বাংলা টাইপিং এর জন্য বাংলাদেশে বিজয় এবং অভ্র কীবোর্ড দুটি আমাদের হাতে সহজলভ্য। চাইলেই যেকোনোটি নিয়ে লিখতে পারি। প্রভাত, জাতীয়, ইউনিবিজয় ইত্যাদি লেআউটেও লিখতে পারি। এন্ড্রয়েড ফোনে বর্তমানে বহুল ব্যবহৃত Ridmik Keyboard এ অভ্র, প্রভাত এবং জাতীয় এই তিনটি লেআউট পাওয়া যায়। কম্পিউটারে লেখার সময় আমরা বিজয়তে লিখব নাকি অভ্রতে, তা নিয়ে প্রায়শই দ্বিধার ভেতর পরে যাই। আজকে চেষ্টা করব বিজয় এবং অভ্র সফটওয়্যার দুটি নিয়ে কথা বলতে।
অভ্র এবং বিজয় নিয়ে কথা বলতে গেলে প্রথমেই যেটা বলতে হয়, সেটা হচ্ছে ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য পুরো বাংলাদেশের প্রায় সবাই-ই অভ্র ব্যবহার করেন। প্রফেশনাল কাজের জন্য অনেকে বিজয়কে বাধ্যতামূলক করেন। অভ্র অধিক ব্যবহারের পেছনে মূল কারণ একটি। আর তা হলো সহজ-সুবিধা জনক লেআউট। বলতে প্রায় পুরোটাই ইংরেজি লিখলেই বাংলা হচ্ছে, এমন একটা ব্যাপার। যতটুকু হয় না, সেটুকু নিজের মতো করে পরিবর্তন করে নেয়া যায় Keyboard Layout Editor: Build Custom Layout ব্যবহার করে। কিভাবে অভ্রর লেআউট পরিবর্তন করতে হয় তা জেনে না থাকলে পড়ুন: অভ্র কীবোর্ডে কাস্টম লেআউট তৈরি। বিজয়ের তুলনায় অভ্রের অধিক ব্যবহারের পেছনে আরেকটি কারণ হচ্ছে বিজয় পেইড এবং অভ্র ফ্রি।
তবে বিজয় কেন প্রফেশনাল জায়গাগুলোতে বেশি ব্যবহৃত হয়?
প্রথম কথা হচ্ছে, মাইক্রোসফট ওয়ার্ড, পাওয়ারপয়েন্ট, এক্সেল, ফটোশপ ইত্যাদি সফটওয়ারে বাংলা লেখার সময়/বাংলা লিখে ডিজাইন করার সময় যে বিভিন্ন স্টাইলিশ ফন্ট ব্যবহার করার প্রয়োজন পরে। এই স্টাইলিশ ফন্টগুলো এসব সফটওয়্যারে যেগুলো থাকে তা বিজয়ের জন্য, অভ্রের জন্য না। তাই অভ্র দিয়ে লিখে সুন্দর ডিজাইন করা যায় না প্রথম অবস্থায়। অভ্রের জন্য স্বাভাবিক অবস্থায় Nirmala Ul ফন্টটি সেলেক্টেড থাকে, এবং এসব সফটওয়্যারে এই ফন্ট দিয়েই লিখতে হয়।
লিপিঘর ডট কমে যে সুন্দর সুন্দর ফন্ট পাওয়া যায়, সেগুলো বিজয়ের জন্য। তাই ডিজাইনিং এর কাজে বিজয় এগিয়ে থাকে। কিন্তু অভ্র দিয়েও এই ফন্ট গুলো ব্যবহার করা যায়। তার জন্য একটু কায়দা করতে হয়, এবং এই কায়দা করাটুকু সম্পূর্ণ লিগ্যাল পদ্ধতিতেই।
অভ্র কীবোর্ডে কিভাবে বিজয়ের ফন্ট প্রয়োগ করা যায়?
অভ্র থেকে বিজয়ে কনভার্ট
ক) অনলাইন টুলের সাহায্যে
- https://bsbk.portal.gov.bd/apps/bangla-converter/index.html
- https://www.banglaconverter.org/tools.php?f=Unicode-To-Bijoy
- https://www.ittefaq.com.bd/converter/
খ) অভ্র সফটওয়্যারের সাহায্যে
এটিও আপনি দুইভাবে করতে সক্ষম। প্রথমত, আপনি অভ্র স্কিনের টুলে ক্লিক করে Unicode to Bijoy text converter এ ক্লিক করলে প্রথম ছবির মতো একটি টুল পাবেন, যেটি ব্যবহার করে আপনি অনলাইনে যা করেছেন সেই কাজটিই করতে পারবেন। আর দ্বিতীয় পদ্ধতিটি হচ্ছে Output as ANSI (Are you sure?) এ ক্লিক করে Use ANSII Anyway ক্লিক করা। এতে ক্লিক করলে আপনার যেকোনো আউটপুটে বিজয়ের ফন্টগুলোই শুধু সাপোর্ট করবে। অর্থাৎ আলাদা করে কনভার্টের প্রয়োজন নেই, সরাসরি লিখতে পারবেন।এই কাজটুকু করে নিলেই অভ্র দিয়েও বিজয়ের কাজ করা যায়। যদিও অনেক সময় যুক্তবর্ণ সম্পর্কিত কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে হতে পারে।
ডিজাইনিং এর জন্য অন্যতম সেরা জায়গা Canva তে অবশ্য অভ্রের জন্যও ভালো স্টাইলিশ ফন্ট পাওয়া যায়।
এর বাইরে বিজয় ব্যবহারের আর চারটি কারণ থাকতে পারে।
১. অভ্র শেখা খুব সহজ, বিজয় শিখতে হয়। তাই অনেক কোম্পানি হয়তো চায় শিখে আসার যোগ্যতা থাকুক।
২. একই কোম্পানিতে কেউ অভ্র, কেউ বিজয় ব্যবহার করলে ফাইল শেয়ারে একেকজনের একেক ধরনের সমস্যা হতে পারে। তাই সবাই মিলে একটি ব্যবহার করে থাকতে পারে।
৩. বাংলাদেশে যে কীবোর্ডগুলো পাওয়া যায়, তাতে যে বাংলা অক্ষরগুলো লেখা থাকে, তা বিজয়ের লেআউটের মতো করে লেখা থাকে। যদিও অভ্রতে কাস্টম মেডে দিয়ে বিজয়ের লেআউট তৈরি করে নেয়া সম্ভব।
৪. ভালো লাগে তাই, আগে শিখেছি তাই আর নতুন করে অভ্রতে যাব না- এরকম বিভিন্ন ব্যক্তিগত কারণও থাকতে পারে।
এখন আপনি কোনটি ব্যবহার করবেন তা সম্পূর্ণ আপনার উপর নির্ভর করছে। আপনি যেটিকে বেশি ভালো মনে করেন, যেটিতে বেশি কমফোর্ট ফিল করেন, আপনি নিঃসন্দেহে সেই কীবোর্ডটিই ব্যবহার করতে পারেন।