১. আদর্শ সপুষ্পক উদ্ভিদে কয়টি অংশ থাকে?
- কাণ্ড
- মূল
- পাতা
- ফুল এবং
- ফল
২. একটি আদর্শ সপুষ্পক উদ্ভিদের গঠন ব্যাখ্যা কর।
একটি আদর্শ সপুষ্পক উদ্ভিদ মূল, কাণ্ড, পাতা, ফুল এবং ফল নিয়ে গঠিত। এদের মধ্যে কাণ্ডে থাকা পর্ব এবং পর্বমধ্যের সাথে শীর্ষ মুকুল। ফুল পাতার কক্ষে উৎপন্ন হয়। এই ফুলে বৃতি, ফল, পুংকেশর এবং গর্ভাশয় থাকে। ছোট করে একটি আদর্শ সপুষ্পক উদ্ভিদের গঠনের জন্য এটুকুই যথেষ্ট। তবে বিস্তারি তাইলে এর সাথে কাণ্ড, পাতা, ফুল, ফল এবং মূলের বিস্তারিত ব্যাখ্যা করে দিতে হবে।
৩. কাণ্ড কাকে বলে?
উদ্ভিদের প্রধান মূলের সাথে মাটির উপরে যে অংশটি লাগানো থাকে তাকেই উদ্ভিদের কাণ্ড বলে। কাণ্ড একটি গাছের পাতা এবং শাখা-প্রশাখার ভর বহন করে থাকে।
৪. ফল কী?
ঝড়ে যাওয়া ফুলের গোড়ায় ফুলের যে অংশটি থেকে যায় তা বড় হয়ে যা সৃষ্টি করে তাই ফল। অন্যভাবে বলা যায়, গর্ভাশয় বড় হয়ে যা হয়, তাই ফল।
৫. একটি গাছের মূলে কয়টি অংশ থাকে?
- মূলটুপি বা মূলত্র
- বর্ধিষ্ণু অঞ্চল
- মূলরোম
- স্থায়ী অঞ্চল
৬. মূলরোম, মূলটুপি এবং মূলত্র বলতে কী বুঝ?
একটি উদ্ভিদের মূলের শেষপ্রান্তে টুপির মতো যে অংশটি থাকে, সেটিই মূলটুপি বা মূলত্র। মূলটুপি এবং মূলত্র একই জায়গার ভিন্ন নাম। এরা আলাদা কিছু না। মূলের মূলত্রের পেছনে যে বর্ধিষ্ণু অঞ্চল থাকে তার পেছনে থাকা সূক্ষ্ম লোমশ অঞ্চলটিই মূলরোম অঞ্চল।
৭. মূল কত প্রকার এবং কী কী?
উদ্ভিদের মূলকে তার উৎপত্তি এবং অবস্থানের উপর ভিত্তি করে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। এরা হলো:
২. অস্থানিক মূল।
৮. স্থানিক মূল এবং অস্থানিক মূলের মধ্যে পার্থক্য লিখ।
৯. স্থানিক মূল কাকে বলে?
যে মূল ভ্রূনমূল থেকে বৃদ্ধি পেয়ে সরাসরি মাটির ভিতর প্রবেশ করে শাখা প্রশাখা বিস্তার করে, তাকে স্থানিক মূল বলে।
১০. অস্থানিক মূল কাকে বলে?
যে মূল ভ্রূনমূল থেকে উৎপন্ন না হয়ে কাণ্ড ও পাতা থেকে উৎপন্ন হয়, তাকে অস্থানিক মূল বলে।
১১. অস্থানিক মূল কত প্রকার?
অস্থানিক মূল দুই প্রকার। যথা: ক) গুচ্ছ মূল এবং খ) অগুচ্ছ মূল।
১২. গুচ্ছ মূল ও অগুচ্ছ মূল বলতে কী বুঝ?
গুচ্ছ মূল ও অগুচ্ছ মূল অস্থানিক মূলের দুটি প্রকারভেদ। যেসকল মূল কাণ্ডের নিচের দিকে এক গুচ্ছ সরু মূল সৃষ্টি করে তারা গুচ্ছ মূ। যেমন নারিকেল, ধান, ঘাস, সুপারি ইত্যাদি। অন্যদিকে যেসব মূল একজায়গায় গাদাগাদি করে গুচ্ছাকারে জন্মায় না, পরষ্পর আলাদা থাকে তারা অগুচ্ছ মূল। যেমন কেয়া গাছে ঠেশমূল, বটের ঝুরিমূল ইত্যাদি।
১৪. মূলের কাজগুলো লিখ।
- মূল উদ্ভিদকে শক্তভাবে মাটির সাথে আটকে রাখে।
- মূল মাটি থেকে পানি ও খনিজ পদার্থ শোষণ করে।
১৫. উদ্ভিদের কাণ্ডের অংশুলোর নাম লিখ।
- পর্ব
- পর্বমধ্য
- মুকুল
১৬. পর্ব এবং পর্বমধ্য বলতে কী বুঝ?
পর্ব এবং পর্বমধ্য উদ্ভিদের কাণ্ডের দুটি অংশ। পর্ব হচ্ছে কাণ্ডের যে স্থান থেকে পাতা বের হয় তা। পর্বকে সন্ধিও বলা হয়। অন্যদিকে পর্বমধ্য হলো পাশাপাশি দুটি পর্বের মধ্যবর্তী অংশটি।
১৭. পত্রকক্ষ কাকে বলে?
উদ্ভিদের কাণ্ডের সাথে পাতা যে কোণ সৃষ্টি করে, তাকে পত্রকক্ষ বলে। এখান থেকেই মুকুল সৃষ্টি হয়।
১৮. কাক্ষিক মুকুল কী?
পত্রকক্ষে জন্ম নেয়া মুকুলকে কাক্ষিক মুকুল বলে।
১৯. উদ্ভিদের কাণ্ড কত প্রকার এবং কী কী?
- সবল কাণ্ড এবং
- দুর্বল কাণ্ড
২০. সবল কাণ্ড এবং দুর্বল কাণ্ডের মধ্যাকার পার্থক্য লিখ।
ক) সবল কাণ্ড শক্ত, দুর্বল কাণ্ড শক্ত না।
খ) সবল কাণ্ড গাছকে খাড়াভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে সাহায্য করে। কিন্তু দুর্বল কাণ্ড সোজাভাবে দাঁড়াতে পারে না।
গ) নারিকেল, তার, সুপারির কাণ্ড সবল কাণ্ড এবং ঘাস, সিম ইত্যাদির কাণ্ড দুর্বল কাণ্ড।
২১. সবল কাণ্ড কত প্রকার এবং কী কী?
- অশাখ কাণ্ড
- শাখান্বিত কাণ্ড
- মঠ আকৃতি
- গম্বুজ আকৃতি
- তৃণ কাণ্ড
২২. অশাখ কাণ্ড কাকে বলে?
যেসকল সবল কাণ্ডের শাখা থাকে না, তাকেই অশাখ কাণ্ড বলে।
২৩. শাখান্বিত কাণ্ডের প্রকারভেদ ব্যাখ্যা কর।
শাখান্বিত কাণ্ড তিন প্রকার।
ক) মঠ আকৃতি: কোনো কোনো গাছের প্রধান কাণ্ডটি থেকে এমনভাবে শাখা প্রশাখার সৃষ্টি হয় যে, স্পূর্ণ গাছটিকেই একটি মঠের মতো দেখায়, সেসকল কাণ্ডই মঠ আকৃতির কাণ্ড।
খ) গম্বুজ আকৃতি: কোনো কোনো উদ্ভিদের প্রধান কাণ্ডটি খাটো এবং মোটা হয় এবং শাখা-প্রশাখাগুলো এমনভাবে এই কাণ্ডে বিন্যস্ত হয় যে গাছটিকে গম্বুজের মতো দেখায়।
গ) তৃণ কাণ্ড: উদ্ভিদের তৃণ কাণ্ডের পর্ব ও পর্বমধ্য স্পষ্ট এবং পর্ব থেকে অস্থানিক মূল সৃষ্টি হয়।
২৪. ক্রিপার, ট্রেইলার এবং আরোহিনী বলতে কী বুঝ?
ক্রিপার: এসব কাণ্ড মাটির উপর দিয়ে সমান্তরালভাবে বৃদ্ধি পায়। যেমন: ঘাস।
ট্রেইলার: এসব কাণ্ড মাটির উপরে ছড়িয়ে পড়ে কিন্তু পর্ব থেকে মূল বের হয় না। যেমন: মটরশুঁটি।
আরোহিণী: এসব কাণ্ড কোনো অবলম্বনকে আঁকরে ধরে উপরের দিকে বেড়ে ওঠে। যেমন: শিম।
২৫. কাণ্ডের কাজগুলো লিখ
- উদ্ভিদের কাণ্ড পাতা, ফুল, ফল, শাখা, প্রশাখার ভর বহন করে থাকে।
- কাণ্ড শাখা-প্রশাখা ও পাতাকে আলোর দিকে বাঁকিয়ে দেয় যাতে করে সূর্যের আলো যথাযথভাবে পেতে পারে।
- কাণ্ড শোষিত পানি ও খনিক লবণ পরিবহন করে থাকে।
- পাতায় প্রস্তুত খাদ্যকে কাণ্ডই সারাদেহে ছড়িয়ে দেয়।
- কচি অবস্থায় সবুজ কাণ্ড নিজেই কিছুটা খাদ্য প্রস্তুত করে থাকে।
২৬. একটি পাতার অংশ কী কী?
- পত্রমূল
- বৃন্ত বা বোঁটা
- পত্র ফলক
২৭. পত্রমূল কাকে বলে?
পাতার যে অংশটি কাণ্ড বা শাখা-প্রশাখার গায়ে যুক্ত থাকে, তাকেই পত্রমূল বলে।
২৮. বৃন্ত বা বোঁটা কাকে বলে?
পাতার দন্ডাকার অংশটিকেই বৃন্ত বা বোঁটা বলে।
২৯. পত্র ফলক কাকে বলে?
পাতার বৃন্তের উপরে যে চ্যাপ্টা সবুজ অংশটি থাকে, তাকেই পত্র ফলক বলে।
৩০. বৃন্তের কাজ কী?
পাতার বৃন্ত বা বোঁটা পত্রফলককে এমনভাবে ধরে রাখে যাতে সবচেয়ে বেশি সূর্যের আলো পাওয়া সম্ভব হয়। এছাড়া কাণ্ড এবং ফলকের মধ্যে পানি, খনিজ লবণ ইত্যাদির আদান প্রদানও বৃন্তের মাধ্যমেই হয়ে থাকে।
৩১. পাতার সাধারণ কাজ কী?
- খাদ্য তৈরি করা
- গ্যাসের আদান প্রদান করা
- উদ্ভিদের দেহে থাকা অতিরিক্ত পানি বাষ্পাকারে বাইরে বের করে দেয়া যাকে প্রস্বেদন বলে।
৩২. সরল পত্র এবং যৌগিক পত্রের মধ্যে পার্থক্য লিখ।
ক) সরল পত্র একটি অখন্ড বা আংশিক খণ্ডিত ফলক নিয়ে গঠিত। অন্যদিকে যৌগিক পত্র একাধিক পত্রক নিয়ে গঠিত।
খ) সরল পত্রে কাক্ষিক মুকুল থাকে কিন্তু যৌগিক পত্রে তা থাকে না।
গ) সরল পত্রের পত্রমূলে উপপত্র থাকে কিন্তু যৌগিক পত্রের পত্রমূলে উপপত্র থাকে না।
৩৩. মানবজীবনে মূল, কাণ্ড এবং পাতার প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা কর।
মানবজীবনে মূলের প্রয়োজনীয়তা/মূলের ব্যবহার
বিভিন্ন উদ্ভিদের মূলকে আমরা সবজি হিসেবে গ্রহন করে থাকি। যেমন মূলা, গাজর ইত্যাদি। অনেক উদ্ভিদের মূল থেকে ঔষধও তৈরি হয়ে থাকে। যেমন: শতমূলী।
মানবজীবনে কাণ্ডের প্রয়োজনীয়তা/কাণ্ডের ব্যবহার
গোল আলু, আদা, পুঁইয়ের মতো অনেক উদ্ভিদের কাণ্ডই আমরা খাদ্য হিসেবে গ্রহন করে থাকি। খেজুর বেং আখের কাণ্ড থেকে রস পাওয়া যায়। বড় বড় কাণ্ড থেকে আমরা আসবাবপত্র তৈরি করি, গ্রামাঞ্চলের লোকেরা ঘরবাড়ি নির্মান করে থাকে। পাটের কাণ্ড থেকে পাওয়া আঁশ দিয়ে দড়ি, ছালা ইত্যাদি তৈরি করা হয়। পাটের কাণ্ডের আঁশ দিয়ে প্লাস্টিকের বিকল্পও তৈরি করেছেন বাংলাদেশি বিজ্ঞানীরা।
মানবজীবনে পাতার প্রয়োজনীয়তা/পাতার ব্যবহার
লালশাক, পালংশাকের মতো আরও অনেক ধরনের শাক আমরা খাদ্য হিসেবে গ্রহন করে থাকি যা মূলত উদ্ভিদের পাতা। কলা পাতা, তাল পাতা থেকে পাওয়া আঁশ দিয়ে বিভিন্ন দ্রব্যাদি বানানো যায়। তালপাতা, গোলপাতার ছাউনি দিয়ে ঘরও তৈরি করা যায়। খেজুর পাতা দিয়ে পাটি তৈরি করা যায়, তালপাতার পাখা তৈরি হয়। অনেক গাছের পাতা থেকে মূল্যবান ঔষুধও তৈরি করা হয়ে থাকে।
৩৪. উদ্ভিদ ও প্রাণির প্রতি আমাদের আচরণ কেমন হওয়া উচিত?
উদ্ভিদ ও প্রাণির প্রতি আমাদের আরও যত্নশীল আচরণ করা উচিত। অকারণে গাছ কাটলে নিজেদেরই ক্ষতি হবে। গাছ কাটা তো দূরে থাক, আমরা প্রয়োজন ছাড়া গাছের ডালও ভাঙবো না। পশু পাখির প্রতিও আমাদের সদাচরণ করতে হবে।
৩৫. পত্রবৃন্তের অবস্থান কোথায়?
পত্রমূল ও পত্রফলকের মাঝামাঝি জায়গায় এর অবস্থান।
৩৭. সরল পত্রের প্রধান শিরাকে কী বলে?
সরল পত্রের প্রধান শিরাকে মধ্যশিরা বলা হয়।
৩৮. যৌগিক পত্রের র্যাকিস কী?
যৌগিক পত্রের অণুফলক বা পত্রকগুলো যে দণ্ডে সাজানো থাকে তাকেই র্যাকিস বা অক্ষ বলে।
৩৯. বিটপ কাকে বলে?
উদ্ভিদের যে অংশগুলো মাটির উপরে থেকে থাকে তাদেরকে একসাথে বিটপ বলে। কাণ্ড, পাতা, ফুল এবং ফলকে সাধারণত বিটপ বলে একসাথে।
৪০. শীর্ষ মুকুল কাকে বলে?
যে মুকুল কাণ্ড বা শাখার অগ্রভাগে জন্মে তাকে শীর্ষ মুকুল বলে।