Android Developer হওয়ার সম্পূর্ন পথনির্দেশনা আমরা আমাদের এই লেখাটির মাধ্যমে আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চলেছি। এই লেখাটি পড়ে আপনি জানতে পারবেন ঠিক কিভাবে আপনি একজন এনড্রোয়েড ডেভেলপার হয়ে উঠতে পারবেন এবং কোন কোন বিষয়গুলো আপনাকে মাথায় রাখতে হবে।
শুরু করতে গেলে যা যা লাগবে:
১) অন্তত একটি মাঝারি মানের কম্পিউটার।
যেহেতু একটি App তৈরীর পর আমাদের সেটি পরীক্ষা বা test run করতে হয় সেহেতু আমাদের এমুলেটর বা কৃত্রিম ফোন ব্যবহার করতে হয় যা কিনা একটি এনড্রোয়েড ফেনের মত কাজ করে। বিভিন্ন রকম ডিভাইসে একটি App কাজ করবে কিনা সেটা দেখার জন্য Emulator ব্যবহার করাটা অনেকটা সুবিধাজনক হয়। এবং এজন্য ভালো মানের কম্পিউটার অনেক বেশি প্রয়োজন।
তবে এর জন্য যে আপনাকে অনেক টাকা খরচ করতে হবে তেমনটা কিন্তু না। মোটামুটি দুই কোর সমৃদ্ধ প্রোসেসর ও ৪ জিবি র্যাম হলে আপনি Android Studio কোনমতে চালিয়ে নিতে পারবেন। তবে আমার রেকমেনডেশন থাকবে র্যাম যাতে ৮ জিবি হয় আর প্রোসেসর intel brand এর হলে ভালো কারন এতে করে আপনাকে থার্ডপার্টি এমুলেটর ব্যবহার করতে হবে না।
২) একটি অ্যান্ড্রয়েড ফোন
একটি App তৈরী ততক্ষন পর্যন্ত সম্পূর্ন হয়না যতক্ষণ পর্যন্ত সেটা আসল ফোনে পরীক্ষা করা হয়। এজন্য অবশ্যই একটি ফোন আপনার থাকতে হবে যেটায় Android OS বিদ্যমান।
৩) একটি USB cable
যা আপনার ফোনকে কম্পিউটারের সাথে যুক্ত করবে। শুনে হাস্যকর মনে হলেও এর গুরুত্ব অনেক। একটি ভালো মানের তার আপনার কাজকে অনেক সহজ করে দেবে!
যেসকল বিষয় শিখতে হবে:
২) জাভা অথবা কটলিন (Java or Kotlin)
আমরা মূলত দুটি পোগ্রামিং ভাষার মাধ্যমে App বানাতে পারি। মূলক এটা প্রয়োজন হয় যখন অপনি কোন কাজ সম্পাদন করতে চান। ধরুন আপনি একটা বাটন দিয়ে ফোনের টর্চ চালু করতে চান, তো সেক্ষেত্রে আপনার জাভা (Java) অথবা কটলিন (kotlin) দিয়ে বাটনটিকে পোগ্রাম করতে হবে যাতে সেটিতে ক্লিক করলে কোন একটি ঘটনা ঘটে, যেমন: টর্চ জ্বলে ওঠা।
এখন প্রশ্ন হলো জাভা নাকি কটলিন, কোনটা শিখবো? সহজ উত্তর হলো আপনি যদি পোগ্রামিং এর বেসিক জেনে থাকেন তবে যেকোনটা দিয়ে শুরু করতে পারেন। আর যদি আপনি একদম নতুন হন তবে কটলিন দিয়ে শুরু করতে পারেন কারন এটি সহজ। তবে জাভা অনেক পুরোনো programming language হওয়ার কারনে আপনি যেকোন ধরনের সাহায্য খুব সহজে Google করে খুজে পাবেন। তবে কটলিন যেহেতু Google নিজে ডেভেলপ করছে সেহেতু Official Documentation অনেক সহজ ও সরলভাবে সাজানো হয়েছে।
শেখার জন্য আপনি YouTube এ বিভিন্ন Website এর সাহাজ্য নিতে পারেন। তবে মনে রাখবেন টাকা দিয়ে কোর্স কেনার আগে Online এ ভালো মানের কোর্স যদি ফ্রিতে পেয়ে যান তবে টাকা খরচের দরকার কি?
২) Android Studio শিখতে হবে
এটা মূলত একটি IDE (Integrated development environment) বা যেটাতে আপনি সমস্ত কোড করবেন, ডিজাইন করবেন, কনটেন্ট যোগ করবেন। কিভাবে এখানে ফাইল খুলতে হয়, ছবি যোগ করতে হয়, লেআউট নির্ধারন করতে হয় এসব খুঁটিনাটি বিষয় সম্পর্কে আপনার জানতে হবে। আর এর সাথে আপনাকে জানতে হবে কিভাবে বিভিন্ন সময় ভুল ভ্রন্তিগুলো নির্নয় করা যায় অর্থাৎ ডিবাগিং সম্পর্কে ধারনা থাকতে হবে। Android Studio Download
৩) Android App এর ভিতরে চলমান বিষয় জানতে হবে
এটা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ন একটি বিষয়। একটি App এর বিভিন্ন পর্যায়ে কি কি কাজ ঘটে সেটা জানাটা অনেক দরকার। ধরুন যখন আপনি একটা App open করেন তখন তাতে On start event শুরু হয় এবং App টা চালু হয়। এভাবে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ঘটনা ঘটে যাতেকরে App তার কাজগুলো সম্পূর্ন করতে পারে। এসকল বিষয়ে সঠিক জ্ঞান থাকতে হবে। যদিও আপনি এটা জানতে পারবেন শিখতে শুরু করার পর পরই। আর অবশ্যই ফাইল সিস্টেম সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে যেমন Main Activity র কোন অংশে কি থাকে। Java ও Xml file কিভাবে নির্দেশ করতে হয়। এধরনের বিষয়গুলো আপনি শুরুতে শিখে নিয়ে শেখা শুরু করতে পারেন অথবা শিখতে থাকাকালীন এটার বিষয়ে জানতে পারেন।
৪) Xml সম্পর্কে জানা ও পরদর্শি হওয়া
একটা সময় ছিল যখন interface ডিজাইন করার জন্য xml সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হতো। এখনও এর ব্যবহার আছে তবে Android Studio তে Drag and Drop ব্যবস্থা করার পর থেকে অনেক অংশে xml নতুন করে লিখে সম্পূর্ন ডিজাইন করার ঝামেলাটা অনেক অংশে কমে গেছে। তবুও কিছু ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই নিজের হতে xml লিখে ডিজাইন করতে হবে। লিনিয়ার লেআউট কি, রেলেটিভ কি, র্যাপ কনটেন্ট কি, প্যাডিং, হেডিং, মারজিন এসব বিষয়ে ভালোভাবে জানতে হবে। এটা নিশ্চিত থাকতে পারেন যে আপনাকে খুব একটা সময় এটা শেখার পিছনে ব্যায় করতে হবে না, খুব সহজে আপনি xml শিখতে পারবেন।
৫) Firebase অথবা সার্ভার সাইড কাজ শেখা
App থেকে বিভিন্ন ডাটা ডিভাইস ব্যতীত কোন জায়গায় জমা রাখার জন্য বা User এর কাছে কোন তথ্য পাঠানোর জন্য Firebase অথবা সার্ভারের গুরুত্ব অনেক। তবে আমি মনে করি Firebase শেখাটা সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ। এটি ব্যবহারে যেমন সহজ তেমনি শুরুতে এটাকে আপনি ফ্রিতেও ব্যবহার করতে পারবেন তবে User বাড়ার সাথে সাথে আপনার কিছু মাসিক বিল দেওয়ার প্রয়োজন পড়বে। তবে শিখার জন্য Firebase আদর্শ।
৬) গিটহাব ও গিট শিখতে হবে।
একজন ডেভেলপার হিসাবে গিটহাব (Github), গিট (Git) সম্পর্কে স্পস্ট ধারনা থাকাটা ১০০% প্রয়োজন। গিটহাব হলো এমন একটি প্লাটফর্ম যা আপনাকে আপনার প্রোজেক্টগুলো সংরক্ষনে সাহায্য করবে, সেগুলো এডিট, শেয়ার করা ও অন্যরা যাতে তা ব্যবহার করতে পারে এমন অনেক বিশেষ কারনে Github ব্যবহার করা হয়।
Git মূলত সাহাজ্য করে আপনার Software এর বিভিন্ন ভার্সন কন্ট্রোল করার জন্য। ধরুন আপনি আপনার বানানো কোন App এ ২০২১ সালে ক্যামেরা রিলেটেড সব কিছু দিয়ে পাবলিশ করলেন। ২০২২ সালে অপনি তাতে AI (Artificial Intelligence) ও ML (Machine Learning) বিষয়ক কিছু জিনিস যোগ করলেন তো সেক্ষেত্রে ২০২২ সালের এই APP টি কিন্তু আগেরটা থেকে ভিন্ন অর্থাৎ বলা যায় ভিন্ন ভার্সনের। এই ভার্সন তথা বিভিন্ন স্টেপ এর কপি রাখার জন্য গিট তথা ভার্সন কন্ট্রোল অনেক গুরুত্বপূর্ন। ডেভেলপার হিসাবে এসব জানাটা আপনার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ন।
৭) ইন্টারনেটে সঠিকভাবে সার্চ করা।
অনেকে হয়তবা বলতে পারেন এ আর কি বিষয়। কিন্তু এটা আমাদের সময়, আত্মবিশ্বাস উভয় বাঁচাবে। ধরুন অপনি কোন একটা প্রোজেক্ট রান করতে গিয়ে দেখলেন কোন একটা Error message দেখাচ্ছে। এখন আপনি যদি সঠিকভাবে খুজে না বের করতে পারেন যে সমস্যাটা কোথায় তাহলে অপনি অনেক বড় সমস্যায় পড়ে যাবেন যা কিনা আপনার সময় নষ্ট করবে। এক্ষেত্রে আপনি যদি Error code দিয়ে গুগল করেন তবে সহজে বের করতে পারবেন যে সমস্যা কোথায়।
যেভাবে আয় করা যাবে।
আয় করাটা অনেক গুরুত্বপূর্ন কারন দিনশেষে আমাদের সবারই টাকার প্রয়োজন হয়। সেক্ষেত্রে শুধুমাত্র তখনই আমরা আয় করতে পারব যখন আমরা ভালোভাবে কাজ শিখে কোন একটা প্রোজেক্টকে দাড় করাতে সক্ষম হবো। এক্ষেত্রে আয় করার বেশ কিছু পদ্ধতি আছে যা তুলে ধরা হলো।
ক) Ads দেখিয়ে আয়।
ধরুন আপনি একটি App তৈরী করে Play Store বা Amazon app store এ পাবলিশ করেছেন। আপনার App টি প্রতিদিন ২ হাজার মানুষ ব্যবহার করেন। আপনি আপনার App এর মাধ্যমে Google Ad Mobs বা facebook ads এর সাহায্যে Ad দেখাতে পারেন। প্রতি হাজার ইমপ্রেশন এ আপনাকে নির্দিষ্ট পরিমানে অর্থ প্রদান করা হবে, তবে এ পরিমান বছরের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন হয়। আর কেউ যদি আপনার App এ দেখানো AD এ Click করে তবে তার জন্যও আপনাকে আলাদা অর্থ দেওয়া হবে। নিজে নিজের App এ দেখানো AD এ ক্লিক করা থেকে বিরত থাকতে হবে বা বন্ধুদের দিয়েও একাজ করা যাবে না, এতে করে account ব্যান করা হবে।
খ) স্পন্সার থেকে আয়।
ধরুন আপনার কোন একটি এ্যাপ অনেক বেশি পরিমানে ব্যবহার করা হচ্ছে। তো সে ক্ষেত্রে আপনার কাছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের প্রোডাক্ট বা সার্ভিস প্রোমোশনের জন্য আপনার App এ তা দেখানোর জন্য বলতে পারে। এর জন্য আপনাকে টাকা দেওয়া হবে। এ ধরনের কাজ খুব সহজে টাকা আয়ের জন্য আদর্শ। তবে অবশ্যই App ভালো মানের হতে হবে।
গ) Affiliate Marketing করে আয়।
ভালো পরিমানে ব্যবহারকরী থাকলে অবশ্যই আপনি অ্যাফিলিয়েট মারকেটিং করতে পারেন। ধরুন আপনার App এ প্রতিদিন ৩ হাজার ব্যবহারকারী ঢুকে। যখন তারা ব্যবহার শেষে বের হয়ে যাবে ঠিক তখন আপনি তাদের সামনে একটি প্রোডাক্টের ছবি দেখালেন ও অকর্ষনীয় কোন অফারের বিষয়ে জানালেন। যখন কেউ সে ছবিতে ক্লিক করবে তখনই সে চলে যাবে কোন একটা ই-কমার্স ওয়েবসাইটে। আর যদি সে কিছুদিনের মধ্যে (ব্রাউজার ক্যাশ মেমরি পরিষ্কার করার আগে) প্রোডাক্টটি কিনে তবে অপনি ভালো অর্থ পাবেন ঐ প্রোডাক্ট বিক্রির জন্য। এর জন্য অবশ্যই সে ওয়েবসাইটের Affiliate program এ নিজের নাম যুক্ত করতে হবে তথা অংশগ্রহন করতে হবে। এরপর আপনি যেকোন প্রোডাক্ট বেছে নিয়ে তার কোড আপনার App এ যুক্ত করতে পারেন। ফায়ারবেস অথবা সার্ভার যেকোন পদ্ধতিতে আপনি user কে অফার দেখাতে পারেন। এই উপায়ে অসংখ্য মানুষ তাদের App থেকে অর্থ উপার্যন করছেন।
ঘ) ফ্রিলান্সিং করে।
যদিও আমি এ পদ্ধতিকে তেমন ভালোভাবে দেখিনা কারন এক্ষেত্রে আপনাকে অন্য কারো জন্য App তৈরী করতে হবে। তবে আপনি যদি শুধু App তৈরী ছাড়া আর কোন বিষয়ে মাথা না ঘামাতে চান তবে এটি আপনার জন্য অদর্শ। বিভিন্ন ফ্রিলান্সিং প্লাটফর্মে account খুলে আপনি কাজ পেতে পারেন।
চলুন কিছু নিয়মিত করা প্রশ্নের উত্তর দেওয়া যাক।
FAQ:
i) Google Play store এ App publish করার জন্য কত টাকা লাগে?
প্রথমত আপনাকে একটি Play Console account খুলতে হবে। যার জন্য অপনাকে ২৫ ডলার বা এর কাছাকাছি টাকা খরচ করতে হবে। এই ফি শুধুমাত্র একবারের জন্য।
ii) ফ্রিতে Android App publish করা যায় কোথায়?
Amazon app store, Apk pure এর মত আরো বেশ কিছু জায়গায় আপনি ফ্রিতে app publish করতে পারবেন। এছাড়া নিজের website এ App বিষয়ে বিস্তারিত লিখে Google drive বা Dropbox এর share link দিয়ে দিতে পারেন। তবে আমি মনে করি ভালো App হলে play store এ অবশ্যই publish করা উচিত। অনেক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান আছেন যারা নিজেদের play console account এ অন্যদের app নির্দিষ্ট টাকার বিনিময়ে পাবলিশ করেন। তবে নিজের অ্যাকাউন্ট থাকাটা সবচেয়ে ভালো।
iii) Android Development শিখতে কতদিন সময় লাগতে পারে?
এটা নির্ভর করে আপনার শেখার উপর। আপনি কতটা তাড়াতারি বুঝতে পারেন তার উপর। আর প্রযুক্তির প্রতি আপনার ভালোবাসাটাও অনেক গুরুত্বপূর্ন। তবে একজন সাধারন ব্যক্তির প্রতিদিন ২-৩ ঘন্টা করে ৫-৬ মাস লাগতে পারে পুরোপুরি শিখতে। এরপরও শেখার শেষ নেই। নতুন প্রযুক্তি আসতে থাকবে, তাদের যুক্ত এ ব্যবহার করা শিখে যেতে হবে।
আশা করি আপনাদেরকে আমি Android Development বিষয়ে বুঝাতে সক্ষম হয়েছি। কোন ধরনের প্রশ্ন থাকলে কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না। আমাদের ইমেইল সাবসক্রিপশন অপশন অন করুন যেকোন নতুন লেখা সবার আগে পড়ার জন্য। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।