বিশ্বের মানুষের কাছে এখনো ইতিহাসের অন্যতম সেরা কবি হিসেবে পরিচিত আজ থেকে প্রায় ১ হাজার বছর আগে জন্মগ্রহন করা ওমর খৈয়াম। তবে তাকে বেশিরভাগ মানুষ কবি হিসেবে চিনলেও, এর বাইরে তাঁর আরও একটি পরিচয় আছে। আর তা হলো, গণিতবিদ, জ্যোতির্বিজ্ঞানীসহ আরও অনেক কিছু। এক কথায় পুরোদস্তুর বিজ্ঞানের সাথে থাকা ওমর খৈয়াম অবসরে কবিতা লিখেই জনপ্রিয় হয়ে আছেন এখনও। তবেই ভাবুন, তাঁর বিজ্ঞানের জগতের কাজ কতটা বিশাল হওয়ার কথা?
সূচিপত্র (toc)
জীবনী
এক বছরে কত
সময়? আধুনিক বিজ্ঞান আমাদের জানায় ৩৬৫ দিন ৫ ঘন্টা ৪৮ মিনিট ৪৭ সেকেন্ড বা ৩৬৫.২৪২১৮৯
দিন। অর্থাৎ এই হিসেবে ২.৮২ বছর হয় ১০২৯.৯৮২৯৭৩ দিনে বা প্রায় ১০২৯.৯৮ দিনে। অবাক করা
হলেও সত্য যে, আজ থেকে প্রায় এক হাজার বছর আগে ১০৭৮ সালে কোনো ধরনের আধুনিক যন্ত্রের
ব্যবহার ছাড়াই মুসলিম মনীষি ওমর খৈয়াম একই হিসেব করেছিলেন। তিনি সুলতান মালিক শাহের
প্রস্তাবক্রমে যে বর্যপঞ্জি তৈরি করেন সেখানেও তিনি ১০২৯.৯৮ দিনে ২.৮২ বছর হিসেবে হিসাব
করেছিলেন। এই বর্ষপঞ্জিকার প্রচলন অব্যাহত ছিলো বিংশ শতাব্দী পর্যন্ত।
ওমর খৈয়ামের
এই সুবিশাল কাজের আগে তিনি বীজগণিতের ত্রিঘাত সমীকরণ নির্ণয়ের পদ্ধতি নিয়ে কাজ করেন
এবং জ্যামিতিক ও বীজগাণিতিক দুই নিয়মেই তিনি তাঁর সমাধান করেন। পরবর্তীতে ১৫৩৫ সালে
নিকোলা টার্টাগিলা এর সমাধানের সাধারণ সূত্র আবিষ্কার করেন। ওমর খৈয়াম চিকিৎসাবিজ্ঞানের
উপরও বই রচনা করে গেছেন বলা হয়।
জ্যোতির্বিজ্ঞান,
গণিত এবং চিকিৎসাবিজ্ঞানের পাশাপাশি তিনি মানুষের নৈতিকতা নিয়েও বই লেখেন। তবে তাঁর
এতোসব কীর্তির পরেও তিনি বর্তমান সময়ে অধিকতর পরিচিত একজন বিখ্যাত কবি হিসেবে। বলা
হয়ে থাকে বৈজ্ঞানিক গবেষণার অবসরে ওমর খৈয়াম কবিতা লিখতেন, যদিও অনেকেই দ্বিমত পোষণ
করে বলেন যে তাঁর কবিতা বলে প্রচলিত কোনো কবিতাই তার লেখা না। তবে অধিকাংশ ইতিহাসবিদগণ
এগুলোকে তাঁর কর্ম হিসেবেই স্বীকৃতি দিয়েছেন।
ওমর খৈয়ামের কবিতার বই ‘রুবাইয়াত’ যা মূলত অসংখ্য চতুষ্পদী কবিতার একটি সংগ্রহ। তবে অনেক কবিতাই কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে। ওমরের মৃত্যুর প্রায় ৭২৮ বছর পর ১৮৫৯ সালে ‘এডওয়ার্ড ফিৎসগেরান্ড’ ওমরের কবিতার ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশ করলে কবি হিসেবে তাঁর খ্যাতি ইউরোপে ছড়িয়ে পরে।
জন্ম ও মৃত্যু
এই মহান মানুষের
জন্ম ১০৪৮ সালের ১৮ই মে, পারস্যের খোরাসানের নিশাপুরে। তিনি ৮৩ বছর বয়সে একই অঞ্চলেই
মারা যান ১১৩১ সালের ৪ঠা ডিসেম্বর। তাঁর পূর্ণ নাম গিয়াসউদ্দিন আবুল ফাতেহ ওমর ইবনে
ইব্রাহিম আল-খৈয়াম।
ওমর খৈয়ামের আরও কিছু বই
- ওমর খৈয়ামের অসংখ্য বইয়ের মধ্য থেকে উল্লেখযোগ্য কিছু হলো:
- রুবাইয়াত (কবিতা)
- ডেমনস্ট্রেশন অব প্রবলেমস অব অ্যালজেবরা অ্যান্ড ব্যালেন্সিং এবং ট্রিটিজ অন ডেমনস্ট্রেশন অব প্রবলেমস অব অ্যালজেবরা অ্যান্ড ব্যালেন্সিং (বীজগণিত)
- নিজাম-উল-মূলক (রাজনীতি)
- মিজান-উল-হিকাম (রসায়ন)
- নাওয়াযিম আসকিনা (ঋতু পরিবর্তন সংশ্লিষ্ট)
- আল কাউল ওয়াল তাকলিক (মানুষের নৈতিক দায়িত্ব)
ওমর খৈয়ামের কিছু বাণী
১. এই মুহূর্তের জন্য খুশি হও। এই মুহূর্তটি তোমার জীবন।
২. সুখের পেছনে ছুটো না। দীর্ঘশ্বাসের মতো জীবনও ছোট।
৩. নিরর্থক সাধনা ও অহেতুক বিতর্কে সময় নষ্ট করো না।
৪. সত্য ও মিথ্যার মাঝের দূরত্ব হলো একটি চুল পরিমাণ।
৫. যার একজনমাত্র শত্রু আছে, তার সঙ্গেই সব জায়গায় দেখা হয়ে যায়।
সংক্ষেপে ওমর খৈয়াম
- ওমর খোইয়াম ইসলামি স্বর্ণযুগের একজন কাণ্ডারি ছিলেন।
- জন্ম ১০৪৮ সালের ১৮ই মে
- মৃত্যু ১১৩১ সালের ৪ঠা ডিসেম্বর
- বেঁচেছিলেন প্রায় ৮৩ বছর
- পূর্ণ নাম গিয়াসউদ্দিন আবুল ফাতেহ ওমর ইবনে ইব্রাহিম আল-খৈয়াম
- তাঁর পিতার পেশা ছিল চিকিৎসা
- ১০৬৬ সালে হ্যালির ধুমকেতু দেখে জ্যোতির্বিজ্ঞানে আগ্রহ পান ওমর খৈয়াম
- ১০৬৮ সালে তিনি সমরকন্দে চলে আসেন
- তাঁর লেখা শ্রেষ্ঠ কবিতার বই ‘রুবাইয়াত’
- আধুনিক বীজগণিতের ভিত্তি তৈরি হয়েছে অনেকটা তাঁর হাতেই
- ইউক্লিডীয় জ্যামিতি নিয়েও কাজ করেছেন
- প্রায় বর্তমান হিসাবের কাছাকাছি রকমের হিসাবে তিনি বর্ষপঞ্জিকা তৈরি করেন
- সর্বপ্রথম বীজগাণিতিক পদ্ধতিতে ত্রিঘাত সমীকরণ সমাধান করেন ওমর খৈয়াম
- ১৯৬৩ সালে প্রত্নতাত্ত্বিক খননে তাঁর কবর খুঁজে পাওয়া যায়