সিভি কি?
CV বা সিভি এর পূর্ণরূপ Curriculum Vitae। চাকরির জন্য চাকরির আবেদন করার সময় সিভি জমা দিতে হয় বা পাঠাতে হয় যেখানে চাকরির আবেদন করছেন সেখানে। এই সিভিতে একজন ব্যক্তি কে? কি কি পারেন? কি কি করেছেন? সব কিছু এক জায়গায় করে ফুটিয়ে তুলতে হয় খুব ছোট করে এবং গোছানো ভাবে। শুধু সিভি সুন্দর করে তৈরি করতে না পারার কারণে অনেক চাকরি প্রত্যাশীরাই ডাক পান না ইন্টারভিউ এর জন্য।
সিভিতে যে কাজগুলো করা যাবে না:
স্কুলে আমরা ইংরেজি পরীক্ষায় সিভি লিখতে শিখি, কলেজে বাংলাতেও। সেখানে হয়তো বেশিরভাগ বই এবং বেশিরভাগ স্কুল কলেজেই শেখানো হয় বাবার নাম, মায়ের নাম, বিবাহিত নাকি অবিবাহিত ইত্যাদি যুক্ত করা। পারলে তো উচ্চতা, গায়ের রঙ, কয় ভাই-কয় বোন সবই যুক্ত করে দেয়। এগুলো ভুল। এমনটা করা যাবে না। মনে রাখবে সিভি খুবই ছোট হবে। নতুনদের জন্য সর্বোচ্চ ২ পৃষ্ঠা। এর মধ্যেই আপনি কেনো ওই কাজের জন্য যোগ্য তা বুঝিয়ে দিতে হবে, তাই স্বাভাবিকভাবেই বাবা-মা-স্ত্রীর নাম সেখানে যুক্ত করে জায়গা কমানোর মানে হয় না। চাকরি তারা আপনাকে দেবে, আপনার পরিবারের সদস্যদের না। আপনি বিবাহিত কি না তা জেনেও তাদের কোনো লাভ নেই।
এছাড়া জব অব্জেক্টিভেও ভুল করে থাকেন অনেকে। অনেকেই জব অব্জেক্টিভে খুঁজছি, প্রয়োজন এমন শব্দ অর্থাৎ I need, I am seeking এমন কথা ব্যবহার করেন যা সম্পূর্ণরূপে অনুচিত। খুঁজছি বা প্রয়োজন না বলে বলতে হবে শুধুই কাজ করতে চান ভালোভাবে, কোম্পানির লাভের জন্য, তুলে ধরুন। আবার Looking for position বা looking for a good company এই শব্দগুলোও অনেকে ব্যবহার করে থাকেন যা ভুল। এসব পরিত্যাগ করতে হবে।
CV এবং Resume এর মধ্যে পার্থক্য কি?
যদিও আমাদের সমাজে অনেকেই সিভি এবং রেজুমেকে একই মনে করে, তবে তাদের মধ্যে সূক্ষ্ম পার্থক্য বিদ্যমান। তবে উদ্দেশ্য দুটোর জন্যই একই, নিজের যোগ্যতাকে সুন্দর করে তুলে ধরা। সে বিষয়ে অন্য একদিন আলাপ করা যাবে; আজকের দিনটা সিভির জন্যই দেয়া যাক। তবে এটুকু জেনে রাখুন, CV এবং Resume এর মধ্যে পার্থক্য গঠন, বিবরণ, দৈর্ঘ্য এবং প্রয়োগের স্থানে।
CV কত প্রকার?
সিভি মূলত ৩ প্রকার।
- ক্রনোলজিক্যাল
- ফাংশনাল
- কম্বাইন্ড
ক্রনোলজিক্যাল সিভি:
ক্রনোলজিক্যাল সিভি ব্যবহার করা হয় তখন যখন কেউ কোনো পেশায় বহুদিন ধরে কর্মরত থাকেন এবং নিয়মিত উন্নতি করতে থাকেন। এই ফরমেটের সিভিই সবথেকে বেশি প্রচলিত। এতে সর্বশেষ চাকরির স্থান, দায়িত্ব ও অভিজ্ঞতা, প্রাপ্তি সব কিছু শুরুতেই উল্লেখ করা থাকে। ফলে চাকরির জন্য ইন্টারভিউয়ের জন্য যারা ডাকবে তারা খুব সহজেই আবেদনকারীর যোগ্যতা সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা পেয়ে যায়।
ফাংশনাল সিভি:
এ ধরনের সিভি তৈরি করে থাকে তারা যারা কয়েকটি পেশায় যথেষ্ট ভালোভাবেই দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম হয়েছে। এক্ষেত্রে যে দক্ষতা আপনার সবথেকে বেশি সে দক্ষতাকে শুরুতে এনে এভাবে ক্রম সৃষ্টি করে দেয়া হয়। এটি প্রযোজ্য হবে সাধারণত ৩ ক্ষেত্রে।
- যখন আপনি এমন কাজে যোগ দিতে চাচ্ছেন যেখানে একাধীক কাজ একসাথে করতে হয়/করার সুযোগ আছে/করলে ভালো হবে
- যখন আপনি অনেকদিন গ্যাপ দিয়ে আবার জব সেক্টরে ঢুকতে চাচ্ছেন
- যখন আপনি আপনার জব পরিবর্তন করতে চাচ্ছেন
কম্বাইন্ড সিভি:
- ক্রনোলজিক্যাল এবং ফাংশনের মিশ্রন। এটা দুইভাবে করা যেতে পারে।
- প্রথমে অভিজ্ঞতা গুলো উল্লেখ করে পরে দক্ষতা এবং সফলতা
- ঠিক উলটোটি; অর্থাৎ প্রথমে দক্ষতা ও সফলতা, অতঃপর অভিজ্ঞতা গুলো ধারাবাহিক ভাবে
সিভিতে কি কি রাখব?
সিভিতে যা যা রাখার আছে তা আলাদা আলাদা ভাবে কিছুটা জানানো যাক।
ব্যক্তিগত তথ্য:
১. নাম, ঠিকানা (ডাক) তো অবশ্যই লাগবে
২. বাবার নাম, মায়ের নামের প্রয়োজন পরার কথা না
৩. লিংকড-ইন একাউন্ট সুন্দর ভাবে তৈরি করুন এবং সেখানে এক্টিভ থাকুন। লিংক-ইন আইডি সিভিতে অ্যাড করে দিন।
৪. নিজের তৈরি কিংবা পেইড তবে ভালো পোর্টফোলিও রাখতে পারেন নিজের সম্পর্কিত আপডেটেড তথ্য রেখে। এবং সিভিতে সুন্দর করে তা যুক্ত করে দিন।
৫. দেশের বাইরের কোনো কোম্পানিতে সিভি পাঠালে সেখানে মোবাইল নাম্বারের আগে কান্ট্রি কোড ব্যবহার না করলে তারা আপনার সাথে যোগাযোগ করবে কিভাবে? তাই সবসময়ই ফোন নাম্বারের আগে কান্ট্রি কোড যুক্ত করার অভ্যাস করুন।
ট্রেনিং, ডিগ্রি এবং অনলাইন কোর্স:
১. পাওয়ার পয়েন্ট, এক্সেল বাধ্যতামূলক।
২. গ্রাফিক্স কিংবা ওয়েব ডিজাইনিং কিংবা আর্টিকেল লিখতে এগিয়ে রাখবে আপনাকে।
৩. বিভিন্ন ইন্ডাসট্রিয়াল ট্যুর কিংবা ইনটার্নশীপ করে থাকলে গুছিয়ে সেগুলো (যেগুলো আপনার আবেদন করা চাকরির সাথে সম্পৃক্ত) উল্লেখ করা।
৪. ট্রেনিং এর নাম এবং ট্রেইনারের নামসহ উল্লেখ করা উচিত।
৫. ইংরেজি ভাষাটা খুব ভালোভাবে রপ্ত করা উচিত।
ক্যারিয়ার নিয়ে পরিকল্পনা:
১. আপনার চাকরির ইচ্ছা/আবেদন করার ইচ্চা যদি একাধিক জায়গায় থাকে তবে প্রত্যেক স্থানের জন্য আলাদা আলাদা সিভি তৈরি করুন।
২. ক্যারিয়ার অবজেক্টিভের মধ্যে সরাসরি কাজ করা নিয়ে কথা বলুন। Need, Looking for এসব উল্লেখ করবেন না।
চাকরির বাজারে নতুনদের বা ফ্রেসারদের অভিজ্ঞতা কি দেব?
ফ্রেসাররা অভিজ্ঞতা শূন্য; এটি একটি প্রচলিত ভুল। সঠিক ভাবে লেখাপড়া করে গেলে প্রাইমারি স্কুল থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শেষ করা একজন শিক্ষার্থী অনেক অভিজ্ঞতাই অর্জন করতে পারে। স্কুল জীবন থেকে শুরু করে বিভিন্ন সায়েন্স ফেয়ার, ফেস্ট, অলিম্পিয়াডে অংশ্রহন করা উচিত শিক্ষার্থীদের। একটু বড় হলে এই ধরনের ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট টিমের সাথে থাকা উচিত তাদের। তাহলেই তো কত শত অভিজ্ঞতা তৈরি হয়ে গেলো। এগুলোর বাইরেও আরো স্বেচ্ছাসেবী মূলক কাজ করতে পারেন শিক্ষার্থীর।
রেফারেন্স:
রেফারেন্সের ক্ষেত্রে নিজের আত্মীয়ের মধ্যে কাউকে রাখা অনুচিত। আগে কোথাও কাজ করে থাকলে পূর্বের কর্মস্থলের কোনো সিনিয়রকে রাখা যেতে পারে রেফারেন্সে। আপনার কলেজ বা কলেজের শিক্ষক যদি খুব বেশি পরিচিত হয় তখন আপনার সেই শিক্ষিক/কলেজের কোনো শিক্ষক যে আপনাকে ভালো করে চেনে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষককে রেফারেন্স হিসেবে দেয়া অনেক বেশি যৌক্তিক। তবে হ্যাঁ, মনে রাখতে হবে যে, রেফারেন্সে যাদের রাখবেন তাদেরকে আগে থেকেই অবহিত করে রাখুন এ ব্যাপারে।
সিভির দৈর্ঘ্য কতটুকু হওয়া উচিত:
নতুনদের সিভি ২ পৃষ্ঠার বেশি হওয়া উচিত না। ৫/৬ বছর চাকরি করা চাকরিজীবীরাও ২ পৃষ্ঠাতে থাকতে পারলে ভালো হয়। এর বেশি সময় ধরে চাকরি করে থাকলে তখন পৃষ্ঠা বাড়ানো যেতে পারে।
অনলাইনে কিভাবে সিভি বানাবো?
প্রথমত আপনাকে সবসময়ই সিভিটা বেস্ট এফোর্ট দিয়ে তৈরি করতে হবে। সুতরাং এককভাবেই কোনো সাইটের উপর নির্ভর করা অনুচিত। তবে অনলাইন বিভিন্ন সাইট থেকে সাহায্য নিতেই পারেন।
অনলাইনে সিভি তৈরি করতে পারেন নিচের সাইট গুলো ব্যবহার করে।