অ্যাভোগেড্রোর/অ্যাভোগাড্রোর সূত্র গ্যাসের আয়তন ও অণুর সংখ্যা সম্পর্কিত একটি সূত্র। ১৮১১ খ্রিস্টাব্দে ইতালিয়ান বিজ্ঞানী আমেদেও অ্যাভোগাড্রো (৯ আগস্ট ১৭৭৬ - ৯ জুলাই ১৮৫৬) এই সূত্রটি প্রস্তাব করেন। অ্যাভোগাড্রোর পুরো নাম লরেঞ্জো রোমানো আমেদেও কার্লো অ্যাভোগাড্রো।
অ্যাভোগেড্রোর সূত্র
"স্থির তাপমাত্রা ও চাপে একই আয়তনের মৌলিক ও যৌগিক সকল গ্যাসেই সমান সংখ্যক অনু থাকে।"
এই সূত্র বা প্রকল্পটিকে অন্যভাবে বলা যায়, "স্থির তাপমাত্রা ও চাপে যে কোনো গ্যাসের (মৌলিক ও যৌগিক) সমান সংখ্যক অণু সমান আয়তন দখল করে।
বিজ্ঞানী অ্যাভোগাড্রো এই কথাটুকুর দ্বারা কী বুঝাতে চেয়েছেন? এই সূত্রের মানেটা কী? এসব জানা যাক এবার তবে।
অ্যাভোগাড্রোর সূত্রের ব্যাখ্যা
অ্যাভোগাড্রো বলেছিলেন " তাপমাত্রা ও চাপ যদি পরিবর্তিত না হয়, তবে কোনো সকল গ্যাসের একই আয়তনে সমান সংখ্যক অণু/পরমাণু/কণা থাকে।" একটু ব্যাখ্যা করে বুঝানো যাক।
ধরে নিলাম দুটি বেলুন নেয়া হলো যাদের উভয়েরই তাপমাত্রা এবং চাপ সমান। এমন দুটি বেলুনের ভেতরেই হাইড্রোজেন গ্যাস আছে। দুটি বেলুনের আয়তনই যদি এখন সমান হয়, তবে উভয়ের মধ্যেই সমান সংখ্যক অণুও থাকবে।
আবার একটি বেলুনে হাইড্রোজেন গ্যাস, অন্য বেলুনে অন্য যেকোনো গ্যাসও যদি থাকে তবুও তাদের সমান আয়তনে সমান সংখ্যক অণুই থাকবে।
অ্যাভোগাড্রোর সূত্র থেকে আয়তন ও অণুর সংখ্যার মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন
অ্যাভোগাড্রোর সূত্র বলে, সমান আয়তনে সমান অণুর কথা (তাপমাত্রা ও চাপ নির্দিষ্ট থাকলে)। এখন যদি আয়তন কমে তবে কী হবে?
ধরা যাক, আমার কাছে দুটি পাত্র আছে। দুটি পাত্রেরই তাপমাত্রা (T) এবং চাপ (P) সমান। উভয় পাত্রের আয়তন (V) যদি সমান হয় এবং প্রথম পাত্রে যদি ১০০ টি অণু থাকে তাহলে দ্বিতীয় পাত্রেও ১০০টি অণুই থাকার কথা। ১০০টিই থাকবে। এখন যদি দ্বিতীয় পাত্রের আয়তন কমিয়ে অর্ধেক (V/2) করে দেয়া হয় তবে কী হবে? এবার অণুর সংখ্যাও অর্ধেক হয়ে যাবে। অণু থাকবে ৫০টি। তেমনি আয়তন যদি বাড়িয়ে 2V করে দেয়া হয়, তবে অণুর সংখ্যাও হবে 2n বা ২০০টি।
অর্থাৎ, গ্যাসের আয়তন বাড়লে অণু/পরমানু/কণার সংখ্যা বাড়বে, আর আয়তন কমলে অণু/পরমাণু/কণার সংখ্যা কমবে। অর্থাৎ, নির্দিষ্ট তাপমাত্রা ও চাপে আয়তন ও অনুর সংখ্যার মধ্যে সম্পর্কটি সমাণুপাতিক।
`V \propto n` যেখানে T এবং P স্থির।
অ্যাভোগাড্রোর সূত্রের ইতিহাস
একদম শুরুতেই বলেছি যে ১৮১১ (অনেকে ১৮১২ সালের কথাও বলে থাকেন) সালে ইতালীয় বিজ্ঞানী অ্যাভোগাড্রো এই সূত্রটি প্রদান করেন। তবে তার এই সূত্রটিকে সে সময় প্রমাণ করার মতো কোনো উপায় তার সামনে কিংবা অন্য কারো সামনে ছিলো না। ফলস্বরূপ সে সময়ের অধিকাংশ বিজ্ঞানীরাই তার এই মতকে গ্রহন করেননি। অনেকেই এটাকে শুধু হাইপোথিটিক্যাল ভেবে ফেলে রেখেছিলো। কোনো গুরুত্ব না পাওয়া অবস্থাতেই ১৮৫৬ সালে অ্যাভোগাড্রো মারা যান। তার মৃত্যুর মাত্র ৪ বছরের মাথাতেই ১৮৬০ সালে তার সূত্র সত্য বলে প্রমাণিত হয়।
অ্যাভোগাড্রোর সূত্রের ব্যবহার
অ্যাভোগাড্রোর সূত্র থেকেই পরবর্তীতে পদার্থবিজ্ঞান এবং রসায়নের অনেক নতুন নতুন কাজ হতে থাকে। এই সূত্র না আসলে এসব কিছুই হয়তো থমকে থাকতো। এই সূত্র থেকেই পদার্থের পরিমাণের একক মোল বা mole এর ধারণা আসে, অ্যাভোগাড্রো সংখ্যার ধারণা আসে। মোলের ধারণা ছাড়া বিজ্ঞানের জগতে অনেক কিছুই সম্ভব হতো না। অণু, পরমাণু কিংবা কণা তো আর কেজি, হালি, ডজন কিংবা রিম হিসেবে পরিমাপ করা যায় না আবার এটি এতোই ছোট যে একে একটি একটি করেও গণনা করা যায় না। তাই তো ৬০২,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০ টি অণু/পরমাণু/কণার একটি গ্রুপকে একসাথে মোল হিসেবে গণনা করে কাজ করতে হয়। আর এই ধারণাটিও অ্যাভোগাড্রোর সূত্র থেকেই এসেছে।
অ্যাভোগাড্রোর সংখ্যা বা ধ্রুবক
ওই যে বললাম, ৬০২,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০ টি অণু/পরমাণু/কণার একটি গ্রুপকে একসাথে মোল হিসেবে গণনা করে কাজ করতে হয়, এই ৬০২,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০ সংখ্যাটিই অ্যাভোগাড্রোর সংখ্যা। একে ১০ এর সূচকীয় পদ্ধতিতেই লেখা হয়ে থাকে আর আমরা ওভাবেই বেশি পরিচিত। অ্যাভোগাড্রোর সংখ্যাটি তাহলে `6.02\times10^{23}`। উল্লেখ্য যে, অ্যাভোগাড্রোর সংখ্যাটি অ্যাভোগাড্রো আবিষ্কার করেননি। তবে তার আইডিয়া থেকেই যেহেতু এটি এসেছে, তাই এটিকে তার নামেই নামকরণ করা হয়।