Palestine Flag We support Palestine — Standing for justice, freedom, and human rights.

পেঙ্গুইন কথন

আসসালামু আলাইকুম। আশা করি সবাই ভালো আছেন। আবারো আপনাদের সামনে হাজির হলাম মজার কিছু তথ্য নিয়ে। কিন্তু আজকের তথ্যগুলো কার সম্পর্কে? আজ আমাদের আলোচনা জুড়ে থাকবে খুবই মিষ্টি একটি পাখি। আর সেই পাখিটি হলো পেঙ্গুইন। এরমধ্যে অনেকেই হয়তো ভাবতে শুরু করে দিয়েছেন যে, পেঙ্গুইন আবার পাখি কীভাবে হয়? পাখিরা তো উড়তে পারে। কিন্তুু পেঙ্গুইন একদিকে তো উড়তে পারেই না আবার অন্যদিকে এদেরকে পানিতে মাছের মতো সাঁতরে বেড়াতে দেখা যায়। এরা দারুণভাবে হেলেদুলে বরফের ওপর হেঁটেও বেড়ায়। তাহলে এরা পাখি হলো কীভাবে? চিন্তার বিষয়, তাই না? চলুন তাহলে এই চিন্তাটার অবসান ঘটিয়ে আসি।

পেঙ্গুইন


পেঙ্গুইন কেন পাখি?

আসলে উড়তে না পারলেও পেঙ্গুইনকে পাখিদের শ্রেণিতেই অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কারণ পাখি হিসেবে শ্রেণিবদ্ধকরনের জন্য যেসকল  দৈহিক বৈশিষ্ট্যের প্রয়োজন তার প্রায় সবগুলোই পেঙ্গুইন এর মধ্যে পাওয়া যায়। যেমন: 

    ১. পাখিদের মূল সৌন্দর্যের পেছনে রয়েছে তাদের পালক। আর এই পালকই পাখিদের অন্যান্য সব প্রণী থেকে আলাদা করেছে। কারণ পালক কেবলমাত্র পাখিদেরই থাকে। আর পাখিদের অনন্য এই শারীরিক বৈশিষ্ট্যের ব্যতিক্রম ঘটেনি পেঙ্গুইনের মাঝেও। যদিও পেঙ্গুইনের পালক বিশেষ বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন৷ এদের পালকগুলো জলাভেদ্য। যার ফলে অনেকক্ষণ পানিতে থাকা সত্বেও পানি পেঙ্গুইন এর ত্বক স্পর্শ করতে পারেনা। প্রচন্ড ঠান্ডা পানিতেও পেঙ্গুইনকে ভালোই উষ্ণতা দিয়ে থাকে ঘন সন্নিবিষ্ট পালকগুলো। এই পালকগুলো সাধারণত খাটো ও চওড়া হয়ে থাকে। 

    ২. পাখিদের কোনো দাঁত থাকেনা। এদের থাকে চঞ্চু। পেঙ্গুইন এর ক্ষেত্রেও ধারালো চঞ্চুর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়, যেটার ব্যবহার করে তারা সমুদ্রের পানিতে মাছ শিকার করে থাকে।

    ৩. পেঙ্গুইন সহ প্রায় সবধরনের পাখিই ডিম পেড়ে থাকে। কিছু কিছু পাখি একসাথে অনেক ডিম পাড়তে পারলেও পেঙ্গুইন এর ক্ষেত্রে তেমনটা ঘটে না। এরা সাধারণত প্রতি মৌসুমে ১-৩ টা ডিম পেড়ে থাকে।

    ৪. সব ধরনের পাখিদের দৈহিক গঠনে অস্থির উপস্থিতি রয়েছে। পেঙ্গুইন এর দেহেও রয়েছে পাখিদের ন্যায় অস্থিময় গঠন। কিন্তুু এখানে অন্যান্য পাখিদের সাথে পেঙ্গুইন এর একটু পার্থক্য রয়েছে। পাখিদের অস্থিগুলো সাধারণত হালকা হয়ে থাকে। যার ফলে এরা সহজেই উড়তে পারে। অন্যদিকে পেঙ্গুইন এর অস্থিগুলো পাখিদের তুলনায় ভারী। আর পাখি হয়েও পেঙ্গুইনের উড়তে না পারার পেছনে এটা অন্যতম একটা কারণ। 

    ৫. পাখি হলো উষ্ণ রক্তের প্রাণী। আর এই বৈশিষ্ট্যটি রয়েছে পেঙ্গুইনেরও।

    ৬. মোটামুটি সব পাখিদেরই ডানা আছে। এটাও পাখিদের অন্যতম একটা দৈহিক বৈশিষ্ট্য।  আর এই ডানার সাহায্যেই পাখিরা উড়ে থাকে। আর পেঙ্গুইন যেহেতু পাখি সেহেতু পেঙ্গুইনেরও ডানা আছে অবশ্যই। কিন্তুু পেঙ্গুইন এর ডানায় কাঠামোগত কিছু পার্থক্য রয়েছে। প্রচলিত অর্থে এদের ডানা উড়ার পরিবর্তে সাঁতারের উপযোগী হয়ে বিকশিত হয়েছে। এজন্যে অনেকে এগুলোকে ডানা না বলে ফ্লিপার বলতেই পছন্দ করেন।

মূলত এইসকল বৈশিষ্ট্যেগুলোর উপস্থিতির দরুন পেঙ্গুইনকে পাখিদের শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আমরা এখন তাহলে বুঝতে পারলাম যে আসলে কেনো পেঙ্গুইনকে পাখি বলা হয়


আর কোন কোন পাখি উড়তে পারে না?

যদিও আমাদের আজকের আলোচনার মূল বিষয় হলো পেঙ্গুইন, এরপরেও আমরা এখন আরো এমন কিছু পাখির নাম জানবো যারা পাখি হওয়া সত্ত্বেও পেঙ্গুইনের মতো উড়তে অক্ষম। যেমন: Ostrich, Emu, Rhea, Kiwi, Cassowary ইত্যাদি। Ostrich মানে উট পাখি। ছোটবেলায় সাধারণ জ্ঞানে আমাদের যখন প্রশ্ন করা হতো,  কোন পাখি উড়তে পারেনা- তখন আমরা শুধু এই একটাই উত্তর দিতাম যে উট পাখি উড়তে পারেনা। আজ তাহলে আমরা এটা জেনে গেলাম যে উট পাখি ছাড়াও আরো এমন কিছু পাখি আছে যারা উড়তে পারেনা। 


কোন কোন পাখি সাঁতার কাটতে পারে?

আচ্ছা এখন এমন কিছু পাখির নাম বলুনতো যারা কীনা পেঙ্গুইন এর মতো পানিতে সাঁতার কাটতে পারে৷ চলুন এমন কিছু পাখির নাম জেনে নিই তাহলে। যেমন: Duck, Swan, Puffin, Pelican, Loon ইত্যাদি। এই পাখিগুলোও পানিতে সাঁতার কাটতে সক্ষম। 


এবার শুধুই পেঙ্গুইন

আমাদের বেশিরভাগই কিন্তুু পেঙ্গুইন হয়তো সরাসরি দেখিনি কখনো। কারণ আমাদের দেশে পেঙ্গুইন দেখা যায় না। আমাদের দেশ রয়েছে পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধে। আর পেঙ্গুইন শুধুমাত্র পৃথিবীর দক্ষিণ গেলার্ধের অঞ্চলগুলোতেই পাওয়া যায়। বেশিরভাগ পেঙ্গুইনই বরফপূর্ণ ঠান্ডা জলজ অঞ্চলে বাস করে। তবে Galapagos পেঙ্গুইনের মত কিছু প্রজাতি রয়েছে যারা বসবাসের জন্য গ্রীষ্মমন্ডলীয় জলবায়ু পছন্দ করে। সর্বাধিক পেঙ্গুইন দেখা যায় অ্যান্টার্কটিক উপকূল এবং উপ-অ্যান্টার্কটিক দ্বীপপুঞ্জে।


পেঙ্গুইন সাদা আর কালো রঙের হয়ে থাকে। এরকারনে  সমুদ্রের পানিতে এরা খুব ভালোভাবেই নিজেদের আড়াল করতে পারে। পেঙ্গুইন এর কালো পিঠ সমুদ্রের পানির সাথে মিশে যায় যখন উপর থেকে দেখা হয় আর সমুদ্রের নিচের দিক থেকে দেখলে পেটের সাদা অংশটা উজ্জ্বল পৃষ্ঠের সাথে মিলে যায়। যার ফলে এরা  একদিকে নিজেদের কে শিকারী প্রাণী থেকে আড়াল করতে পারে আবার অন্যদিকে সামুদ্রিক মাছ শিকারের ক্ষেত্রে ভালোই সুবিধা পেয়ে থাকে।


পেঙ্গুইন হলো মাংসাশী প্রাণী। এরা মূলত মাছ, কাঁকড়া, ক্রিল, স্কুইড ইত্যাদি সামুদ্রিক খাবার খেয়েই জীবন ধারন করে থাকে। এত বেশি সামুদ্রিক খাবার খাওয়া মানে অধিক পরিমাণে লবণ খাওয়া। আর মজার ব্যাপার হলো এদের দেহ থেকে অতিরিক্ত লবণ বের করে দেয়ার জন্য একটি বিশেষ গ্রন্থি আছে। পেঙ্গুইনের ঠিক চোখের ওপরে রয়েছে Supraorbital Gland। এই গ্রন্থিটি রক্ত থেকে অতিরিক্ত লবণ ছেঁকে নেয় এবং শরীর থেকে বের করে দেয়।

বরফের ওপরে পেঙ্গুইনদের আমরা খুবই আস্তে ধীরে হেঁটে চলতে দেখলেও পানিতে কিন্তুু এরা খুব দ্রতই সাঁতার কাটতে পারে। এরা সাধারণত ঘন্টায় ৪-৭ মাইল বেগে সাঁতার কেটে বেড়ায়। পানির নিচে সবচেয়ে দ্রুত গতিতে চলাচল করতে পারে Gentoo পেঙ্গুইন। এদের গতিবেগ ঘন্টায় প্রায় ২২ মাইল হয়ে থাকে।


পেঙ্গুইন পাখিটা যেমন অনেক সুন্দর ঠিক তেমনই এর সম্পর্কে রয়েছে অনেক তথ্যও। এর মধ্য থেকে মজার কিছু তথ্য নিয়ে আপনাদের সাথে ইতোমধ্যেই অনেক গল্প করে ফেলেছি৷ আশা করি তথ্যগুলো আপনাদের ভালো লেগেছে। আজ তাহলে এখানেই শেষ করলাম। সবাই সুস্থ আর নিরপদে থাকার চেষ্টা করুন। আল্লাহ হফেজ।

Previous Post Next Post

এই লেখাটি আপনার সোশ্যাল মিডিয়া ওয়ালে শেয়ার করুন 😇 হয়তো এমনও হতে পারে আপনার শেয়ার করা এই লেখাটির মাধ্যমে অন্য কেউ উপকৃত হচ্ছে! এবং কারো উপকার করার থেকে ভাল আর কি হতে পারে?🥺