মহাবিশ্বকে নিয়ে পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষণ, গবেষণা করা এবং গবেষণালব্ধ তথ্যই বিজ্ঞান। প্রকৃতির নিয়ম খুঁজে বের করাই বিজ্ঞানের কাজ। সেই প্রাচীনকাল থেকেই অজানাকে জানার, অদেখাকে দেখার ইচ্ছা মানুষের। পাহাড় কেটে গুহা তৈরি করে বসবাস উপযোগী করা, পশু শিকারের উদ্দেশ্যে অস্ত্র বানানো, রান্নার নিমিত্তে আগুন জ্বালানো শেখার বিজ্ঞান আজ চাঁদে মানুষের পদচিহ্ন রাখার পর মঙ্গল অভিযান পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। বিজ্ঞানের এই পথচলাকে এগিয়ে নিয়েছেন অনেক মহান মানুষ। তাদের মধ্যে আছেন আলবার্ট আইনস্টাইন, গ্যালিলিও গ্যালিলি, আইজ্যাক নিউটন, ম্যারি কুরী, অ্যারিস্টলল, নিকোলা টেসলাসহ আরও অগণিত বিজ্ঞানীরা।
এদের মধ্যে অনেকেই আবার চেয়েছেন মুক্ত আকাশে পাখির মতো উড়ে বেড়াতে। রাইট ব্রাদার্স উড়েছিলেন, এটা আমাদের জ্ঞানের সীমাতেই আছে, তবে তারও প্রায় ১ হাজার বছর আগে উড়েছিলেন যে জন তাঁর নাম “আব্বাস ইবনে ফিরনাস”।
পাখির মতো করে উড়ার ইচ্ছা মানুষের মধ্যে বহুকাল থেকেই। সেই চেষ্টা থেকেই লিউনার্দো দ্যা ভিঞ্চির প্যারাসুটের মডেল আঁকা, লুইস সেবাস্তিয়ানের প্রথম ব্যবহারযোগ্য প্যারাসুট তৈরি করা, রাইট ভ্রাতৃদ্বয়ের ইঞ্জিন ব্যবহার করে প্রথমবার আকাশে উড়া সবই হয়েছে। এই গল্পগুলোর পাশাপাশি এই বিষয়ের কাজের জন্য আরও অনেক নাম আর গল্পই আমাদের কাছে পরিচিত। কিন্তু সবার আগে যে সফলভাবে উড়তে সক্ষম হয়েছিলেন সেই ‘আব্বাস ইবনে ফিরনাস’-এর গল্প ক’জন শুনেছি?
আব্বাস ইবনে ফিরনাসের পুরো নাম ‘আব্বাস আবু আল কাশিম ইবনে ফিরনাস ইবনে ইরদাস আল তাকুরিনি’। ৮১০ খ্রিষ্টাব্দে স্পেনে জন্মগ্রহন করেন আব্বাস। জ্ঞান বিজ্ঞানের বহু শাখায় তার বিচরণ ছিলো। চিকিৎসা, পদার্থবিজ্ঞান, জ্যোতির্বিজ্ঞানসহ আরও অনেক ক্ষেত্রেই সফলভাবে বিচরণ করে গেছেন তিনি।
আব্বাস ইবনে ফিরনাস তার জীবদ্দশায় উদ্ভাবণ করে গেছেন অনেক কিছু যা পরবর্তী যুগের মানুষের জন্য সহজতর করেছিলো সামনে এগিয়ে চলাকে। ‘আল-মাকাতা’ নামক জলঘড়ি, গ্রহ নক্ষত্রের মডেল, পাথরের স্ফটিক কাটার প্রক্রিয়া, পাথর থেকে গ্লাস তৈরি করেছিলেন তিনিই। কিন্তু তিনি সবথেকে বেশি পরিচিত প্রথম ব্যক্তি হিসেবে সফলভাবে উড়তে পারায়। রাইট ভ্রাতৃদ্বয়েরও প্রায় এক হাজার বছর আগে উড়েছিলেন তিনি।
Image Source: https://www.huffpostmaghreb.com |
খ্রিস্টীয় নবম শতাব্দীতে, সম্ভবত ৮৭৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি স্পেনের কর্ডোবার একটি পর্বত থেকে লাফিয়ে পরেন তারই তৈরি উড়ার যন্ত্র নিয়ে। অনেকটা পাখির ডানার মতো করে তা তৈরি করেছিলেন ইবনে ফিরনাস। কর্ডোবার আমিরের রাজকবির কবিতা থেকে জানা যায় যে আব্বাস ইবনে ফিরনাস পালক ব্যবহার করেছিলেন তার যন্ত্র তৈরি করতে। তিনি সফলভাবে প্রায় দশ মিনিট পাখির মতো উড়ে বেড়ান এবং যেখান থেকে উড়তে শুরু করেছিলেন সেখানেই ফিরে আসেন। তবে নামার সময়ে ত্রুটি ধরা পরে। পাখির মতো উড়তে পাখির ডানা সদৃশ যন্ত্র বানালেও নামার জন্য পাখির লেজের মতো কিছু কিংবা তার কোনো বিকল্প তৈরি করা হয়নি তার। তাই নামার সময় তিনি আহত হন। এসময় তার বয়স ছিলো ৬৫ থেকে ৭০ এর মধ্যে। তাই পরবর্তীতে তিনি তার ভুল খুঁজে বের করতে পারলেও আর উড়ার চেষ্টা করতে পারেননি।
আব্বাস ইবনে ফিরনাস ৮৮৭ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন। অনেকেই বলে থাকেন তিনি ৮৯০ থেকে ৮৯৫ এর মধ্যবর্তী কোনো সময়ে মারা গেছেন। তবে যখনই মারা যান না কেনো, বিজ্ঞানের জন্য খুলে রেখে গিয়েছিলেন অশেষ সম্ভাবনার দুয়ার। চাঁদের একটি গহ্বরের নামকরণ করা হয়েছে তার নামে। এছাড়া স্পেনের কর্ডোবায় ফিরনাস সেতুসহ অনেক দেশেই রয়েছে তার স্মরণে তৈরি স্থাপনা। ২০১৩ সালে রোলস রয়েস “গোস্ট ফিরনাস মোটিভ” নামে একটি গাড়ির সংস্করনের নামকরণ করে তাঁর সম্মানে।
এক নজরে তাঁর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলী:
- জন্ম: ৮১০ খ্রিস্টাব্দ
- মৃত্যু: ৮৮৭ খ্রিস্টাব্দ
- জাতি: বার্বার, আন্দালুসিয়ান।
- আব্বাস ইবনে ফিরনাসের ল্যাটিন নাম: আরমেন
- প্রথম কে সফলভাবে আকাশে উরেছেন? -আব্বাস ইবনে ফিরনাস
- কত মিনিট তিনি আকাশে উড়েছেন? -প্রায় ১০ মিনিট