(আনুমানিক ৯৬৫ – ১০৪০)
'আবু আলি আল হাসান ইবনে আল হাসান ইবনে আল হাইসাম' তার পূর্ণ নাম। আল হাইসামের (আল হাইথাম) নামের ল্যাটিন সংস্করণ আল-হাজেন। তিনি ইসলামি স্বর্ণযুগের একজন অন্যতম কাণ্ডারি। তাকে আলোকবিজ্ঞানের জনক বলা হয়ে থাকে। অনুমান করা হয় ১০১১ থেকে ১০২১ সালের মধ্যে তিনি তাঁর ‘কিতাব আল মানাযির’ বইটি লেখেন যেখানে তিনি আলোকবিজ্ঞানের দুয়ারকে খুলে দিয়ে সামনে এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। আলোকবিজ্ঞানের জনক বলা হলেও আলোকবিজ্ঞান ছাড়াও তিনি জ্যোতির্বিজ্ঞান, অ্যানাটমি, দর্শন, চিকিৎসা, চক্ষুবিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান, পদার্থবিজ্ঞানহ বিজ্ঞানের আরও অন্যান্য শাখা প্রশাখা নিয়েও কাজ করেছেন।
If learning the truth is a scientific's goal, then he must make himself the enemy of all that he reads.
- Ibn Al Haytham
অ্যারিস্টটলের থেকে অনুপ্রাণিত আল হাজেন পূর্ববর্তি বিজ্ঞানীদের ভুল শোধরে দেন। সাথে আনেন অনেক নতুন সব তথ্য যা ভবিষ্যৎ বিজ্ঞানীদের গবেষণার পরিধি বাড়াতে সাহায্য করে। আল হাজেনের পূর্ববর্তী লোকেরা বিশ্বাস করতো চোখ থেকে আলো কোনো বস্তুর উপর পরলেই কেবল আমরা ওই বস্তুকে দেখতে পাই। অ্যারিস্টটলের এই তত্ত্বকে ভুল প্রমাণ করে আল হাজেন প্রমাণ করেন যে, বস্তু থেকে আলো আমাদের চোখে পড়লেই কেবল আমরা তা দেখতে পাই। একই সাথে দর্শন অনুভূতি যে চোখে সৃষ্টি হয় না, মস্তিষ্কে সৃষ্টি হয় সেটাও তিনি সামনে আনেন যার সবটুকুই আছে তাঁর ৭ খন্ডে প্রকাশিত ‘কিতাব আল মানাজির’-এ। এই বইটিকে পদার্থবিজ্ঞানের ইতিহাসের অন্যতম সেরা বই বলে বিবেচনা করা হয়ে থাকে, ঠিক যেমনটা ভাবা হয় আইজ্যাক নিউটনের ‘প্রিন্সিপিয়া ম্যাথমেটিকা’কে।
একই সাথে আলোর সরল পথে চলার বিষয়টিও প্রথম প্রমাণ করেন হাইসাম। পাশাপাশি “একজোড়া নির্দিষ্ট মাধ্যম এবং নির্দিষ্ট বর্ণের আলোক রশ্মির ক্ষেত্রে আপতন কোণের সাইন এবং প্রতিসরণ কোণের সাইনের অনুপাত সর্বদা ধ্রুবক।“- এটিও তিনিই সর্বপ্রথম দাবি করেন। তবে গাণিতিক প্রমাণ দিতে পারেননি তিনি। যা এখন আমরা আলোর প্রতিসরনের স্নেলের সূত্র হিসেবে জানি।
আধুনিক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির প্রবক্তাও আল হাজেন। মনোবিজ্ঞানী ওমর খালিফা ইবনে আল হাইসামকে পরীক্ষামূলক মনোপদার্থবিজ্ঞানের জনক হিসেবে অভিহিত করেন। ইন্ট্রিগাল ক্যালকুলাসের অন্যতম একটি ধারনাও তিনি ব্যবহার করেছিলেন। টলেমির বিভিন্ন ভুল তত্ত্বকে সামনে আনেন আল হাজেন। মধ্যাকর্ষণ শক্তি সম্পর্কেও তিনিই প্রথম ধারনা দেন। তিনি রংধনু, চন্দ্রগ্রহণ ও সূর্যগ্রহণ নিয়েও বলেছেন। তিনি জ্যামিতির উপর দেয়া ইউক্লিডের পঞ্চম স্বীকার্যকে প্রমাণের চেষ্টা করেন। এছাড়াও আরও অনেক বিষয়েই তিনি কাজ করেন। বৃত্ত, কনিক, দ্রাঘিমাংশ, অক্ষাংশ, দহন, তারকারাজি, ছায়াপথ, বস্তুর ছায়া, গ্রহের গতির মডেল ইত্যাদি ক্ষেত্রেও তিনি কাজ করেছেন। ধর্মীয় কিছু কাজও করেছেন আল হাজেন, যার মধ্যে অন্যতম ক্বিবলার দিক নির্ণয়। তিনি দুই শতাধিক বই লিখেছিলেন যার মধ্যে ৪৬টির মতো এখনও টিকে আছে। তাঁর স্বহস্তে লেখা অ্যাপোলোনিয়াসের কনিকের লিপি ‘হাজিয়া সোফিয়া’তে সংরক্ষিত রাখা হয়েছে।
ইবনে আল হাইসাম (ইবনে আল হাইথাম) ৯৬৫ খ্রিস্টাব্দের দিকের ইরাকের বসরা নগরীতে জন্মগ্রহন করেন। ১০৪০ সালে তিনি কায়রোতে মৃত্যুরবণ করেন। ২০১৫ সালে জাতিসংঘ ‘কিতাব আল মানাজির’-এর ১ হাজার বছর পূর্তি উপলক্ষে আন্তর্জাতিক আলোক বর্ষ পালন করে। চাঁদের একটি গহ্বরকে তাঁর নামে নামরকণ করা হয়েছে, একটি গ্রহাণুও আছে তাঁর নামে।
হাসান ইবনে হাইসাম সম্পর্কিত আরও কিছু তথ্য
- জন্ম: ৯৬৫ খ্রিস্টাব্দ, বসরা, ইরাক
- মৃত্যু: ১০৪০ খ্রিস্টাব্দ, কায়রো।
- নামের পশ্চিমা সংষ্করন: আল-হাজেন
- শিক্ষাজীবন: বাগদাদ
- অন্যান্য পেশা: নির্মান প্রকৌশলী
- ১০০টি প্রকৃত সংখ্যা যোগ করার একটি সূত্র দেন।
- জোড় পূর্ণ সংখ্যার সূত্র হিসেবে দেন "(2n-1(2n-1))"
তাঁর অন্যান্য কাজ সমূহ
- অ্যানালাইসিস অ্যান্ড সিনথেসিস
- ব্যালেন্স অব উইসডম
- অপসকুলা
- কনফিগারেশন অব দ্যা ওয়ার্ল্ড
- দ্যা রেজুলেশন
- মোশন অব ইচ সেভেন প্লানেট
তথ্যসূত্র
- Parts of Feature Image: benzoix (freepik.com), inspirasi-212.blogspot.com, Pathgriho Network
- The ‘first true scientist’ | BBC
- International Year of Light: Ibn al Haytham, pioneer of modern optics celebrated at UNESCO| UNESCO
- ইবনে আল-হাইথাম: আলোকবিজ্ঞানের কান্ডারি এক মহাবিজ্ঞানীর গল্প