লিক করুন এখানে।
এই কন্টেন্টটির পিডিএফ ডাউনলোড করতে ক্লিক করুন এখানে।