এসএসসি শিক্ষার্থীদের জন্য সম্পূর্ণ গণিত বইয়ের উপর পাঠগৃহ নেটওয়ার্কের নিয়ে আসা কোর্স/সিরিজ "গণিতের ভয়কে জয়"- এর প্রথম পর্বে আপনাদের স্বাগত। এই সিরিজে আমরা সম্পূর্ণ গণিত বই নিয়ে রিসার্চ করে শিক্ষার্থীদের জন্য উপকারী হয় এমন ভাবে অসংখ্য পোস্ট করে যাব। আশা করি শিক্ষার্থীরা আমাদের সাথেই থাকবে।
আজকের পর্বে আমরা জানব বাস্তব সংখ্যা কাকে বলে? বাস্তব সংখ্যার শ্রেণিবিভাগ ও বৈশিষ্ট্য কী কী? এই পোস্টের যে বিষয়গুলো শিক্ষার্থীদের প্রয়োজন হবে তা হচ্ছে:
- সৃজনশীল প্রশ্নের 'ক' নং প্রশ্নের উত্তর করতে পারবে
- বহুনির্বাচনী প্রশ্নের উত্তর করতে পারবে
তাহলে শুরু করা যাক।
এসএসসি গণিত
প্রথম অধ্যায়
বাস্তব সংখ্যা
প্রথমত, যদি প্রশ্ন করা হয় 'সংখ্যা কাকে বলে?' তবে উত্তরটি কী হবে? সংখ্যা মানুষের উদ্ভাবিত প্রথম পরিমাপক কিছু একটা। সংখ্যা হচ্ছে গণনার কাজে ব্যবহৃত চিহ্ন। এই সংখ্যাকে মূলত দুটি ভাগে ভাগ করা সম্ভব। একটি বাস্তব সংখ্যা এবং অন্যটি অবাস্তব সংখ্যা বা জটিল সংখ্যা। এই জটিল সংখ্যা নিয়ে আমরা জানব এইচএসসির গণিত ২য় পর্ব যখন পড়ব তখন। আজকে আমরা বাস্তব সংখ্যার মধ্যেই থাকব।
বাস্তব সংখ্যা কাকে বলে?
বাস্তব সংখ্যার সজ্ঞা কয়েকভাবে দেয়া যায়। পরীক্ষায় আসলে অবশ্যই বইতে যে সজ্ঞা আছে তা দেবে। বইতে থাকা সজ্ঞাটি হলো "সকল মূলদ সংখ্যা এবং অমূলদ সংখ্যাকে বাস্তব সংখ্যা বলে।" এখন এই সজ্ঞা বুঝতে হলে আমাদেরকে মূলদ এবং অমূলদ সংখ্যা সম্পর্কে বুঝতে হবে। আমরা মূলদ সংখ্যা এবং অমূলদ সংখ্যা সম্পর্কে একটু পরেই জানব, একই সাথে আগামী পর্বে আমরা এদেরকে নিয়ে আরেকটু বিস্তারিত জানার সাথে সাথে এদের মধ্যাকার পার্থক্য এবং মূলদ ও অমূলদ সংখ্যা চেনার উপায় সম্পর্কেও জানব। তবে মূলদ ও অমূলদ সংখ্যা চেনার আগেই তো আমাকে বাস্তব সংখ্যা চিনতে হবে। সেক্ষেত্রে সজ্ঞাটা হবে, "ধনাত্মক সংখ্যা, ঋণাত্মক সংখ্যা এবং শূন্যকে একত্রে বাস্তব সংখ্যা বলে।"
আরও সহজ করে বলতে গেলে বলা যায় "প্রাত্যহিক জীবনে ব্যবহৃত সংখ্যাগুলোকেই বাস্তব সংখ্যা বলে।" বাস্তব সংখ্যার সেটকে R দ্বারা প্রকাশ করা হয় বলে এসএসসি লেভেলে পড়ানো হলেও আসলে একে প্রকাশ করা হয় `\mathbb{R}` দ্বারা। উদাহারণস্বরূপ বলা যায়, 1, 2, -7, 3.1416...., 2.2222222222..., `\frac{5}{2}` ইত্যাদি সবই বাস্তব সংখ্যা।
বাস্তব সংখ্যার প্রকারভেদ/শ্রেণিবিন্যাস
বাস্তব সংখ্যাকে ভাগ করতে চাইলে মূলত দুইভাগে ভাগ করা যায়।
- মূলদ সংখ্যা
- অমূলদ সংখ্যা
এখান থেকেই আমরা প্রথম সজ্ঞাটি দিয়েছিলাম বা বইতে দেয়া হয়েছে। এই মূলদ আর অমূলদ আবার কী? এসব জানব, তবে এদেরও প্রকারভেদ আগে জেনে নেয়া যাক।
মূলদ সংখ্যাকে ২ ভাগে ভাগ করা যায়।
- পূর্ণ সংখ্যা
- ভগ্নাংশ
পূর্ণ সংখ্যাকে ৩ ভাগে ভাগ করা যায়।
- ধনাত্মক পূর্ণসংখ্যা বা স্বাভাবিক সংখ্যা
- শূন্য (০)
- ঋণাত্মক সংখ্যা
ধনাত্মক পূর্ণ সংখ্যা আবার ৩ প্রকার।
- মৌলিক সংখ্যা
- এক (১)
- যৌগিক সংখ্যা
অন্যদিকে আবার মূলদ সংখ্যার দ্বিতীয় ভাগ, অর্থাৎ ভগ্নাংশের প্রকার দুটি।
- সাধারণ ভগ্নাংশ
- দশমিক ভগ্নাংশ
সাধারণ ভগ্নাংশকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা যায়।
- প্রকৃত সাধারণ ভগ্নাংশ
- অপ্রকৃত সাধারণ ভগ্নাংশ
অপ্রকৃত সাধারণ ভগ্নাংশের অধীনে আছে এক ধরনের ভগ্নাংশ। আর তা হচ্ছে,
- মিশ্র ভগ্নাংশ
অন্যদিকে দশমিক ভগ্নাংশকে আবার দুইভাগে ভাগ করা যায়।
- সসীম দশমিক ভগ্নাংশ
- অসীম আবৃত্ত ভগ্নাংশ
আর একেবারে শুরুতে বাস্তব সংখ্যাকে যে দুইভাগ ভাগে করেছিলাম তার মধ্য থেকে দ্বিতীয় বিভাগটি অর্থাৎ অমূলদ ভগ্নাংশের একটি ভাগ আছে। আর তা হলো:
- অসীম অনাবৃত্ত দশমিক
এবার আমরা এসবের বিস্তারিত জানার চেষ্টা করব।
মূলদ সংখ্যা কাকে বলে?
যদি কোনো সংখ্যাকে দুটি পূর্ণ সংখ্যার অনুপাত বা ভাগফল রূপে প্রকাশ করা যায় তবে ঐ সংখ্যাকে মূলদ সংখ্যা বলে। অন্যভাবে, `\frac {p}{q}` আকারের কোনো সংখ্যাকে মূলদ সংখ্যা বলা হয়, যখন p এবং q পূর্ণসংখ্যা এবং q `\ne` 0 এবং q `\ne` 1 এবং p,q পরষ্পর সহমৌলিক। (সহমৌলিক সংখ্যা কী তা না জেনে থাকলে থাকুন আমাদের সাথেই।) যেমন `\frac{1}{2},\frac{5}{4}` ইত্যাদি।
মূলদ সংখ্যার সেট, `\mathbb{Q} = {\frac {p}{q}`: p, q `\in \mathbb{Z}` এবং ` q \ne 0, q \ne 1}`
অমূলদ সংখ্যা কাকে বলে?
যদি কোনো সংখ্যাকে দুটি পূর্ণ সংখ্যার অনুপাত বা ভাগফল রূপে প্রকাশ করা না যায় তবে ঐ সংখ্যাকে অমূলদ সংখ্যা বলে। অন্যভাবে বলা যায়, `\frac {p}{q}` আকারে প্রকাশ করা যায় না এমন যেকোনো সংখ্যাকে অমূলদ সংখ্যা বলা হয়, যখন p এবং q পূর্ণসংখ্যা এবং q `\ne` 0 এবং q `\ne` 1। যেমন 1.414213..., 1.118... ইত্যাদি।
বাকি সংখ্যাগুলোর সজ্ঞা আমরা আলাদাভাবে জানব।
আরও পড়ুন:
- মূলদ এবং অমূলদ সংখ্যার বিস্তারিত এবং চেনার উপায়।
- মৌলিক সংখ্যা কাকে বলে, কী কী ও নির্ণয় করার পদ্ধতি
- যৌগিক সংখ্যা কাকে বলে, কী কী? এবং নির্ণয় করার পদ্ধতি
- সহমৌলিক সংখ্যা
- বাস্তব সংখ্যার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তরের PDF।
বাস্তব সংখ্যার বৈশিষ্ট্য
- `a\in R, b\in R` হলে `a+b\in R` এবং `ab\in R` হবে।
- `a\in R, b\in R` হলে `a+b = b+a` এবং `ab =ba` হবে।
- `a\in R, b\in R, c\in R` হলে `(a+b)+c = a+(b+c)` এবং `(ab)c = a(bd)` হবে।
- `a\in R, b\in R, c\in R` হলে `a(b+c) = ab+bc` হবে।
- `a\in R, b\in R` হলে হয় `a<b` হবে, নয়তো `b>a` হবে আর নয়তো `a=b` হবে।
- `a\in R, b\in R, c\in R` এবং `a<b` হলে `a+c < b+c` হবে।
- `a\in R, b\in R, c\in R` এবং `a<b` হলে `ac < bc` হবে যখন `c > 0` এবং `ac > bc` যখন `c < 0`।
- `a\in R` হলে `a +(-a) = 0` এবং `a\in R` এবং `a \ne 0` হলে `a\times\frac{1}{a}=1` হবে।
- `a+0 = a` এবং `a.1 = a`
এই বৈশিষ্ট্যগুলো থেকে অনেকগুলো বৈশিষ্ট্যের প্রমাণ এইচএসসির গণিত ২য় পত্র বইয়ের বাস্তব সংখ্যা অধ্যায়ে পড়ব। এই বিষয় এ পর্যন্তই।