অনার্স লেভেলের ইতিহাস বিষয়ক যতগুলো প্রশ্ন রয়েছে তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রশ্নের মধ্যে বঙ্গভঙ্গ বিষয়ক প্রশ্নগুলো পরীক্ষায় আসতে দেখা যায়। বঙ্গভঙ্গের কারণসমূহ ব্যাখ্যা করা বিষয়ক যে প্রশ্নটি রয়েছে সেটি প্রায় প্রতিবছর বিভিন্ন পরীক্ষাতে আসতে দেখা যায়। আজকের এই লেখাটি পড়ার পরে আপনি খুব সহজে বঙ্গভঙ্গের কারণসমূহ ব্যাখ্যা করতে পারবেন এবং কি কি কারণে মূলত বঙ্গভঙ্গ ঘটানো হয়েছিল সেটা ব্যাখ্যা করতে পারবেন।
বঙ্গবঙ্গের কারণসমূহ
বাংলার ইতিহাসে বঙ্গভঙ্গ একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। বৃহৎ বঙ্গ অংশে বিভক্ত করার জন্য একটি প্রস্তাব বিষয়ক খবর প্রথম ১৯০৫ সালের ৬ জুলাই কলকাতা প্রেস এ প্রকাশ করা হয়। ১৯০৫ সালের ১৬ই অক্টোবর ভারতের ভাইসরয় লর্ড কার্জনের আদেশে ১ম বঙ্গভঙ্গ সম্পন্ন হয়। বিহার ও উড়িষ্যা ইংরেজদের এই অঞ্চল দখল করার পর থেকেই মূলত বাংলার অংশ হিসেবে ছিল। এই কারনে প্রশাসনিক অঞ্চল হিসেবে বাংলা অনেক বড় আকৃতি ধারন করেছিল আর এই এত বড় অংশকে আলাদা আলাদা বিভক্ত করা ও ব্রিটিশবিরোধী বিভিন্ন কর্মকাণ্ড বন্ধ করার উদ্দেশ্যেই মূলত বঙ্গভঙ্গের মূল প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। নিম্নে বঙ্গভঙ্গের আরো কিছু কারণ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীকরণ
সে সময় বাংলায় হিন্দু এবং মুসলিম এই দুই ধর্মাবলম্বী মানুষদেরকে বেশি দেখা যেত। বাংলার অনেক অংশে হিন্দু মানুষদেরকে মুসলমান মানুষদের থেকে বেশি পরিমাণে বসবাস করতে দেখা যেত। এ ক্ষেত্রে কিছুটা বৈষম্য সৃষ্টি হতো এবং এই বৈষম্যের পরিমাণ অনেক স্থানে বেশ ভালো পরিমাণে ছিল। এই বৈষম্য দূরীকরণের ক্ষেত্রে মূলত বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। অর্থাৎ বঙ্গভঙ্গের কারণগুলোর মধ্যে বৈষম্য দূরীকরণের এই কারণটাও দেখানো হয়। এতে করে নিশ্চিত করা হয় যাতে উভয় ধর্মের মানুষরা যাতে সমান অধিকার এবং অর্থনীতিতে সমান অবদান রাখতে পারে, সুযোগ-সুবিধা যাতে সমানভাবে পেতে পারেন।
প্রশাসনিক কারণ
তৎকালীন সময়ে বাংলা অনেক বড় অংশ জুড়ে ছিল। এই কারণে ইংরেজদের পক্ষে শাসন এবং শোষণ করা খুব একটা কঠিন ব্যাপার হয়। এর মূল কারণ হচ্ছে যেহেতু বাংলার আকার তখন প্রায় ১ লাখ ৮৯ হাজার বর্গমাইল ছিল। সেই ক্ষেত্রে বিভিন্ন সময় তাদের শোষণ করার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি হচ্ছিল এবং ঠিকভাবে তারা তাদের প্রশাসনিক কাজগুলোকে সম্পাদন করতে পারছিল না। এ জন্যই মূলত আলাদা অংশে বিভক্ত করার সিদ্ধান্ত পরবর্তীতে তারা গ্রহণ করে এবং এতে করে প্রশাসনিক কার্যক্রমকে আলাদা আলাদা অংশে বিভক্ত করতে পারতেন এবং সেই অনুযায়ী শাসন-শোষণের কাজ আরো সহজে তারা সম্পাদন করতে পারতেন।
কংগ্রেসকে দুর্বল করা
ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার পর থেকে ইংরেজদের অনেক সমস্যা হতে শুরু করে। এতে করে তারা অস্তিত্ব সংকট অনুভব করে। তাদের সবসময় এটা চিন্তা হতে থাকে যে এতে করে তাদের অস্তিত্বের বিনাশ হতে পারে। যেহেতু কোনো ষড়যন্ত্র তাদের বিরুদ্ধে গঠিত হতে পারে এমনটা তাদের চিন্তা ছিল সে ক্ষেত্রে তারা বঙ্গভঙ্গের প্রস্তাব উত্থাপন করে। এতে করে তাদের সুবিধা এটাই যে বাংলা থেকে তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের সম্ভাবনা অনেক কমে আসবে।
পাটের ন্যায্য মূল্য প্রাপ্য
পূর্ব বাংলায় পাট বেশি উৎপাদিত হতো কিন্তু পাটকল ছিল কলকাতায় এবং হুগলিতে। এই কারণে পূর্ব বাংলার মানুষ পাট উৎপাদন করতে পারলেও সেগুলোকে ঠিকভাবে অর্থ উপার্জন করার মাধ্যম হিসেবে গড়ে তুলতে পারছিলেন না। এই কারণে পূর্ব বাংলার মানুষ বঙ্গভঙ্গের পক্ষে ছিলেন এবং তারা সবসময় চাইতেন যাতে করে তারা পাটের সর্বোত্তম ব্যবহার করতে পারেন এবং পাটকলের সাহায্য নিতে পারেন।
আরো পড়ুন: বাংলাদেশের ভৌগােলিক অবস্থান বর্ণনা কর
সরকারি চাকরিতে সমস্য সমাধান
সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে সে সময় হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষদের বেশি দেখা যেত। এ কারণেই মূলত বৈষম্যের একটি চিত্র ফুটে উঠত। মুসলিমরা যাতে সমানভাবে চাকরির সুবিধা পেতে পারেন সেজন্য বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।